মরুত্ত
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পৌরাণিক সত্তা
|
কাল্পনিকসত্তা
|
কল্পনা
|
সৃজনশীলতা
|
দক্ষতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
জনৈক রাজা।
ইনি ছিলেন অবিক্ষিতের পুত্র।
ইনি একবার হিমালয়ের মেরুপ্রদেশে এক বিরাট যজ্ঞের আয়োজন করেন।
ইনি বৃহস্পতিকে এই যজ্ঞের পুরোহিত হিসাবে মনে মনে নির্বাচন করেন।
ইন্দ্র মরুত্তের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বৃহস্পতিকে নিজের পুরোহিত করেন এবং তাঁকে
মরুত্তের পৌরোহিত্য করতে নিষেধ করেন।
পরে মরুত্ত বৃহস্পতিকে এই যজ্ঞের পৌরোহিত্য করতে বললে,
বৃহস্পতি
মানুষের যাজন করবেন না বলে জানান।
বৃহস্পতির এই প্রত্যাখ্যানে ব্যথিত হয়ে,
ইনি বিমর্ষ মনে
রাজ্যের দিকে রওনা দেন।
এই সময় পথে ইনি নারদের সাক্ষাৎ পান।
সমস্ত বিষয় অবগত হয়ে,
নারদ বৃহস্পতির
ভাই সংবর্তকে যজ্ঞের পুরোহিত নির্বাচন করতে বলেন।
এদিকে সংবর্ত মহাদেবের দর্শন কামনায় বারাণসীতে ছিলেন। নারদেরই উপদেশ মত মরুত্ত সেই পুরীর দ্বারদেশে একটি মৃতদেহ রেখে আসেন। সংবর্ত ঘুরতে ঘুরতে সেই স্থানে এসে মৃতদেহ দেখে ফিরে যান। মরুত্ত এই সময় তাঁকে অনুসরণ করে এক নির্জন স্থানে তাঁর সাথে সাক্ষাত্ করেন। সংবর্ত প্রথমে এই যজ্ঞের পুরোহিত হতে রাজী হলেন না। ইনি মরুত্তকে নিবৃত্ত করার জন্য তাঁর গায়ে ধুলি ও কাদা নিক্ষেপ করেন। পরে মরুত্তের অনুনয় বিনয়ে সংবর্ত যজ্ঞ সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিলেন। এরপর সংবর্ত বলেন যে, যজ্ঞ করার জন্যে ইন্দ্র ও বৃহস্পতি তাঁর উপর ক্রুদ্ধ হলে রাজা যেন তাঁকে ত্যাগ না করেন।
যজ্ঞের এই আয়োজনের কথা জানতে পেরে, বৃহস্পতি ঈর্ষান্বিত হয়ে ইন্দ্রকে অনুরোধ করেন যে তিনি যেন মরুত্ত ও সংবর্তকে দমন করেন। তখন ইন্দ্রের আদেশে বৃহস্পতিকে সঙ্গে নিয়ে অগ্নিদেব যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হন। অগ্নি বৃহস্পতিকে পুরোহিত করার জন্য মরুত্তকে অনুরোধ করলে, সংবর্ত ক্রুদ্ধ হয়ে অগ্নিকে ভস্ম করে ফেলবার ভয় দেখালেন। অগ্নি ইন্দ্রকে বিষয়টি জানালে, ইন্দ্র গন্ধর্বরাজ ধৃতরাষ্ট্রকে মরুত্তের কাছে পাঠালেন। এক্ষেত্রেও মরুত্ত বৃহস্পতিকে পুরোহিত হিসাবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ধৃতরাষ্ট্র ইন্দ্রের বজ্রাঘাতের ভয় দেখালে, মরুত্ত সংস্তন্তনী বিদ্যা দ্বারা তিনি এই সব ভয় নিবারণ করবেন বলে জানান। এরপর সংবর্ত যজ্ঞ শুরু করেন। ইনি মন্ত্রপাঠ করে দেবতাদেরকে আহ্বান করলে, ইন্দ্রসহ অন্যান্য দেবতারা সেখানে উপস্থিত হন। পরে দেবতারা যজ্ঞভাগ গ্রহণ করে মরুত্তকে আশীর্বাদ করেন। এই যজ্ঞে মরুত্ত বহু ষাড় হত্যা করে অভ্যাগতদের আপ্যায়ন করেছিলেন। এছাড়া পুরোহিত ও ব্রাহ্মণদের ইনি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ দক্ষিণা হিসাবে দিয়েছিলেন। এরপরেও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্বৃত্ত হয়েছিল। ইনি একটি কোষাগারে এই স্বর্ণ রেখে রাজ্যে ফিরে আসেন। অশ্বমেধযজ্ঞের সময় যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবের পরামর্শে সেই সঞ্চিত স্বর্ণ সংগ্রহ করেছিলেন।
রামায়ণে আছে উসীরবীজ দেশে সংবর্তকে যাজকরূপে গ্রহণ করে মরুত্ত যখন যজ্ঞ করছিলেন, তখন রাবণ যজ্ঞভূমিতে উপস্থিত হন। রাবণ মরুত্তকে যুদ্ধে আহবান করলেন, মরুত্ত ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু যজ্ঞে দীক্ষিত অবস্থায় ক্রোধ করা অনুচিত বলে সংবর্ত জানালে, মরুত্ত ধনুর্বাণ ত্যাগ করে যজ্ঞস্থলে ফিরে আসেন। এই সময় রাবণ যজ্ঞে আগত ঋষিদের ভক্ষণ করে প্রস্থান করেন। এই সময় যজ্ঞে উপস্থিত দেবতারা বিভিন্ন পশুর রূপ ধারণ করে আত্মরক্ষা করেন। রাবণ চলে গেলে দেবতারা নিজ নিজ মুর্তি ধরে, উপকারী পশুদের বৃদ্ধির বর প্রদান করেন।