কচ
বানান
বিশ্লেষণ :
ক্+অ+চ্+অ।
উচ্চারণ:
kɔc
(অ.কচ্)
কচ্ [কচ্ ধ্বনি দুটি একাক্ষর সৃষ্টি করে। অ নঞর্থক, তাই কচ্ ধ্বনি কোচ হব না]
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
कच (কচ্)>বাংলা
কচ।
পদ:
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে−বৃহস্পতির
পুত্র।
ত্রিভুবনের সকল ঐশ্বর্য অধিকার করার জন্য দেবতা ও অসুরের মধ্যে
যুদ্ধ শুরু হলে−
দেবতারা বৃহস্পতিকে এবং অসুরেরা (দৈত্য) শুক্রাচার্যকে তাঁদের পুরোহিত
নির্বাচন করেন।
দেবতাদের সাথে যুদ্ধে যে সকল দৈত্য নিহত হতেন,
শুক্রাচার্য তাঁর সঞ্জীবনীমন্ত্রের সাহায্যে তাঁদের জীবনদান
করতেন।
বৃহস্পতির এই বিদ্যা জানা না থাকার কারণে, তিনি নিহত দেবসৈন্যকে
জীবিত করতে পারতেন না। এই মন্ত্র জানার জন্য, অন্যান্য দেবতাদের অনুরোধে
বৃহস্পতি তাঁর পুত্র কচকে শুক্রাচার্যের কাছে পাঠান।
কচ শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে এক হাজার বৎসর অতিবাহিত
করেন।
এই সময় ইনি ব্রহ্মচর্যব্রত পালন করে গুরু শুক্রাচার্য ও তাঁর
কন্যা দেবযানীর সেবা করেন।
ঘটনাক্রমে দেবযানী কচের প্রতি আকৃষ্ট হন।
পাঁচশ বৎসর পর দৈত্যরা কচের অভিসন্ধি জানতে পারেন। সেই কারণে, দৈত্যরা কচকে হত্যা করে তাঁর দেহকে খণ্ড খণ্ড করে কুকুরের খাবার হিসাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু দেবযানীর অনুরোধে শুক্রাচার্য তাঁকে জীবিত করেন। এরপর দৈত্যরা কচকে দ্বিতীয়বার হত্যা করলেও দেবযানীর অনুরোধে শুক্রাচার্য আবার কচকে জীবিত করেন। তৃতীয়বার দৈত্যরা কচকে হত্যা করে তাঁর দেহ ভস্ম করেন। এরপর উক্ত ভস্ম মদের সাথে মিশিয়ে শুক্রাচার্যকে পান করান। দেবাযানীর পুনঃপুনঃ অনুরোধে ইনি আবার কচকে জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এইবারে শুক্রাচার্য দেখলেন কচ জীবিত হলে তাঁর পেট চিরে বের হবে, ফলে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। তাই ইনি উদরস্থ কচকে প্রথমে সঞ্জীবনী মন্ত্র শেখালেন। এরপর মন্ত্রবলে কচকে জীবিত করলে, কচ শুক্রাচার্যের পেট থেকে বের হন, কিন্তু শুক্রাচার্য মারা যান। এরপর কচ, শুক্রাচার্যকে জীবিত করেন। এরপর আরো পাঁচশত বৎসর শুক্রাচার্যের আশ্রমে থেকে, কচ স্বর্গে যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এই সময় শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানী তাঁর কাছে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু কচ গুরু-কন্যা বিবেচনায় দেবযানীকে প্রত্যাখ্যান করেন। সেই সাথে তিনি জানালেন যে তাঁরা দুজনই শুক্রাচার্যের শরীরের অভ্যন্তর হতে জাত, সেই কারণে দেবযানীর সাথে তাঁর সম্পর্ক দাঁড়ায় ভাই-বোন। ক্ষুব্ধ দেবযানী কচকে অভিশাপ দিলেন যে, তিনি যে সঞ্জীবনী বিদ্যা অর্জন করেছেন, তা কার্যকরী হবে না। কচ পাল্টা দেবযানীকে অভিশাপ দিলেন যে, দেবযানীর অন্তরের ইচ্ছা পূরণ হবে না। কোন ব্রাহ্মণ বা ঋষিপুত্র তাঁকে বিবাহ করবেন না। এরপর কচ স্বর্গে চলে যান। ইনি অভিশাপের কারণে নিজে কখনও এই বিদ্যার সুফল পান নি। তবে তিনি যাঁদেরকে এই বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁরা ফললাভ করেছিলেন।
সূত্র:
বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। মার্চ ২০০৫।
বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০।
সরল বাঙ্গালা অভিধান। সুবলচন্দ্র মিত্র।
মহাভারত। (কালীপ্রসন্ন সিংহ, অনুবাদ)। যট্সপ্ততিতম অধ্যায়। ও সপ্তসপ্ততিতম অধ্যায়।