যজ্ঞ
প্রাচীন ভারতের আর্য জাতির একটি প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশেষ আর্য শাস্ত্র মতেদেবতার উদ্দেশ্যে কোন দ্রব্য দানকে বলা হতো যজ্ঞ। এই দান করা হতো দেবতার অনুগ্রহ লাভের জন্য। অনেক সময় নিজের, দেশের কল্যাণ্যের জন্যও দান করা হতো। যজ্ঞের উদ্দেশ্যের বিচারে দুই ভাগে বিভক্ত ছিল।

যজ্ঞে দ্রব্য ত্যাগ করার প্রক্রিয়াকে আহূতি বলা হতো, আর যজ্ঞে যে দ্রব্য ত্যাগ করা হতো তাকে বলা হতো হব্য হব্যের তালিকায় থাকতো ঘৃত, পায়েস, দুধ, রুটি, পশুমাংস, সোমলতার রস ইত্যাদি যে ব্যক্তির হিতার্থে যজ্ঞ করা হতো তাঁকে বলা হতো যজমান আর যিনি যজমানের জন্য যজ্ঞের কাজ সম্পাদন করতেন তাঁকে বলা হতো- যাজক বা ঋত্বিক

 

যজ্ঞের আয়োজন বড় ছোটো ছিল। বড় বড় যজ্ঞে ১৬ জন ব্রাহ্মণ থাকতেন। এই সকল ব্রাহ্মণদের ভিতরে একজন হতেন প্রধান পুরোহিত। এঁকে বলা হতো ব্রহ্মা। ব্রহ্মাকে অবশ্যই তিনটি বা চারটি বেদে পণ্ডিত হতে হতো। প্রধান ব্রাহ্মণের অধীনে থকতো তিন ধরনের যাজক। এঁরা হলেন

যজ্ঞের জন্য বিশেষ বেদী তৈরি করা হতো। একে বলা হতো যজ্ঞবেদী। এক বর্গহাত পরিমিত জায়গায়, এক হাত উঁচু মাটির দেওয়াল তুলে একটি কুণ্ডু তৈরি করা হতো। এই দেওয়াল ঘিরে কয়েকটি ধাপে সিঁড়ির মতো দেওয়াল দেওয়া হতো।  এই বেদীর উত্তর দিকে যাজকরা বসতেন। বেদীর দিন দিকে তিনটি অগ্নিস্থাপনের বিধি ছিল। এর পশ্চিমে থাকতো গার্হপত্য অগ্নি, পূর্বদিকে আহ্বনীয় অগ্নি এবং দক্ষিণে থাকতো দক্ষিণাগ্নি।  এর ভিতর গার্হপত্য অগ্নিকে যজমানের প্রতিনিধি-রূপে কল্পিত হত। আর আহ্বনীয় অগ্নি ছিল দেবতাদের জন্য। অবশিষ্ট দক্ষিণাগ্নি ছিল পিতৃগণের জন্য।

 

শমীবৃক্ষে পরগাছার মতো যে সকল অশ্বত্থ গাছের চারা জন্মাতো, তারই কাঠ দিয়ে যজ্ঞের অরণি তৈরি করা হতো। অরণিদ্বয়ের ঘর্ষণে অগ্নি উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বলা হতো অগ্নিমন্থন। যজ্ঞের জন্য অগ্নিমন্থনের আগে একটি ঘোড়া এনে রাখা হতো নিয়ম অনুসারে। যজমান একটি অরণি হাতে নিয়ে বসতেন। অপর অরণি প্রথমে যজমানের পত্নী। এরপর অর্ধ্বর্যু (যজুর্বেদী ব্রাহ্মণ) যজমান পত্নীর কাছ থেকে অরণি নিয়ে যজমানের সাথে অরণিদ্বয়ের ঘর্ষণ করতেন। এই সময় যজমান পত্মী একটি মাটির পাত্রে গোবরের খুঁটি নিয়ে আগুন গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করতেন। আগুন ঘুঁটেতে গ্রহণ করার পর, যজমান ফুঁ দিয়ে আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করতেন। এই আগুন দিয়ে অর্ধ্বর্যু গার্হপত্য অগ্নি জ্বালাতেন। এই সময় প্রধান যাজক সামগান করতেন। এরপর গার্হপত্য অগ্নি থেকে আহ্বনীয় অগ্নি ও দক্ষিণাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতেন। এই তিনটি স্থানে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের পর, প্রধান যাজক তিনবার সামগান গাইতেন।

 

অগ্নিকে বলা হয় দেবতাদের মুখ। অগ্নিমুখে দেবতারা যজ্ঞভাগ গ্রহণ করতেন।

 

যজ্ঞের বর্ণানুক্রমিক তালিকা

অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ, আয়ুষ্টোম, ইষ্টিযজ্ঞ, গোষ্টম,  জ্যোতিষ্টোম, দেবযজ্ঞ, পুত্রেষ্টি, পিতৃযজ্ঞ, ভূতযজ্ঞ, মনুষ্যযজ্ঞ, ব্রহ্মযজ্ঞ, রাজসূয়যজ্ঞ।


. হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে রুচির ঔরসে সায়ম্ভুব মনুর অন্যতমা কন্যা কাকুতি'র গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেন ইনি তাঁর আপন বোন দক্ষিণাকে বিবাহ করেছিলেন এঁর ঔরসে এবং দক্ষিণার গর্ভে যম নামে খ্যাত ১২টি পুত্র জন্মে