নকুল
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{
পৌরাণিক সত্তা
|
কাল্পনিকসত্তা
|
কল্পনা
|
সৃজনশীলতা
|
দক্ষতা
|
জ্ঞান |
মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
|
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত-সত্তা
|
সত্তা
|}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে–
ইনি চতুর্থ পাণ্ডব নামে পরিচিত।
এর অপর সহোদর ছিলেন সহদেব।
অপর পাণ্ডবদের মতো ইনিও পাণ্ডুর ক্ষেত্রজ পুত্র ছিলেন।
পাণ্ডু-পত্নী মাদ্রীর গর্ভে ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের (দেবতা) ঔরসে এঁর জন্ম হয়েছিল।
সুদর্শন অশ্বিনীকুমারের ঔরসে এবং সুদর্শনা মাদ্রীর গর্ভে জাত এই পুত্রদ্বয় অসাধারণ
রূপবান ছিলেন।
পাণ্ডুর মৃত্যুর পর এঁদের মা মাদ্রী স্বামীর সাথে চিতায় সহমরণে গেলে- এঁরা বিমাতা
কুন্তীর কাছে লালিত পালিত হন।
শৈশবে ইনি অন্যান্য কুরুসন্তানদের সাথে দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেন। ইনি অসি যুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। অর্জুন কর্তৃক অর্জিত দ্রৌপদীর ইনি চতুর্থ স্বামী। দ্রৌপদীর গর্ভে এঁর শতানিক নামক পুত্র জন্মেছিল। এছাড়া ইনি চেদিরাজকন্যা করেণুমতীকেও বিবাহ করেছিলেন। এঁর গর্ভে নিরমিত্র নামক এক পুত্র জন্মেছিল। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞকালে ইনি পশ্চিমদিকে যাত্রা করে দশার্ণ, মালব, ত্রিগর্ত ও পঞ্চনদ প্রভৃতি দেশ জয় করেছিলেন।
দ্যূতক্রীড়ায় যুধিষ্ঠির পরাজিত হলে অপর পাণ্ডবদের সাথে ইনিও বনবাসে যান। ঘোষযাত্রাকালে গন্ধর্বদের হাতে দুর্যোধন বন্দী হলে- ভীম, অর্জুন ও সহদেবের সাথে ইনিও যুদ্ধ করেন। হরিণরূপী-ধর্ম এক ব্রাহ্মণের অরণি-মন্থ হরণ করলে- তা উদ্ধারের জন্য অপর পাণ্ডবের সাথে ইনিও যান। এক্ষেত্রে পাণ্ডবেরা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লে- ইনি নিকটস্থ সরোবরে জল আনতে গেলে- ধর্ম আকাশ থেকে তাঁকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। এই প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে ইনি জল আনতে গেলে- ইনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। উল্লেখ্য জল আনতে গিয়ে ভীম, অর্জুন ও সহদেবেরও একই পরিণতি হলে- যুধিষ্ঠির ধর্মের সকল প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিয়ে ধর্মকে সন্তুষ্ট করেন। পরে ধর্ম সকল মৃত ভাইয়ের মধ্য থেকে একজনকে মাত্র প্রাণ দেবেন এরূপ শর্ত দিলে- যুধিষ্ঠির বৈমাত্রেয় ভাই বলে নকুলের জীবন চেয়ে ছিলেন।
মত্স্যরাজ বিরাটের প্রাসাদে অজ্ঞাতবাসকালে ইনি যুধিষ্ঠিরের অশ্বরক্ষক ও অশ্বচিকিত্সক পরিচয় দেন এবং 'গ্রন্থিক' নামে বিরাটের অশ্বের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হন। দ্যূত সভায় দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণকালে ইনি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হত্যা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ইনি বহু কৌরব-সৈন্য বিনাশ করেন। যুদ্ধের ষোড়শ দিনে ইনি কর্ণের কাছে পরাজিত ও লাঞ্ছিত হন। কুন্তির কাছে কৃত প্রতিজ্ঞা অনুসারে কর্ণ (সূর্যের ঔরসজাত কুন্তির প্রথম পুত্র) নকুলকে প্রাণভিক্ষা দেন। অশ্বত্থামা কর্তৃক দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র নিহত হলে ইনি উপপ্লব্য থেকে দ্রৌপদীকে নিয়ে আসেন। অশ্বত্থামার মণি হরণকালে নকুল ভীমের সারথি হয়েছিলেন। যুদ্ধশেষে মহাপ্রস্থানের পথে যাবার সময় দ্রৌপদী ও সহদেবের পর সুমেরু শিখরে এঁর পতন ঘটেছিল। ইনি নিজেকে সর্বাপেক্ষা রূপবান হিসাবে মনে করতেন। এই গর্বের কারণে ইনি সশরীরে স্বর্গে যেতে পারেননি।