মেনকা
১. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
স্বর্গের অপ্সরা।
বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করার সময়,
ইন্দ্র তাঁকে বলেন যে- 'অপ্সরাদিগের মধ্যে তুমিই সর্ব্বপ্রধান, অতএব তুমি আমার
কিঞ্চিৎ উপকার কর। [মহাভারত।
আদিপর্ব।
একসপ্ততিতম অধ্যায়। দুষ্মন্তের শকুন্তলা-সাক্ষাৎকার ।]
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে– বিশ্বামিত্রের ঔরসে মেনকার গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ইন্দ্র বিশ্বামিত্রের কঠোর তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য মেনকা নামক অপ্সরাকে পাঠান। প্রথমে তেজস্বী বিশ্বামিত্রের কাছে মেনকা যেতে রাজি হন নাই। কিন্তু ইন্দ্রের আদেশে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বামিত্রের কাছে যেতেই হয়। তবে যাবার আগে মেনকা ইন্দ্রের কাছে এরূপ বর প্রার্থনা করেন, যেন বিশ্বামিত্রের ক্রোধাগ্নি তাকে দগ্ধ করিতে না পারে। এরপর মেনকার অনুরোধে তাকে সাহায্য করার জন্য, বায়ু তার সাথে যায়।
মেনকা তপস্যারত বিশ্বামিত্রের সামনে গিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক শুরু করে। একসময় বায়ু মেনকার বসন অপহরণ করলে বিশ্বামিত্র তা দেখে মুগ্ধ হন এবং মেনকার সাথে মিলিত হন। কিছুদিন পর মেনকা গর্ভবতী হলে, মেনকা হিমালয়ের পাদদেশে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন এবং সদ্যজাতা কন্যাকে মালিনী নদীর তীরে নিক্ষেপ করিয়া দেবরাজসভায় প্রস্থান করেন। এই সময় কিছু শকুন এই কন্যাকে রক্ষা করে। কণ্ব মুনি শকুন পাখি পরিবেষ্টিত অবস্থায় এই কন্যাকে পেয়ে আশ্রমে নিয়ে আসেন। শকুন্ত পাখি দ্বারা রক্ষিত হয়েছিল বলে কন্যার নাম রাখেন শকুন্তলা।
[মহাভারত। আদিপর্ব। দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়। বিশ্বামিত্রের তপোভঙ্গ। শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত]
২. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে− হিমালয়ের স্ত্রী মেনার অপর নাম। ইনি সতীর সখী ছিলেন। দক্ষযজ্ঞে স্বামীর নিন্দা শুনে সতী প্রাণত্যাগ করলে, সতীকে কন্যারূপে পাওয়ার জন্য মেনকা কঠোর তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবতী উপস্থিত হয়ে তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললে, তিনি একশত পুত্র ও একটি কন্যা প্রার্থনা করেন। ভগবতী সেই বর প্রদান করেন এবং নিজে মেনকার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তী কালে এঁর সাথে হিমালয়ের বিবাহ হয়। এঁর গর্ভে সতী পার্বতী নামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অপর সন্তানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পুত্র মৈনাক ও কন্যা গঙ্গা।