আলো
ইংরেজি :
light
সাধারণভাবে আলো
বলতে বুঝায় দৃশ্যমান আলো (Visible
light)। এই বিচারে—
আলো হচ্ছে এমন একপ্রকার বিদ্যুৎচুম্বকীয় বিকীর্ণ শক্তি বা ক্ষুদ্র কণা, যা মানুষের চোখ শনাক্ত করতে
পারে। কিন্তু মানুষ তার দৃষ্টি ক্ষমতা দিয়ে সকল আলো শনাক্ত করতে পারে না। এই বিচারে
আলোকে বলা যায় দৃশ্য বা অদৃশ্য শক্তি বিশেষ। এই শক্তির মৌলিক কণা হলো ফোটন।
বস্তুজগতের বিচারে এই কণার অস্তিত্ব আছে কিন্তু ভর নেই। পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে,
ফোটনে
হিগস বোসন কণা
থাকে না বলে, ফোটনের কোনো ভর নেই। এই
কণার ঘূর্ণ ১। আবার এই কণা বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের বাহক হিসেবে যখন তরঙ্গাকারে
প্রবাহিত হয়, তখন তা আলো হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নিউটোনীয় সূত্রানুসারে- আলো একটি তরঙ্গমাত্র। এই তরঙ্গ মাধ্যাকর্ষণকে অগ্রাহ্য
করে চলতে পারে, এই কারণে আলোর গতি অসীম। কিন্তু কোয়ান্টাম বল বিদ্যায় বলা হয়- আলো এক ধরনের ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। এই কণার নাম ফোটন। এই তত্ত্ব অনুসারে
আলো মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা আকর্ষিত হয়। এর সুনির্দিষ্ট গতি আছে। এই গতি প্রতি
সেকেন্ডে প্রায় ৩,০০,০০০
কিলোমিটার।
কোয়ান্টম তত্ত্বে বলা হয়- আলো
হলো শক্তির বিকিরণ। এই বিকিরণ নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘটে না। এই নিঃসরণ শক্তির একটি অতি
ক্ষুদ্রাংশের গুণীতক হিসেবে প্যাকেট আকারে বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে। শক্তির এই প্যাকেট বা
কোয়ান্টামকে ফোটন বলে।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মতে- কোনো কিছুর গতি আলোর চেয়ে বেশি হতে পারে না।
কিন্তু কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন- কোনো কোনো ফোটনের সামান্য ভর থাকে। তা
যদি হয়, তাহলে সকল ফোটনই আলোর সমান গতি লাভ করতে পারবে না। আবার
ভরহীন ফোটনের জীবনকাল অসীম ধরা হয়। কিন্তু ভরযুক্ত ফোটনের একটি দীর্ঘজীবন থাকবে।
ফোটনের যদি ভর থাকে, তাহলে এর ভরবেগও থাকবে। কিন্তু এর প্রবল গতির কারণে ভরবেগ
শূন্য দশায় পৌঁছায়।
আধুনিক বিজ্ঞানীরা আলোর সুনির্দিষ্ট গতিকে স্বীকার করেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুসারে। আবার এর তরঙ্গ নিরূপণ করে, নিউটনীয় তরঙ্গতত্ত্বকেও শিকার করে নেন। তরঙ্গ অনুসারে আলোর নানা ধরনের ভৌত গুণাগুণ সৃষ্টি কর। যেমন, মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি দিয়ে যে আলোকে শনাক্ত করতে পারে, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২৮০ থেকে ৭৪০ ন্যানোমিটার। আলো আড় বা তীর্যক তরঙ্গের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। স্বচ্ছ বা সমসত্ত্ব মাধ্যমে আলো সরলপথে এবং সম গতিতে চলে। শূন্যস্থানে আলোর গতি আলো যখন একটি মাধ্যম থেকে যাত্রা করে অন্য মাধ্যমে পৌঁছায় তখন কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন—
১. যদি দ্বিতীয় মাধ্যম স্বচ্ছ হয়, তাহলে আলোর গতিপথ পরিবর্তন হবে। একে বলা হয় আলোর প্রতিসরণ।
২. যদি দ্বিতীয় মাধ্যম অল্প স্বচ্ছ হয়, তবে দ্বিতীয় মাধ্যম মোট প্রবাহিত আলোর কিছু অংশ দিক পরিবর্তন করে সরল পথে অগ্রসর হয়ে। কিছু আলো দ্বিতীয় মাধ্যম দ্বারা শোষিত হবে, কিছু আলো দ্বিতীয় মাধ্যম থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসবে। আবার যখন কোনো মাধ্যম দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আলো আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসে তখন তাকে বলা হয়, আলোর প্রতিফলন।৩. আলো কোনো বস্তুর উপর পতিত হয়ে যদি প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে এবং যখন তা আমাদের দৃষ্টি শক্তি শনাক্ত করতে পারে, তখন আমরা আলোর পরিবর্তে ওই বস্তুটি দেখি। এই দেখাটা সরাসরি বস্তুর অবস্থান অনুসারে দেখা যায়। কিন্তু কখনো কখনো বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো অন্য কোনো বিন্দুতে মিলিত হয় এবং আমরা যখন ওই দ্বিতীয় স্থান থেকে আগত আলো দেখি, তখন বস্তুর প্রকৃত অবস্থানে না দেখে অন্য স্থানে দেখি। আয়নার ভিতর দিয়ে নিজেকে বা অন্য বস্তুকে দেখি। যথাস্থানে বস্তু দেখার পরিবর্তে যখন বস্তুকে অন্য বিন্দুতে দেখা যায় তখন তাকে প্রতিবিম্ব বলা হয়।
পদার্থের ক্ষুদ্র অংশকে যেমন পরমাণু বলে, সাধারণভাবে বলা যায় কোনো বিকিরণের ক্ষুদ্র
অংশকে ফোটন বলে।
ফোটন আলোর বেগে প্রবাহিত হয়। ফোটনের স্থিতি ভর শূন্য। এবং প্রতিটি ফোটনের নির্দিষ্ট
শক্তি এবং নির্দিষ্ট রৈখিক ভরবেগ রয়েছে। ফোটন তড়িৎ নিরপেক্ষ। ফোটনের কণা-তরঙ্গ দ্বৈতরূপ আছে।
যদি একটি ফোটনের কম্পাঙ্ক f হলে তার শক্তি E= hf
আলো যখন তরঙ্গাকারে চলে, তখন নির্দিষ্ট মানের কম্পাঙ্কের সৃষ্টি করে।
যে আলোর কম্পাঙ্ক যত বেশি, তার শক্তিও তত বেশি।
কোনো বিশেষ কম্পাঙ্কের আলোক তরঙ্গ যখন কোনো বস্তুর পরমাণুতে আঘাত করে, তখন ওই
পরমাণু ফোটনের সবটুকু শক্তি শুষে নেয়। এর ফলে পরমাণুর ভিতরে যে শক্তির সৃষ্টি হয়,
তার প্রভাবে ইলেক্ট্রনের কক্ষচ্যুতি ঘটবে। বাকি শক্তিটুকুও পড়ে থাকবে না পরমাণুর ভেতরে। ইলেকট্রনকেও তো গতি অর্জন করতে হবে।
সেই গতিশক্তি সে পাবে কোথায়? ফোটন থেকে শোষণ করা বাকি শক্তিটুকু পরমাণু থেকে গ্রহণ
করবে ইলেক্ট্রন। গতিপ্রাপ্ত হয়ে ছুটে বেরিয়ে যাবে পরমাণু থেকে। যে আলোর কম্পাঙ্ক মত
বেশি। সেই আলোর ফোটনের শক্তিও তত বেশি। সুতরাং খুব দুর্বল শক্তির ফোটন আঘাত করলে
ইলেক্ট্রন পরমাণু থেকে আলগা হয়ে বেরিয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু ছুটে বেশি দূর যেতে পারবে
না। একেবারে দুর্বল শক্তির ফোটন, ধরা যাক অবলোহিত আলোর ফোটন পরমাণুতে আঘাত করল।
তাতে ইলেক্ট্রনের বন্ধন নড়বড়ে হবে কিন্তু ইলেকট্রনকে গতিশীল করতে পারবে না। তাই
দুর্বল আলোর ক্ষমতা নেই আলোক-তড়িৎক্রিয়া ঘটানোর।
বর্ণালি (spectrum)
বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একাধিক বর্ণের আলোকরশ্মির সমাহারকে বর্ণালি বলা হয়।
দৃশ্যামান বর্ণালি সারণী | ||
---|---|---|
|
||
রঙ | কম্পাঙ্ক | তরঙ্গদৈর্ঘ্য |
বেগুনি | ৬৬৮-৭৮৯টেরাহার্জ | ৩৮০-৪৫০ ন্যানোমিটার |
নীল | ৬০৬-৬৬৮টেরাহার্জ | ৪৫০-৪৯৫ ন্যানোমিটার |
সবুজ | ৫২৬-৬০৬ টেরাহার্জ | ৪৯৫-৫৭০ ন্যানোমিটার |
হলুদ | ৫০৮-৫২৬ টেরাহার্জ | ৫৭০-৫৯০ ন্যানোমিটার |
কমলা | ৪৮৪-৫০৮টেরাহার্জ | ৫৯০ -৬২০ ন্যানোমিটার |
লাল | ৪০০-৪৮৪ টেরাহার্জ | ৬২০-৭৫০ ন্যানোমিটার |
পরমাণুর ইলেক্ট্রন এক স্তর থেকে অন্যস্তরে স্থানান্তরের সময় আলোকরশ্মি হিসাবে শক্তি শোষিত বা বিকিরিত হয়। এর ফলে এর ফলে বর্ণালি র সৃষ্টি হয়। শক্তি শোষিত হওয়ার জন্য সৃষ্ট বর্ণালি কে বলা হয় অনুজ্জ্বল বর্ণালি (dark spectrum) বা শোষিত বর্ণালি (absorption spectrum) । পক্ষান্তরে শক্তি বিকিরিত হওয়ার জন্য সৃষ্ট বর্ণালি কে বলা হয় বিকিরণ বর্ণালি (emission spectrum) বা উজ্জ্বল বর্ণালি (hight spectrum)।
সকল ধরনের
বর্ণালি মানুষ শনাক্ত করতে পারে না। মানুষের যে সকল তড়িৎ-চুম্বকীয়
বর্ণালি
দেখতে পারে তাদেরকে বলা হয় দৃশ্যমান বর্ণালি (visibale
spectrum)।
উল্লেখ্য মানুষের চোখ ৭৯০ টেরাহার্জ থেকে ৪০০
টেরাহার্জ কম্পাঙ্ক এবং ৩৮০ থেকে ৭৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সাড়া দেয়।
মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণী এর বাইরের রঙ দেখতে পারে। যেমন—
মৌমাছি, অনেক পাখি অতিবেগুনী আলো দেখতে পারে।
রঙ
(colour, color)
দৃশ্যমান বর্ণালি
সারণীতে আমরা যে রঙের নমুনা পাই, তার সবই আমরা কোনো বস্তুর রঙ হিসাবে দেখতে পারি।
কোনো বস্তু দেখার জন্য প্রয়োজন তিনটি মৌলিক উপাদান। এই তিনটি বিষয় হলো—
১. যে
বস্তুটি দেখা হবে তার উপস্থিতি
২.
দেখার জন্য আদর্শ দৃষ্টিশক্তি
৩.
দেখার উপযোগী পর্যাপ্ত আলো
প্রথম দুটি শর্ত পূরিত হলে তৃতীয় শর্তটি বিবেচনায় আসবে।
রঙের প্রকৃতি নির্ভর করে আলো
এবং বস্তুর প্রকৃতির
উপর। একটি আপতিত আলো কোনো সুনির্দিষ্ট রঙের হতে পারে।
দৃশ্যমান আলোর আদর্শ রূপ হলো- দৃশ্যমান বর্ণালি র সকল সদস্য মিলে যে আলো তৈরি করে,
তার মিশ্র রূপ। এই বিচারে সূর্যের আলোকেই আদর্শ আলো হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের
দর্শনেন্দ্রিয়ের বিচারে এর নাম সাদা।
কোনো বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে— চোখে এসে পড়লে, তখন উক্ত বস্তু দেখা যায়। আর একটি আদর্শ আলো কোনো বস্তু দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লে, তখন ওই বস্তু যে রঙে দেখাবে, তাই হবে ওই বস্তুর রঙ। অর্থাৎ বস্তুর রঙই হলো— প্রতিফলিত আলোর রঙ। প্রকৃতিতে আমার বিভিন্ন বস্তু বিভিন্ন রঙে দেখি, এর মূলে রয়েছে বস্তুর নিজস্ব ধর্ম। প্রতিটি দৃশ্যমান বস্তুর আলো প্রতিফলন ও শোষণের ক্ষমতা আছে। যখন একটি আদর্শ আলোর কিছু রঙকে কোনো বস্তু শোষণ করে এবং কিছু রঙকে প্রতিফলিত করে এবং ওই প্রতিফলিত রঙ যখন আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ে অনুভূতি জাগায়, তখন প্রতিফলিত রঙের বিচারে আমরা বস্তুকে ওই রঙে দেখে থাকি। ধরা যাক, একটি বস্তু একটি আদর্শ আলোর নীল রঙ ছাড়া বাকি সকল রঙ শোষণ করছে। এক্ষেত্রে নীল আলো উক্ত বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে চোখে এসে পড়বে। সে কারণে উক্ত বস্তুকে নীল রঙ হিসাবে দেখা যাবে। কোনো রঙই যখন প্রতিফলিত হয় না, তখন তার রঙ হয় কালো। আর সকল রঙের প্রতিফলনে যে অনুভূতির তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সাদা।
মূল লাল =FF0000 |
পরিবর্তিত লাল=FE0000 | আরও একটু পরিবর্তিত লাল=FD0000 |
মানুষ তার দর্শনেন্দ্রিয়ের ক্ষমতার দিয়ে যত রঙ দেখে, তার সবগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে নামকরণ করতে পারে না। রঙের সামান্য হেরফের চোখ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত কাছাকাছি দুটি রঙের পার্থক্য মানুষ বুঝতে পারে না। পাশের চিত্রে কাছাকাছি মানের লাল রঙের তিনটি নুমনা দেখানো হলো।
চোখের দেখায় যে সকল রঙকে একই রঙ মনে হয়, বর্ণালি বিশ্লেষণে তা এক নয়। এমন কি একই রঙ ছাপনো কাপড় বা কাগজের রঙ সর্বত্র একই মানের নাও হতে পারে। তারপরেও মানুষ বহু রঙকে আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করে থাকে। চোখের দেখায় মানুষ মূলত একটি রঙের গড় মানকেই বিচার থাকে। বিভিন্ন ভাষায় এই সকল রঙকে নানা রকম নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণভাবে লাল, সবুজ, হলুদ, নীল ইত্যাদি নামে রঙের নামকরণ করার পাশাপাশি কোনো বস্তুর রঙের সাথে তুলনা করে রঙের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- কাঠ রঙ, জলপাই রঙ, সোনালি রঙ ইত্যাদি।
রঙচক্র
(colour
wheel)
বর্ণালি অনুসারে
রঙের ক্রম পরিবর্তনের ধারায় যত রঙ পাওয়া যায়, এদের খুব কাছাকাছি রঙ মানুষ আলাদা করে
শনাক্ত করতে পারে না। কিন্তু এই ধারায় অনেকখানি দূরত্ব পেরিয়ে মানুষ আলাদা আলাদা রঙ
হিসেবে শনাক্ত করতে। অবশ্য কিছু কিছু বর্ণান্ধ মানুষ অনেক রঙকে দেখতেই পায়
না। মানুষের দেখার গড় মান অনুসারে রঙের ক্রম পরিবর্তনের ধারাকে চক্রাকারে সাজালে
রঙচক্র পাওয়া যায়। রঙ চক্রে সমদূরত্বে ৩টি রঙ পাওয়া যায়। এই রঙ তিনটি হলো নীল, হলুদ
ও লাল। এই কারণে এই তিনটি রঙকে বলা হয় প্রাথমিক রঙ। বাকি সকল রঙকে বলা হয় মিশ্র রঙ।
হলুদ আর নীল রঙ মিলে তৈরি হয় সবুজ রঙ। অন্যদিকে লাল আর হলুদ মিলে তৈরি হয় কমলা।
রঙিন টেলিভিশনে মৌলিক রঙ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তিনটি রঙকে। এই রঙ তিনটি হলো লাল-সবুজ-নীল [RGB (Red-Green-Blue)]। এইমান বিচার করা হয় ২৫৬টি গাণিতিক মানে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানটি হলো—২৫৫, আর সর্বনিম্ন মান হলো ০। ষোড়শাঙ্কিক (Hexadecimal) মানে এই সঙ্কেত ধরা হয়, যথাক্রমে 0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 A B C D F। প্রতিটি রঙের জন্য মোট ৬ অঙ্কের মান ব্যবহার করা হয়। এর ভিতর ৩ জোড়া অঙ্ক ব্যবহার করা হয়, মৌলিক রঙের জন্য। এক্ষেত্রে রঙের সর্বোচ্চ মান ধরা হয় FF। রঙের শূন্যতা অর্থে ব্যবহার করা হয় 00। এক্ষেত্রেও RGB (Red-Green-Blue) সূত্রই অনুসরণ করা হয়। দেখুন : [রঙের সঙ্কেত ও রঙের মান]
রঙের মনস্তাত্ত্বিক
বিশ্লেষণ
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে রঙকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ ৩টি হলো−
উষ্ণরঙ: রঙচক্রের হলুদ থেকে থেকে লাল পর্যন্ত পর্যন্ত সকল রঙকে উষ্ণ রঙ বলা হয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে লাল। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশ বড়। এই কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাছে নিয়ে আসে এবং বড় দেখায়। এর ফলে মনে উদ্দীপনা ও উত্তাপের সৃষ্টি করে। এই কারণে একে উষ্ণ রঙ বলা হয়। মনে সাহস সঞ্চারে লাল রঙ বিশেষ ভূমিকা রাখে। উত্তেজনা সৃষ্টিতে লালকে ব্যবহার করা যায়। লাল থেকে হলুদ পর্যন্ত কমবেশি এই ভাব বজায় থাকে। তবে লাল থেকে রঙটা নীলের বিপরীত দিকে যতটা অগ্রসর হয়, তাতটাই লালের সামগ্রিক প্রভাব কমতে থাকে।এই শ্রেণির অন্যান্য রঙগুলোকে যেভাবে বিচার করা হয়, তা হলো−
লালচে কমলা: উষ্ণ, অগ্রগামী, সাহসী এবং শক্তিশালী
কমলা: উষ্ণ, প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ, এবং উৎফুল্লপূর্ণ
হলুদাভ কমলা: উষ্ণ, প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ এবং প্রফুল্ল
হলুদ: উষ্ণ,
প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ, সুখদায়ক, বন্ধত্বপূর্ণ এবং প্রফুল্ল
শীতল রঙ: রঙচক্রের
বেগুনি থেকে সবুজ পর্যন্ত সকল রঙকে শীতল রঙ বলা হয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে নীল। এর
তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত ছোট। এই কারণে এই রঙ বস্তুকে দূরবর্তী করে তোলে এবং
আকারে ছোটো করে। এই উভয় বৈশিষ্ট্যের ভিতর দিয়ে এই রঙ মনে শান্তভাব জাগিয়ে তোলে।
ফলে মন সংযত হয়। ধ্যানের জন্য নীল রঙ মনের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। নীলরঙ মনে
রহস্যময়তারও সৃষ্টি করে।
নীলের উভয় পাশ্বের দুটি রঙ-এ এর প্রভাব থাকে। তবে তাতে হেরফের থাকে। এই
শ্রেণির অন্যান্য রঙগুলোকে যেভাবে বিচার করা হয়, তা হলো−
নীলচে বেগুনি: শীতল, পরিপক্ব, শান্ত ও রক্ষণশীল
বেগুনি: শীতল, মর্যাদাপূর্ণ, রহস্যময়, অবসাদপূর্ণ
নীলচে সবুজ: শীতল, শান্ত, আনন্দময় এবং সংযত
সবুজ:
শীতল, শান্ত, আনন্দময়, বন্ধুত্বপূর্ণ
এবং সংযত
মিশ্রভাবাপন্ন রঙ:
উষ্ণ এবং শীতল রঙের মধ্যবর্তী দুটি রঙকে মিশ্রভাবাপন্ন রঙ বলা যায়। এই দুটি রঙ
হলো হলুদাভ সবুজ এবং লালচে বেগুনি। এর ভিতরে লালচে বেগুনি রঙ নীল থেকে বেশি
দূরে এবং লালের নিকটবর্তী হওয়ায় উষ্ণতার প্রভাব বেশি থেকে। কিন্তু নীলভাব থাকার
কারণে এই উষ্ণতা তীব্রতর হয়ে উঠে না। এতে লালের উত্তেজনা থাকে আবার নীলের
রহস্যময়তাও থাকে। উভয় মিলে রঙটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
হলুদাভ সবুজ রঙটি লাল থেকে বহু দূরে। সেই তুলনায় এই রঙটি নীলের কাছে অবস্থিত।
এই রঙে নীলের প্রভাব না থাকলেও সবুজের প্রভাব থাকে, ফলে এটি প্রশমিত উষ্ণ রঙে
পরিণত হয়। এই রঙটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক। সবুজের প্রভাবে এই রঙে
শান্তভাব থাকে।
রেখা ও রঙ ছবির ছন্দের মূল উপাদান। সচল দৃশ্যের গতি বোঝা যায়, তার চলনের মধ্য দিয়ে। মন না চাইলেই বলতেই হয়, দৃশ্যটির ভিতরে গতি আছে। কিন্তু অচল দৃশ্যের গতি লুকিয়ে থাকে। গতির কারণেই দৃশ্য থাকে অচল, কিন্তু মন থাকে গতিময়। চোখের দেখার গতির স্থিরচিত্রের লুকানো গতি ক্রিয়াশীল থাকে।