দময়ন্তী
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পৌরাণিক সত্তা
|
কাল্পনিকসত্তা
|
কল্পনা
|
সৃজনশীলতা
|
দক্ষতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
১.
ইক্ষাকুবংশীয় রাজা
কল্মাষপাদের স্ত্রী।
এঁর পুত্রের নাম অশ্মক।
২
নল-দময়ন্তী উপাখ্যান
নল ছিলেন নিষধরাজ বীরসেনের গুণবান ও সুদর্শন পুত্র
এর কিছুদিন পর
, বিদর্ভরাজ দময়ন্তীর বিবাহের জন্য এক বিরাট স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেন। বিভিন্ন দেশের রাজপুরুষ ও রাজপুত্রগণ, এমনকি ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতারাও দময়ন্তীর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে স্বয়ংবর সভায় উপস্থিত হন। নলও এই সভায় যোগদানের জন্য রওনা দেন। পথে নলের সাথে ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ ও যমের সাক্ষাৎ হলে, দেবতারা নলের সৌন্দর্য দেখে তাঁকে তাঁদের দূত হতে অনুরোধ করেন। নল নিজেই স্বয়ংবর প্রার্থী বলে- প্রথমে এই কাজ করতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। কিন্তু পরে বাধ্য হয়ে তিনি দেবতাদের বরে অদৃশ্য হয়ে, দময়ন্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। কিন্তু দময়ন্তী দেবতাদের প্রত্যাখ্যান করে নলকেই স্বামী হিসাবে পাবার কথা জানান।দেবতারা বিষয়টি জানতে পেরে
, নলের প্রকৃত রূপ ধারণ করে স্বয়ংবর-সভায় আসন গ্রহণ করেন। দময়ন্তী স্বয়ংবর-সভায় উপস্থিত হয়ে দেখেন যে, পাঁচজন প্রার্থীর আকৃতি এক প্রকার। কিন্তু দময়ন্তীর পূর্বেই জানা ছিল যে, দেবতারা স্তব্ধনেত্র হয় এবং এদের শরীরে ঘাম দেখা যায় না। সার্বিক দিক বিবেচনা করে দময়ন্তী শেষ পর্যন্ত নলের কণ্ঠেই মালা দেন। এরপর এই চার দেবতা নলকে চারটি বর প্রদান করেন। বর চারটি ছিল১
। ইন্দ্রের বর : যজ্ঞকালে নল ইন্দ্রকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।স্বয়ংবর সভা থেকে দেবতাদের প্রত্যাবর্তনের পথে
, দময়ন্তীর পানিপ্রার্থী কলির সাথে দেখা হয়। দেবতাদের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে, কলি নলের প্রতি ক্রুদ্ধ হন। ইনি স্থির করেন যে, নলের দেহে প্রবেশ করে তাঁকে রাজ্যভ্রষ্ট করবেন। বিবাহের পর নল দময়ন্তীকে নিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে আসেন। কিছুদিন পর এঁদের ইন্দ্রসেনা নামে কন্যা ও ইন্দ্রসেন নামক এক পুত্রের জন্ম হয়।এদিকে দময়ন্তীর অপর পানিপ্রার্থী দ্বাপর
, দয়মন্তী লাভে ব্যর্থ হয়ে কলির সাথে জোট বাঁধেন। কলি দ্বাপরকে পাশার মধ্যে প্রবেশ করতে বলেন এবং নলের শুদ্ধাচারের ত্রুটি খুঁজতে থাকেন। একদিন নল মুত্রত্যাগের পর পা না ধুয়েই সন্ধ্যাকালীন উপাসনা করতে বসেন। সেই সুযোগে কলি নলের দেহে প্রবেশ করেন। এরপর নলের কুমন্ত্রণায় তাঁর ভাই পুষ্করকে পাশা খেলার দ্বারা রাজ্য দখল করতে বলেন। নল তাঁর ভাইয়ের সাথে খেলতে বসলে- পাশার মধ্যস্থিত দ্বাপরের প্রভাবে নল তাঁর ধনসম্পদ ও রাজ্যপাট হারান। দময়ন্তী যথাসাধ্য নলকে নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করেন, কিন্তু অক্ষম হয়ে ও সর্বনাশ আসন্ন জেনে সারথি বাষ্ণেয়কে দিয়ে, তাঁর পিতা ভীমের কাছে পুত্র-কন্যাকে পাঠান। পুষ্কর দ্যুতক্রীড়ায় নলের সর্বস্ব হরণ করে অবশেষে দময়ন্তীকে পণ রাখতে বলেন। কিন্তু নল দময়ন্তীকে সাথে নিয়ে একবস্ত্রে রাজ্য ত্যাগ করে চলে যান। একদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় নল কতকগুলি স্বর্ণবরণ পাখি দেখে নিজের পরিধেয় বস্ত্র খুলে তা ধরতে গেলে- পাখিরা এই বস্ত্র নিয়ে উড়ে যায়। উড়ে যাবার সময় পাখিরা বলে- তারা পাশার সামগ্রী।এরপর নল দময়ন্তীকে তাঁর পিতৃগৃহে চলে যাবার জন্য বললে
, দময়ন্তী তা অস্বীকার করে নলের সাথেই চলতে থাকেন। এই সময় উভয়ই একই কাপড় গায়ে জড়িয়ে চলতে থাকেন। একদিন বিশ্রামকালে কলির পরামর্শে নল উক্ত বস্ত্রের অর্ধাংশ কেটে দময়ন্তীকে পরিত্যাগ করে চলে যান।দময়ন্তী ঘুম থেকে উঠে নলকে দেখতে না পেয়ে
, নলের খোঁজ করতে করতে নিকটস্থ বনে প্রবেশ করেন। এই বনে ইনি একটি ক্ষুধার্ত অজগরের কবলে পড়েন। দময়ন্তীর চিত্কারে এক শিকারী অজগরকে হত্যা করে দময়ন্তীকে উদ্ধার করেন। কিন্তু শিকারী দময়ন্তীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ধর্ষণ করতে গেলে দময়ন্তীর অভিশাপে তার মৃত্যু হয়। এরপর নলের সন্ধানে ঘুরতে ঘুরতে দময়ন্তী এক বণিকদলের দেখা পান এবং এদের সাথে ইনি চেদিরাজ্যের দিকে চলতে থাকেন। পথে বন্য হাতির আক্রমণে বণিকদলের বহুলোক নিহত হয়। অবশিষ্ট বণিকরা এই দুর্ভাগ্যের জন্য দময়ন্তীকে দায়ী করেন। সেই কারণে এঁরা দময়ন্তীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। দময়ন্তী বিষয়টি বুঝতে পেরে, পুনরায় বনমধ্যে পলায়ন করেন। পরে বণিকদলের কয়েকজন ব্রাহ্মণের সাথে চেদিরাজ্যে আসেন। দময়ন্তীর রূপদর্শনে রাজমাতা মুগ্ধ হন এবং তাঁকে সৈরিন্ধিরূপে (স্বাধীনা গৃহে নিয়োজিতা শিল্পকারিণী) নিযুক্ত করেন। এছাড়া তিনি তাঁর কন্যা সুনন্দার সখী হিসাবে নিয়োজিত করেন।এদিকে দময়ন্তীকে পরিত্যাগ করে নল একটি বনে প্রবেশ করেন
। পরে উক্ত বনে বনের দাবাগ্নির সৃষ্টি হলে, ইনি নারদ কর্তৃক শাপগ্রস্ত কর্কোটক নামক একটি সাপকে রক্ষা করেন। এই সাপটি উদ্ধার পাবার পর নলকে দংশন করেন। বিষক্রিয়ায় নলের শরীর বিকৃত হয়ে যায় এবং শরীরস্থ কলি নির্জীব হয়ে পড়ে। এই সময় কর্কোটক নলকে জানান যে, শরীর বিকৃত হওয়ার পর কলি নলকে চিনতে পারবে না এবং কলি কষ্ট পেতে থাকবে। এই নাগ যাবার সময় একটি দিব্য বস্ত্র নলকে দান করে বলেন যে- তাঁকে স্মরণ করে এই বস্ত্র পরিধান করলে- নল পূর্বরূপ ফিরে পাবেন। ইনি নলকে ঋতুপর্ণের কাছ থেকে অক্ষহৃদয় কৌশল জেনে নেবারও পরামর্শ দেন।এরপর নল অযোধ্যার ইক্ষাকু-বংশের রাজা ঋতুপর্ণের কাছে যান এবং বাহুক নামে তাঁর রথের সারথি হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন
। এদিকে দময়ন্তীর বাল্যসখা সুদেব চেদিরাজ্যের এক যজ্ঞানুষ্ঠানে আসেন। এখানে দময়ন্তীকে দেখে চিনতে পেরে, সুদেব রাজমাতা ও সুনন্দাকে সকল বিষয় জানান। পরে, দময়ন্তীর অনুরোধে তাঁরা তাঁকে সমাদরে দময়ন্তীর পিতার কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর বিদর্ভরাজ নলের সন্ধানে বিভিন্ন দিকে লোক পাঠান। পর্ণাদ নামক একজন ব্রাহ্মণ রাজা ঋতুপর্ণে সারথি হিসাবে নিয়োজিত বাহুককে নল হিসাবে সন্দেহ করেন। এই সংবাদ পেয়ে দময়ন্তী একটি কৃত্রিম স্বয়ংবর সভার আয়োজনের উদ্যোগ নেন। এক্ষেত্রে ইনি সুদেবকে দিয়ে ইনি রাজা ঋতুপর্ণের কাছে একটি সংবাদ প্রেরণ করেন যে, নল জীবিত আছেন কিনা তা ভালভাবে না জানার কারণে, দময়ন্তী দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণের জন্য পুনর্বার স্বয়ংবরসভা করতে চান। এক্ষেত্রে তিনি পরবর্তী দিনের সকালে এই সভার সময় নির্ধারণ করে দেন।ঋতুপর্ণ এই স্বয়ংবর সভায় যোগদানের উদ্যোগ নেন
। এক রাত্রের মধ্যে পৌঁছাতে পারে এমন কোন সারথি না পেয়ে ইনি বাহুকরূপী নলকে সারথি হিসাবে নেন। নল দ্রুত ঋতুপর্ণকে নিয়ে চেদি রাজ্যে নিয়ে আসেন। পথিমধ্যে ঋতুপর্ণ নলের অশ্বচালনা কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর কাছ থেকে অশ্ববিদ্যা শিখে নেন। পরিবর্তে নল তাঁর কাছ থেকে অক্ষবিদ্যা ও গণনাবিদ্যা শিক্ষা করেন। এই সময় নল কলির দেহ থেকে কর্কোটক-বিষ বমি করতে করতে বেরিয়ে যান।ঋতুপর্ণ চেদিরাজ্যের রাজধানী বিদর্ভনগরে পৌঁছে স্বয়ম্বর সভার কোন আয়োজন না দেখে বিস্মিত হন
। কিন্তু দময়ন্তী বাহুকরূপী নলকে পরীক্ষা করার জন্য একটি দ্যূত নিয়োগ করেন। এই পরীক্ষার মধ্যে ছিল নল দৃষ্টিপাত করা মাত্র শূন্য কলস জলে পরিপূর্ণ হয় (বরুণের বরে), তৃণ ধরলেই আগুন জ্বলে (অগ্নির বরে), রন্ধিত মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু হয় (যমের বরে)। এ সকল পরিচয় পাবার পর দময়ন্তী নলের সাথে মিলিত হন।নল কর্কোটকের দেওয়া বস্ত্র পরিধান করে কর্কোটককে স্মরণ করলে- নল পূর্বরূপ ফিরে পান
। আর সকল বিষয় অবগত হয়ে- ঋতুপর্ণ অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে নলের বন্ধু হয়ে যান। এরপর অক্ষবিদ্যার দ্বারা ইনি তাঁর ভাই পুষ্করকে পরাজিত করে রাজ্য উদ্ধার করেন। কিন্তু পুস্করকে কোন শাস্তি না দিয়ে অর্ধ-রাজত্ব দান করেন।