জয়দ্রথ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে- সিন্ধুদেশের রাজা। এঁর পিতার নাম ছিল বৃদ্ধক্ষত্র। এঁর সাথে ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুর্যোধনের বোন দুঃশলার বিবাহ হয়। এঁর পুত্রের নাম সুরথ। পাণ্ডবদের কাম্যকবনে অবস্থানকালে জয়দ্রথ দৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হন এবং আশ্রমে পাণ্ডবদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে দ্রৌপদীকে অপহরণ করে পালাতে থাকেন। কিন্তু ওই সময় পাণ্ডবরা মৃগয়া শেষ করে আশ্রমে প্রত্যাবর্তন করে দ্রৌপদীর ধাত্রী- কন্যার নিকট সমস্ত বিষয় অবগত হন। এরপর পাণ্ডবরা জয়দ্রথের অনুসরণ করেন। পাণ্ডবদের সাথে যুদ্ধে জয়দ্রথের সৈন্যরা পরাস্ত ও নিহত হওয়ায় পর, তিনি দ্রৌপদীকে রথ থেকে নামিয়ে দিয়ে পালাতে থাকেন। কিন্তু ভীম ও অর্জুন তাঁকে বন্দী করেন। যুধিষ্ঠির ও অর্জুনের অনুরোধে ভীম তাঁকে হত্যা না করে তাঁর মাথা কামিয়ে নাড়া করে দেন। এই অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইনি মহাদেবের তপস্যা করে অর্জুন ভিন্ন সমস্ত পাণ্ডবকে অন্তত একদিনের জন্য জয় করতে পারার বর লাভ করেন। ফলে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অভিমন্যুবধের জন্য দ্রোণ যে চক্রব্যূহ নির্মাণ করেছিলেন, তখন নকুল ও সহদেবকে ইনি পরাজিত করেন। এই চক্রব্যূহ মধ্যে প্রবিষ্ট অভিমন্যু নিহত হন। এই সময় অর্জুন সংসপ্তকদের সাথে যুদ্ধে নিযুক্ত থাকার জন্য ব্যূহমুখে উপস্থিত হতে সক্ষম হন নি। সন্ধ্যাকালে শিবিরে ফিরে অভিমন্যুবধের সংবাদ শুনে, অর্জুন প্রতিজ্ঞা করেন যে,- সুর্যাস্তের পূর্বেই তিনি জয়দ্রথকে হত্যা করবেন অথবা অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করে প্রাণত্যাগ করবেন। এই প্রতিজ্ঞার বিষয় জেনে জয়দ্রথ পালানোর চেষ্টা করলে- দুর্যোধন ও দ্রোণ তাঁকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন।

পরদিন জয়দ্রথকে রক্ষার জন্য দ্রোণ প্রথমে একটি শকটব্যূহ রচনা করেন। এই ব্যূহের ভিতরে গর্ভব্যূহ এবং গর্ভব্যূহের মধ্যে সুচীব্যূহের বিন্যাস করেন। পরে উক্ত সুচীব্যূহের মধ্যে বিশাল সৈন্যশ্রেণীর ভিতর জয়দ্রথকে লুকিয়ে রাখেন। অর্জুন যথাসাধ্য চেষ্টা করেও জয়দ্রথের কাছে পৌঁছাতে অসমর্থ হলে- কৃষ্ণ যোগবলে চক্রদ্বারা সুর্যকে আচ্ছাদিত করে দেন। ফলে দিন থাকতেই সন্ধ্যা সৃষ্টি হলে, জয়দ্রথ আত্মপ্রকাশ করে নির্ভয়ে সুর্যাস্ত দেখতে থাকেন। তখন কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে, জয়দ্রথের পিতা বৃদ্ধক্ষত্র জয়দ্রথের জন্মকালে দৈববাণী শুনেছিলেন যে, রণস্থলে জয়দ্রথের মুণ্ডুচ্ছেদ হবে। তখন তিনি এই অভিসম্পাত করেন যে, যে তাঁর পুত্রের মস্তক ভূলুণ্ঠিত করবে তাঁর মস্তক শতধা বিদীর্ণ হবে। যুদ্ধকালে বৃদ্ধক্ষত্র স্যমন্তপঞ্চকদেশের বহির্ভাগে তপস্যা করছিলেন। এই কারণে কৃষ্ণের পরামর্শে অর্জুন কৌতুহলী ও অসতর্ক জয়দ্রথের মাথা এক শরাঘাতে কেটে ফেলেন এবং তা মাটিতে পড়ার আগেই আরও কয়েকটি বাণে মুণ্ডুকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যাবন্দনারত রাজা বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে ফেলেন। রাজা বৃদ্ধক্ষত্র না বুঝে উঠে দাঁড়ান। ফলে এই মাথা মাটিতে পতিত হওয়ায় তাঁর নিজের মাথাও শত ভাগে বিদীর্ণ হয়।