ঊষা
হিন্দু বৈদিক ও পৌরাণিক
চরিত্র।
- বৈদিক দেবী।
সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রকৃতির জ্যোতির্ময় দশাগত নাম ঊষা। সূর্যোদয়ের পরে ঊষা
সূর্যের জ্যোতির সাথে মিশে যায়।
জ্যোতিসমূহের ভিতরে ঊষা শ্রেষ্ঠ। ঊষার
আবির্ভাবের সাথে সাথে দেবতারা তাঁর স্তুতি করে জাগরিত হন। এই বিচারে ঊষা
দেবতাদের মাতা। সূর্যের অস্তগমনের পর রাত্রি আসে, তাই রাত্রি সূর্যের (সবিতা)
কন্যা। সূর্যোদয়ের কালে রাত্রির বিদায় নেয় এবং ঊষার জন্ম হয়। তাই
উষা হয়ে ওঠে সবিতা বা সূর্যের কন্যা। এই কারণে রাত্রি ও উষা উভয়ই সবিতা তথা
সূর্যের কন্যা। আবার ঊষার পরে সূর্যের আগমন ঘটে, তাই সূর্য্ও ঊষার সন্তান।
কিন্তু সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঊষা হয়ে ওঠেন সূর্যের সহচরী, প্রণয়ী, সেবিকা,
স্ত্রী। [ঋগ্বেদ। প্রথম মণ্ডল। সূক্ত ১১৩]
গোতমবংশীয়রা এই আকাশকন্যার (স্বর্গকন্যা) স্তূতি করেছেন। তিনি স্বর্গকন্যা
এবং সূর্যের সেবিকা।
তাঁর ভগ্নির নাম নিশা। তাঁর আবির্ভাবে নিশা অন্তর্হিতা হন।
ঊষা সূর্যের স্ত্রী এবং তিনি দিনে দিনে মনুষ্যগণের আয়ু ক্ষয় করেন। সূর্যোদয়ের
কালে তিনি সূর্যের রথে যুক্ত করার মতো গাভীদের যুক্ত করেন। এর সাথে যুক্ত হন
দেবতারা। এঁদের নেত্রী হিসেবে থাকেন উষা। এরপর এঁরা দীপ্তিযুক্তা সূর্যের আশ্রয়
গ্রহণ করেন।
ঊষা ও সূর্যের রথে যুক্ত দেবতাদের তেজের
দ্বারা
দূরদেশ পর্যান্ত তেজের দ্বারা আলোকিত হয়।
তিনি অন্নযুক্তা নামে অভিহিত হয়েছেন। তিনি
গাভীপূর্ণ গৃহ এবং ধন-সম্পদ প্রদান করেন।[ঋগ্বেদ। প্রথম মণ্ডল। ৯২।
- পৌরাণিক ঊষা . দৈত্যরাজ বাণাসুরের কন্যা ছিলেন। এঁর অপরাপর নাম ছিল অর্জুনা বা অর্জুনী।
একদিন কৈলাস পর্বতে শিবের সাথে পার্বতী ক্রীড়ারত ছিলেন।
ঊষা এই দৃশ্য দখে অত্যন্ত কামপীড়িত হয়ে পড়েন। পার্বতী ঊষার এই মনোভাব বুঝতে পারেন। পার্বতী তাঁকে বলেন যে,
স্বপ্নে যাকে তুমি দেখবে, সেই তোমার স্বামী হবে। ঊষা সেই রাত্রে স্বপ্নে
অনিরুদ্ধকে দেখেন
এবং তাঁকে পতি হিসাবে বরণ করেন। বিষয়টি ঊষার সখী চিত্রলেখাকে জানান। চিত্রলেখা বিভিন্ন দেশের রাজকুমারদের ছবি দেখিয়ে ও বিবরণ শুনে অনিরুদ্ধের পরিচয় পান। পরে অনিরুদ্ধকে আনার জন্য চিত্রলেখা দ্বারকায় উপস্থিত হন। সেখানে প্রথমে তাঁর সাথে নারদের দেখা হয়। সব শুনে নারদ তাঁকে তামসীবিদ্যা শিখিয়ে দেন। এই বিদ্যার দ্বারা চিত্রলেখা অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন। এরপর সবাইকে মোহাচ্ছন্ন কর অনিরুদ্ধকে নিয়ে ইনি বাণের রাজধানী শোণিতপুরে প্রবেশ করেন। এরপর ঊষা গন্ধর্বমতে অনিরুদ্ধকে গোপনে বিবাহ করেন। এই বিবাহের কথা বাণ জানতে পেরে, ইনি অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে সৈন্য প্ররণ করেন। অনিরুদ্ধ সবাইকে হত্যা করলে, বাণ ঐন্দ্রজালিক মায়া বিস্তার করে অনিরুদ্ধকে বন্দী করেন। নারদ এই সংবাদ কৃষ্ণ ও বলরামকে জানালে— কৃষ্ণ, বলরাম ও প্রদ্যুম্ন শোণিতপুর আক্রমণ করেন। এঁরা যুদ্ধে বাণকে পরাজিত করে অনিরুদ্ধকে উদ্ধার করেন। এরপর এঁরা ঊষাকে নিয়ে নববধু সাজে সাজিয়ে দ্বারকায় নিয়ে আসেন।