ঊষা
বানান বিশ্লেষণ:
ঊ+শ্+আ
উচ্চারণ :
u.ʃa
(উ.শা)।
উ.শা [উ একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হয়। অবশিষ্ট শা ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হয়]
শব্দ-উৎস:
সংস্কৃত
ऊषा
উষা>বাংলা
উষা।
রূপতাত্ত্বিক
বিশ্লেষণ: √ঊষ্
(পীড়ন) +
অ (ক)=ঊষ+আ
(টাপ্)
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্তা | সত্তা |}
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিতে এই নামে দুটি চরিত্র পাওয়া যায়।
১. দৈত্যরাজ বাণাসুরের কন্যা ছিলেন। এঁর অপরাপর নাম ছিল অর্জুনা বা অর্জুনী।
একদিন কৈলাস পর্বতে শিবের সাথে পার্বতী ক্রীড়ারত ছিলেন। ঊষা এই দৃশ্য দখে অত্যন্ত কামপীড়িত হয়ে পড়েন। পার্বতী ঊষার এই মনোভাব বুঝতে পারেন। পার্বতী তাঁকে বলেন যে, স্বপ্নে যাকে তুমি দেখবে, সেই তোমার স্বামী হবে। ঊষা সেই রাত্রে স্বপ্নে অনিরুদ্ধকে দেখেন এবং তাঁকে পতি হিসাবে বরণ করেন। বিষয়টি ঊষার সখী চিত্রলেখাকে জানান। চিত্রলেখা বিভিন্ন দেশের রাজকুমারদের ছবি দেখিয়ে ও বিবরণ শুনে অনিরুদ্ধের পরিচয় পান। পরে অনিরুদ্ধকে আনার জন্য চিত্রলেখা দ্বারকায় উপস্থিত হন। সেখানে প্রথমে তাঁর সাথে নারদের দেখা হয়। সব শুনে নারদ তাঁকে তামসীবিদ্যা শিখিয়ে দেন। এই বিদ্যার দ্বারা চিত্রলেখা অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন। এরপর সবাইকে মোহাচ্ছন্ন কর অনিরুদ্ধকে নিয়ে ইনি বাণের রাজধানী শোণিতপুরে প্রবেশ করেন। এরপর ঊষা গন্ধর্বমতে অনিরুদ্ধকে গোপনে বিবাহ করেন। এই বিবাহের কথা বাণ জানতে পেরে, ইনি অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে সৈন্য প্ররণ করেন। অনিরুদ্ধ সবাইকে হত্যা করলে, বাণ ঐন্দ্রজালিক মায়া বিস্তার করে অনিরুদ্ধকে বন্দী করেন। নারদ এই সংবাদ কৃষ্ণ ও বলরামকে জানালে— কৃষ্ণ, বলরাম ও প্রদ্যুম্ন শোণিতপুর আক্রমণ করেন। এঁরা যুদ্ধে বাণকে পরাজিত করে অনিরুদ্ধকে উদ্ধার করেন। এরপর এঁরা ঊষাকে নিয়ে নববধু সাজে সাজিয়ে দ্বারকায় নিয়ে আসেন।
২. স্বর্গকন্যা ও আদিত্য দেবের ভগিনী। ইনি চির যৌবনা ও অপরূপ সৌন্দর্যময়ী ছিলেন। ইনি প্রভাতের দেবী। বেদে আছে ইনি প্রজাপতির কন্যা। প্রজাপতি তাঁর কন্যাকে রাজা সোমের সাথে বিবাহ দিতে স্থির করেন। কিন্তু এঁকে বিবাহের জন্য অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্র ও অশ্বিনীকুমারদ্বয় প্রস্তাব দেন। এই কারণে প্রজাপতি ঘোষণা দেন যে, যিনি অনন্ত আকাশ-পথ বিচরণে সক্ষম হবেন এবং সেই সাথে যিনি যত বেশি স্বরচিত বেদসূক্ত উচ্চারণে সমর্থ হবেন, তাঁর হাতেই ঊষাকে সমর্পণ করবেন। এই ঘোষণা অনুসারে অগ্নি, সূর্য ও ইন্দ্র অগ্রসর হয়েও অকৃতকার্য হন। এরপর অশ্বিনীদ্বয়- ইন্দ্রের কাছ থেকে বেদসূক্তি লাভ করে সফল হন। কিন্তু এরা সূর্যের অনুচর বলে, ঊষাকে গ্রহণ করলেন না। শেষ পর্যন্ত ঊষাকে সূর্য গ্রহণ করেছিলেন।