কুবের
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পৌরাণিক সত্তা
|
কাল্পনিকসত্তা
|
কল্পনা
|
সৃজনশীলতা
|
দক্ষতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু
পৌরাণিক কাহিনি মতে–
যক্ষ ও কিন্নরদের রাজা।
বিশ্রবা ঋষি'র
ঔরসে ও ইলাবিলার গর্ভে এঁর জন্ম হয়েছিল।
ইলবিলার পুত্র ছিলেন বলে এর অপর নাম ছিল ঐলবিল।
পিতা বিশ্রবার নাম হতে এঁর নাম হয় বৈশ্রবণ।
বিশ্রবার অন্যান্য পুত্রদেরকেও (রাবণ,
কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণকে) বৈশ্রবণ বলা হয়।
তবে বিশেষভাবে বৈশ্রবণ শব্দ দ্বারা কুবেরকেই বুঝান হয়ে থাকে।
ইনি অত্যন্ত কুৎসিত ছিলেন। এঁর ছিল তিনটি পা ও আটটি দাঁত। ইনি মহাবনে গিয়ে দুই হাজার বৎসর তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে অমরত্ব লাভ করেন এবং উত্তর দিগন্তের দিকপাল ও ধনপতি হন। ব্রহ্মা দেবতাদের সম-মর্যাদা প্রদান করে এঁকে একটি পুষ্পক রথ দান করেছিলেন। ব্রহ্মা এঁর বাসস্থান উল্লেখ না করায়, ইনি তাঁর পিতা বিশ্রবা'কে বাসস্থান নির্দেশ করতে অনুরোধ করেন। বিশ্রবা বিশ্বকর্মা কর্তৃক নির্মিত ত্রিকূটশিখরস্থ লঙ্কাপুরীতে এঁর বাসস্থান স্থির করে দেন। কুবেরের বৈমাত্রেয় ভাই রাবণ লঙ্কাপুরী দখল করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে, ইনি পিতার উপদেশে লঙ্কা পরিত্যাগ করে কৈলাশে গমন করেন। এখানে অবস্থানকালে একবার ইনি রুদ্রাণীকে দর্শন করেন। ফলে তাঁর ডান চোখ পুড়ে যায় ও বাম চোখ পিঙ্গলবর্ণ ধারণ করে। সেই থেকে ইনি একপিঙ্গল নামে খ্যাত হন। এরপর ইনি বহুবৎসরব্যাপী তপস্যা করে মহাদেবকে খুশী করেন এবং মহাদেবের বন্ধুত্ব লাভ করেন। রাবণ মহাশক্তিশালী ও অত্যাচারী হয়ে উঠলে, ইনি দূত মুখে রাবণকে দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। এতে রাবণ ক্ষুব্ধ হয়ে কুবেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে রাবণ কর্তৃক ইনি পরাজিত হন এবং এঁর পুষ্পক রথটি রাবণ দখল করে নেন।
এঁর স্ত্রীর নাম ছিল আহুতি। আহুতির গর্ভে এঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। দুই পুত্রের নাম ছিল- নলকুবর ও মণিগ্রীব। কন্যার নাম ছিল- মীনাক্ষী। এঁর বাসস্থান ছিল কৈলাস, রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল অলকা, রথের নাম ছিল পুষ্পক এবং উদ্যানের নাম ছিল চৈত্ররথ।
রাবণ বধের জন্য রামকে সহায়তা করার লক্ষ্যে- ব্রহ্মা বিভিন্ন দেব, গন্ধর্ব, যক্ষ প্রমুখদেরকে বানর সৃষ্টি করার আদেশ করেন। এই সূত্রে কুবের একটি বানর সৃষ্টি করেন। এই বানর পুত্রটির নাম- গন্ধমাদন। [সপ্তদশ সর্গ, বালখণ্ড। বাল্মীকি রামায়ণ]
হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থসমূহে এঁর বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়। এই নামগুলি হলো-
অলকাধিপ, অলকাধিপতি, অলকাপতি, অলকেশ্বর।
একপিঙ্গল : এঁর একচোখ পিঙ্গলবর্ণের ছিল বলে এঁর নাম হয়েছিল একপিঙ্গল।
ঐলবিল : ইলবিলার পুত্র বলে এঁর নাম হয়েছিল ঐলবিল।
কুবের : এঁর দেহের গঠন অত্যন্ত কুত্সিত ছিল বলে ইনি কুবের নাম প্রাপ্ত হন।
কিন্নরেশ : কিন্নরদের রাজা ছিলেন বলে তাঁকে কিন্নরেশ বলা হত।
ত্র্যাম্বকসখা : মহাদেবের সখা ছিলেন বলে, ইনি এই নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
দিকপাল : ইনি দশ দিকের অধিপতি ছিলেন বলে এই নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
ধনদ : ধনসম্পদের দাতা ছিলেন বলে ইনি ধনদ নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
ধনপতি : ধনসম্পদের অধিপতি ছিলেন বলে ইনি ধনপতি নাম প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
পৌলস্ত্য : পুলস্ত্য ঋষির পৌত্র বলে ইনি পৌলস্ত্য নামে পরিচিত হন।
বৈশ্রবণ : বিশ্রবা মুনির পুত্র বলে এঁর নাম হয়েছিল বৈশ্রবণ।
যক্ষরাজ : যক্ষদের রাজা ছিলেন বলে তাঁকে যক্ষরাজ বলা হত।
রত্নগর্ভ : রত্নের অধিপতি বলে ইনি এই নাম প্রাপ্ত হন।
রাক্ষসেন্দ্র : রাক্ষসরূপী যক্ষদের রাজা ছিলেন বলে ইনি এই নাম প্রাপ্ত হন।