ধৃতরাষ্ট্র
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পৌরাণিক সত্তা
|
কাল্পনিকসত্তা
|
কল্পনা
|
সৃজনশীলতা
|
দক্ষতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
এই নামে দুটি উল্লেখযোগ্য
চরিত্র পাওয়া যায়। এঁরা হলেন–
২. বিচিত্রবীর্যের ক্ষেত্রজ পুত্র। বিচিত্রবীর্যের জ্যেষ্ঠা পত্নী অম্বিকার গর্ভে মহর্ষি ব্যাসদেবের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। ইনি মাতৃদোষে জন্মান্ধ ছিলেন। শৈশব থেকে ইনি ভীষ্মের কাছে প্রতিপালিত হন। ইনি বেদ, ধনুর্বেদ, গদাযুদ্ধ, অসিযুদ্ধ, গজশিক্ষা, নীতিশাস্ত্র, ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছিলেন। ইনি ব্যাসদেবের বরে শতহস্তীর ন্যায় বল লাভ করেছিলেন। যৌবনে সুবলের কন্যা গান্ধারী'র সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ব্যাসদেব গান্ধারীর শতপুত্র লাভের আশীর্বাদ করেন। গান্ধারীর গর্ভবতী হওয়ার দুই বৎসরের মধ্যেও সন্তান প্রসব না হওয়ায় এবং কুন্তীর গর্ভে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হওয়ার কারণে গান্ধারী অকালে গর্ভপাত করান। এর ফলে গান্ধারী একটি মাংসখণ্ড প্রসব করেন। পরে এই মাংস খণ্ড থেকে শতপুত্র ও একটি কন্যা জন্মলাভ করে। গান্ধারীর গর্ভকালীন সময় ধৃতরাষ্ট্র তাঁর একটি বৈশ্য জাতীয় রক্ষিতরা সাথে মিলিত হন। এই রক্ষিতার গর্ভে তাঁর যুযুৎসু নামে একটি ধার্মিক পুত্র জন্মেছিল। গান্ধারীর প্রসবকৃত মাংস পিণ্ড থেকে যখন দুর্যোধনের জন্ম হয়, তখন নানাবিধ দুর্লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এই সময় বিদুরসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এই পুত্রকে ত্যাগ করতে বললে, ইনি পুত্রস্নেহে তা করেন নি।
ধৃতরাষ্টের সন্তান তালিকা : |
পুত্র : দীর্ঘরোমা |
ইনি জন্মান্ধ ছিলেন বলে- তাঁর পরিবর্তে রাজা হয়েছিলেন তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই পাণ্ডু। পাণ্ডুর মৃত্যুর পর এঁর পুত্র যুধিষ্ঠির রাজা হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে পাণ্ডবগণ শৌর্যে-বীর্যে খ্যাতিমান হয়ে উঠলে ইনি ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। এই সময় কণিক নামক ব্রাহ্মণের উপদেশে- দুর্যোধন, দুঃশাসন, কর্ণ, শকুনি প্রভৃতির পরামর্শে- পাণ্ডবদের হত্যা করার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সেই কারণে কৌশলে ইনি পাণ্ডবদের বারণাবতে পাঠান। সেখানে পাণ্ডবদেরকে জতুগৃহে দগ্ধ করে হত্যার পরিকল্পনা করলেও বিদুরের কৌশলে পাণ্ডবেরা রক্ষা পান।
অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদী লাভ করার সংবাদ বিদুরের মুখে শুনে, ইনি কপট আনন্দ প্রকাশ করেন। কারণ ইনি আশা করেছিলেন যে- তাঁর পুত্র দুর্যোধনকেই দ্রৌপদী বরমাল্য প্রদান করবেন। ভাতৃ-বিরোধ রোধ করার জন্য ইনি পাণ্ডবদের অর্ধেক রাজত্ব দান করেন। অচিরেই পাণ্ডবরা নিজেদের রাজ্যকে সমৃদ্ধতর করে তুললে, দুর্যোধন ঈর্ষান্বিত হয়ে, শকুনির পরামর্শে পাশাখেলার আয়োজন করেন। এই খেলাকে ধৃতরাষ্ট্র প্রথমে সমর্থন না দিলেও, পুত্রস্নেহে পরে ইনি অনুমোদন দেন। এই খেলায় যুধিষ্ঠির সর্বস্ব হারান। এক পর্যায়ে দ্রৌপদীকে পণে হারালে, দুর্যোধন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করেন। কৃষ্ণের সাহায্যে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ সম্ভব না হলেও, দুর্যোধন দ্রৌপদীকে বিভিন্নভাবে অপমান করার চেষ্টা করেন। পরে ইনি দুর্যোধনকে তিরস্কার করেন এবং দ্রৌপদীর প্রার্থনায় পঞ্চপাণ্ডবকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন।
দুর্যোধনের প্ররোচনায় ইনি যুধিষ্ঠিরকে দ্বিতীয়বার পাশাখেলার অনুমোদন দান করেছিলেন। পাশা খেলায় হেরে, ১২ বত্সরের বনবাস ও এক বছরের অজ্ঞাত বাসের শর্তে পাণ্ডবরা বনে যাত্রা করলে, ইনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। এই সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য বিদুর কিছু পরামর্শ দিলেও, ধৃতরাষ্ট্র তা গ্রহণ করেন নি। নির্দিষ্টকাল অতিবাহিত হওয়ার পর, ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে দিয়ে শান্তি রক্ষার কথা বললেও, রাজ্য ফিরিয়ে দেবার কথা উল্লেখ করেন নাই। এই সময় ধৃতরাষ্ট্র, কৃষ্ণসহ অনেকেই মীমাংসায় আসার চেষ্টা করলে- দুর্যোধন, কর্ণ প্রমুখের প্ররোচনায় বিষয়টি ব্যর্থ হয়।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় সঞ্জয় দিব্য দৃষ্টিতে সকল বিষয় দেখতে পেয়ে তা, ধৃতরাষ্ট্রকে জানাতে থাকেন। সঞ্জয়ের মুখ থেকেই ইনি তাঁর পুত্রদের মৃত্যু সংবাদ এবং যুদ্ধে কৌরবদের পরাজয়ের সংবাদ জানতে পারেন। এই সময় পুত্রদের মৃত্যুতে ইনি শোকাতুর হলে, সঞ্জয় তাঁকে সান্ত্বনা দেন। যুদ্ধের শেষে ইনি গান্ধারীসহ যুদ্ধক্ষেত্র দর্শনে যান এবং অসন্তুষ্ট মনে যুধিষ্ঠিরকে আলিঙ্গন করেন। এই সময় ইনি পুত্রদের হত্যাকারী হিসাবে ভীমকে খুঁজতে থাকেন। বিষয়টি কৃষ্ণ বুঝতে পেরে, ভীমের একটি লৌহমূর্তি ধৃতরাষ্ট্রের সামনে উপস্থিত করলে, তিনি তা দুই বাহুর চাপে চূর্ণ করে ফেলেন। কিন্তু বুকে চাপ পড়ার কারণে রক্তবমন করতে করতে ভীমের জন্য বিলাপ করতে থাকেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পনের বছর পর, ভীমের গোপন অপমান সহ্য করতে না পেরে ইনি গান্ধারীকে সাথে নিয়ে বনবাসী হন। ইনি গঙ্গাতীর পার হয়ে শতযূপের আশ্রমে আশ্রয় নেন। এখানে ব্যাসদেব উপস্থিত হয়ে, কুন্তীর অনুরোধে কুরুক্ষেত্রে নিহত যোদ্ধাদের আত্মা হাজির করেন। এই সময় ধৃতরাষ্ট্র একদিনের জন্য দিব্যদৃষ্টি লাভ করে সবাইকে দেখেন। এরপর ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, কুন্তী, সঞ্জয় গঙ্গাতীরে উপস্থিত হয়ে মৌনী ও বায়ুভুক অবস্থায় তপস্যা শুরু করেন। ছয় মাস পরে এঁরা বনে প্রবেশ করেন। এই সময় বনে দাবাগ্নি শুরু হলে, সবাই সমাধিস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
এর অপরাপর নাম- অম্বিকাপুত্র, অম্বিকাসূত, অম্বিকেয়, অন্ধরাজ।