শকুন্তলা

ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে
বিশ্বামিত্র ঔরসে মেনকর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন উল্লেখ্য, ইন্দ্র বিশ্বামিত্র কঠোর তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য মেনকা নামক অপ্সরাকে পাঠান প্রথমে তেজস্বী বিশ্বামিত্র কাছে মেনকা যেতে রাজি হন নাই। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বামিত্র কাছে যেতেই হয়। তবে যাবার আগে মেনকা ইন্দ্রের কাছে এরূপ বর প্রার্থনা করেন, যেন বিশ্বামিত্রের ক্রোধাগ্নি তাকে দগ্ধ করিতে না পারে। এরপর মেনকার অনুরোধে তাকে সাহায্য করার জন্য, বায়ু তার সাথে যায়।

 

মেনকা তপস্যারত বিশ্বামিত্র সামনে গিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক শুরু করে। একসময় বায়ু  মেনকার বসন অপহরণ করলে বিশ্বামিত্র তা দেখে মুগ্ধ হন এবং মেনক সাথে মিলিত হন কিছুদিন পর মেনকা গর্ভবতী হলে, মেনক হিমালয়ের পাদদেশে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে এবং সদ্যজাতা কন্যাকে মালিনী নদীর তীরে নিক্ষেপ করিয়া দেবরাজসভায় প্রস্থান করে। এই সময় কিছু শকুন এই কন্যাকে রক্ষা করেন কণ্ব মুনি শকুন পাখি পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই কন্যাকে পেয়ে আশ্রমে নিয়ে আসেন শকুন্ত পাখি দ্বারা রক্ষিত হয়েছিল বলে কন্যার নাম রাখেন শকুন্তলা

[মহাভারত। আদিপর্ব। দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়। বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত]
 

একদিন দুষ্মন্ত নামক এক রাজা মৃগয়া করতে এসে, একটি হরিণ শাবকের সন্ধান করতে করতে কণ্ব মুনির আশ্রমে আসেন এই সময় মুনি আশ্রমে না থাকায় শকুন্তলা যথোচিত রাজার সৎকার করেন রাজা শকুন্তলার রূপে মুগ্ধ হয়ে শকুন্তলার কাছে বিবাহের প্রস্তাব রাখেন শকুন্তলা মুনির ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললে, দুষ্মন্ত অস্থির হয়ে তখনি বিবাহ করার জন্য শকুন্তলার উপর চাপ সৃষ্টি করেন তখন শকুন্তলা একটি শর্তে তত্ক্ষণাৎ বিবাহে রাজি হলেন শর্তটি হলো শকুন্তলার গর্ভজাত পুত্রকে যুবরাজ হিসাবে রাজপদে অভিষিক্ত করতে হবে দুষ্মন্ত তাতেই রাজি হলেন এরপর উভয়ের বিবাহ হয় কিছুদিন রাজা উক্ত আশ্রমে কাটিয়ে শকুন্তলাকে পরে এসে রাজধানীতে নিয়ে যাবেন বলে ফিরে গেলেন কিছুদিন পর শকুন্তলার একটি পুত্র সন্তান জন্মে শৈশবেই এই শক্তিশালী পুত্র সকল প্রাণীকেই দমন করতে পারতো বলে এর নাম রাখা হয় সর্বদমন
 

এই পুত্র যৌবরাজে অভিষিক্ত হওয়ার সময় উপস্থিত হলে কণ্বমুনি শকুন্তলা ও সর্বদমনকে নিয়ে রাজধানীতে গেলে রাজা প্রথমে সমস্ত ঘটনাকে অস্বীকার করে শকুন্তলাকে বিদায় দেন পরে দৈববাণী দ্বারা ঘটনাটি রাজার স্মরণে এলে ইনি স্ত্রী-পুত্রকে গ্রহণ করেন পরে দৈববাণী অনুসারে এই পুত্রের নাম রাখা হয় ভরত
 

কালিদাসের শ্অভিজ্ঞান শকুন্তলা' নামক গল্পটি একটু ভিন্নতর গল্পে রয়েছে- বিবাহের পর দুষ্মন্ত নিজের নাম লেখা একটি আংটি শকুন্তলাকে উপহার দেন দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে গেলে, শকুন্তলা এই আংটি নিয়ে একাকী ভাবছিলেন এমন সময় দুর্বাসা মুনি সেখানে আসেন শকুন্তলা দুর্বাসাকে দেখা মাত্র যথোচিত সম্মান না করায়- ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে- যার জন্য সে তন্ময় হয়ে আছে, স্মরণ করিয়ে দিলেও সে শকুন্তলাকে দেখলে চিনতে পারবে না গভীর তন্ময়তার মধ্যে থাকার জন্য শকুন্তলা তাও শুনতে পেলেন না তখন শকুন্তলার দুই সখী প্রিয়ংবদা ও অনুসূয়া প্রকৃত বিষয় অবগত করিয়ে দুর্বাসাকে এই অভিশাপ ফিরিয়ে নেবার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন দুর্বাসা বলেন যে- কোন অভিজ্ঞান দেখালেই রাজা আবার শকুন্তলাকে চিনতে পারবেন
 

এর কিছুদিন পর শকুন্তলা স্নান করতে গিয়ে আঙুল থেকে আঙটি খুলে পড়ে গেলে তা একটি মাছ গিলে ফেলে ফলে শকুন্তলা যখন রাজার কাছে যান, তখন রাজা দুর্বাসার অভিশাপে শকুন্তলাকে চিনতে অক্ষম হন পরে আংটি সমেত মাছটি এক জেলের জালে ধরা পড়লে এবং তা ঘটনাক্রমে রাজার কাছে পৌঁছালে রাজা অতীতের কথা স্মরণ করতে সক্ষম হন শেষ পর্যন্ত রাজার সাথে পুনরায় শকুন্তলার মিলন ঘটে