পাণিনি
প্রখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণ রচয়িতা

পাণিনির জন্মকাল সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই সকল মতভেদ অনুসারে ধরা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০-৪০০ অব্দের মধ্যে পাণিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন
গান্ধার রাজ্যের শালাতুর (বর্তমান লাহোরের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক পল্লীকে তাঁর জন্মগ্রহণ জন্মস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জন্মস্থানের নামে তাঁকে অনেক সময় 'শালতুরীয়' নামে অভিহিত করা হয়েছে।  

পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তিনি ফিনিসীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল। এদেরকে পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হতো। পাণিনির পিতা ছিলেন ফিনিকিয় বা পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর পিতার নাম ছিল শলঙ্ক। এই কারণে অনেক সময় তাঁকে শলাঙ্কি বলা হয়। পাণিনির মা ইলেন দক্ষ জাতির কন্যা। অনেকের মতে পাণিনির মায়ের নাম ছিল দাক্ষী। এই সূত্রে অনেকে ক্ষেত্রে তাঁকে দাক্ষীপুত্র বা দাক্ষেয় নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পাণিনি পারিবারিক সূত্রে বেদোত্তর সনাতন পৌরাণিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন অহিগলমালার (শিব) উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে।

তাঁর শিক্ষকের নাম ছিল উপবৎস। তাঁর রচিত ব্যাকরণের নাম অষ্টাধ্যায়ী। কথিত আছে, মহাদেবের ঢাকের শব্দে চৌদ্দটি ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই ধ্বনি অনুসারে তিনি শব্দসূত্র তৈরি করেন। একে বলা হয়েছে শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর সূত্র। মূলত এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম সংজ্ঞা বা সংজ্ঞাসূত্র। এই ১৪টি শিবসূত্র হলো

১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
৫. হ য ৱ র ট্
৬. ল ণ্
৭. ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্
৮. ঝ ভ ঞ
৯. ঘ ঢ ধ ষ্
১০. জ ব গ ড দ শ্
১১. খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্
১২. ক প য্
১৩. শ ষ স র্
১৪. হ ল্ ।

মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি এই সূত্রগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত করে নাম দিয়েছিলেন প্রত্যাহার (সংক্ষেপিত) সূত্র। এক্ষেত্রে প্রতিটি সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ যুক্ত করে সংক্ষিপ্ত বা প্রত্যাহার সূত্র হয়েছিল।

প্রত্যহার সূত্র তৈরির বিধি
১. শিবসূত্রের বিচারে প্রত্যাহার সূত্র তৈরি হয়েছে।
২. প্রতিটি প্রত্যাহারের নামকরণ করা হয়েছে শিবসূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ দ্বারা। যেমন
  প্রথম শিবসূত্রটি হলো
ই উ ণ্ এক্ষেত্রে প্রত্যাহরটির নাম হবে অণ্
৩. ব্যবহারিক ক্ষেত্রে শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি ইৎ হবে, অর্থাৎ অগ্রাহ্য হবে। যেমন প্রথম চারটি শিবসূত্র হলো

           
১. ই উ ণ্
            ২. ঋ ৯ ক্
            ৩. এ ও ঙ্
            ৪. ঐ ঔ চ্

এই চারটি শিবসূত্রের মিলিত সূত্র প্রত্যাহর হবে অচ্ । এর শেষ বর্ণ চ্ বাদ দিলে পাওয়া যাবে অ ই উ ণ্ ঋ ৯ এ ও ঐ ঔ। এই বর্ণগুলোই হবে সংস্কৃত ভাষার স্বরধ্বনি। অর্থাৎ অচ্ প্রত্যাহর সূত্র দ্বারা স্বরধ্বনির সংখ্যা পাওয়া গেল। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এই সূত্রে দীর্ঘ, হ্রস্ব, প্লুত স্বরধ্বনির উল্লেখ নাই। একই ভাবে ৫ম শিবসূত্র থেকে ১৪শ শিবসূত্র থেকে পাওয়া যায় প্রত্যাহার সূত্র হল্। এর অর্থ হলো সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। পাণিনি ব্যাকরণে প্রত্যাহার সূত্র মোট ৪৩টি। তাঁর সমগ্র রচনাটি আটটি অধ্যায়ে বিভাজিত এই সূত্রে এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে- অষ্টাধ্যয়ী এই ব্যাকরণের অন্যতম ভাষ্যকার ছিলেন পতঞ্জলি

তিনি তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

পঞ্চতন্ত্র মতে, তিনি সিংহের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।


সূত্র :