পত্রিকা
সময়
ভিত্তিক পত্রিকা বিষয় ভিত্তিক পত্রিকা |
||
সংবাদপত্র সংবাদ পত্রের ইতিহাস ম্যাগাজিন তথ্য ও গবেষণামূলক সাময়িকী |
||
পত্রিকার
মাধ্যম বাংলা পত্রিকার ইতিহাস ও কালানুক্রমিক সূচি |
||
বাংলা পত্রিকার বর্ণানুক্রমিক সূচি |
কত সময় পর পর
পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে পত্রিকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
দৈনিক
পত্রিকা : প্রতিদিন নিয়মিতভাবে
(দু-এক দিন বিশেষ ছুটির ছাড়া)
প্রকাশিত হয়। এই জাতীয়
পত্রিকা প্রতিদিন (দু-এক দিন বিশেষ ছুটির ছাড়া)
প্রকাশিত
হয়। দৈনিক পত্রিকা সাধারণভাবে সংবাদপত্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই
জাতীয় পত্রিকার উদ্দেশ্যই থাকে চলমান ঘটনা প্রকাশ। এই কারণে দৈনিক পত্রিকা
এবং সংবাদপত্র প্রায় সমার্থক শব্দরূপ লাভ করেছে। কারণ 'দৈনিক পত্রিকা'
বলতেই সংবাদপত্র ভাবটাই মনে প্রথম আসে, আবার 'সংবাদপত্র' বলতেই দৈনিক
পত্রিকাটির ভাবটি মনে আসে।
সাপ্তাহিক পত্রিকা : প্রতি সপ্তাহের সুনির্দিষ্ট কোনো দিনে প্রকাশিত হয়। |
যে কোনো পত্রিকা প্রকাশের পিছনে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। এই বিচারে পত্রিকা বহু রকম হতে পারে। যেমন- সংবাদপত্র, সাহিত্য পত্রিকা, বিজ্ঞান-বিষয়ক পত্রিকা, রাজনৈতিক মুখপত্র, কৃষি বিষয়ক পত্রিকা, ভাষা-ভিত্তিক পত্রিকা, কম্পিউটার-বিষয়ক পত্রিকা ইত্যাদি।
সাধারণভাবে পত্রিকার বিষয় অনুসারে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ তিনটি হলো—
সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন
এবং তথ্য
ও গবেষণামূলক সাময়িকী
সংবাদপত্র : মূলত পত্রিকার জগতের রাজা হলো দৈনিক প্রকাশিত সংবাদপত্র। একটি দেশের সমৃদ্ধশালী সংবাদপত্র হলো ওই দেশের দিনপঞ্জি এবং আন্তর্জাতিক তথ্য-প্রবাহের প্রবেশ দ্বার। এই জাতীয় পত্রিকা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ পড়ে। লোকবল এবং আয়োজনের বিচারে দৈনিক সংবাদপত্রের ব্যবস্থপনা একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তূল্য এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং চর্চার বিচারে একটি উন্মুক্ত এবং চলমান শিক্ষালয়। নানাবিধ সংবাদের পাশাপাশি সংবাদপত্রে থাকে নানা-বিষয়ক প্রতিবেদন, সমালোচনা, চিঠিপত্র, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয়, বিজ্ঞাপন (বাণিজ্যিক কারণে হলেও বিজ্ঞাপনকেও তথ্য-সংবাদ হিসাবে বিবেচনা করা যায়), নানাবিধ বিজ্ঞপ্তি। দৈনিক প্রকাশিত সংবাদপত্রের সূত্রে গড়ে উঠেছে সংবাদ মাধ্যমের বিশাল জগৎ। স্যাটেলাইট ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানলে সংবাদ পরিবশেন শুরু পূর্বকাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদপত্র সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমে একমাত্র দাবিদার ছিল। অনেক দেশের স্বৈরাচারী সংবাদপত্রকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতো। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বা জনস্বার্থে দৈনিক সংবাদ পত্রিকা কখনোই পূর্ণ স্বাধীনতা পায় না। এক সময় সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো কাগজে। বলতে দ্বিধা নেই, অত্যন্ত মূল্যবান এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়, পত্রিকা জগতের সবচেয়ে কমদামি কাগজে। এর প্রধান কারণ অর্থ-সাশ্রয়। যথাসম্ভব কম দামে পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই কমদামি কাগজের দিকে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের নজর দিতে হয়। ম্যাগাজিন |
|
তথ্য ও গবেষণামূলক সাময়িকী সমকালীন ভাবনাচিন্তা-প্রধান পত্রিকা। এই জাতীয় পত্রিকগুলোর প্রকৃতি হয়ে থাকে অনেকটা গবেষণাধর্মী। কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বিশেষের তত্ত্বাধানে এই জাতীয় পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে থাকে। বিষয়ানুসারে এই জাতীয় পত্রিকা সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমস্থানীয় একাধিক বিষয় নিয়ে পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন ছায়ানট কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকা 'বাংলা দেশের হৃদয় হতে'। |
সংবাদ পত্রের ইতিহাস
সরকারি ঘোষণা প্রকাশের বিচারে প্রথম দিকে, সরকারি লোক ঢোল জাতীয় বাদ্যযন্ত্র
বাজিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি করতো পরে সরাকরি ঘোষণা উচ্চস্বরে ঘোষণা করতো। প্রাচীন
রোমে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ঘোষণাগুলো পাথরে বা ধাতব ফলকে খোদিত করে জনসমাগম হয় এমন
স্থানে স্থাপন করতো। খ্রিষ্টপূর্ব ২০৬ অব্দ থেকে ২২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চীনের হান
রাজবংশের আমলে প্রথম আদালত প্রাঙ্গনে সংবাদ প্রকাশ করার ব্যবস্থা চালু করেছিল। একে
বলা হতো তাইপো (ইংরেজি Tipao,
চীনা 邸报)।
কাঠের ফলকে খোদিত এই ফলকে থাকতো সরকারি ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় সংবাদ। এই ফলক দেখার
অধিকার ছিল উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী এবং অভিজাত ব্যক্তিবর্গ। সাধারণ মানুষদের
কাছে তখন সরকারি ঘোষণা প্রকাশিত হতো মুখে মুখে কিছু ফলকের মাধ্যমে। অপেক্ষাকৃত কম
গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ কাঠের ফলকে রং তুলিতে লিখে প্রকাশ করা হতো। খ্রিষ্টীয় অষ্টম
শতাব্দীতে তাং রাজবংশের আমলে পিকিং গেজেট প্রকাশিত হতো। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
এই গেজেট প্রতিদিন প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকাটি চীনা ভাষায় বলা হতো জিং বাও ((京报)।
এর আক্ষরিক অর্থ ছিলো- রাজাধানীর সংবাদ। তবে আধুনিক সংবাদপত্রের বিচারে একে যথার্থ
সংবাদপত্র ছিল না। কারণ এতে সাধারণ মানুষের জন্য নির্দেশাবলি এবং সরকারি সংবাদ
প্রকাশিত হতো মাত্র। সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন বা সাধারণ মানুষের সংবাদ এতে
স্থান পেতো না।
![]() |
১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien- পত্রিকা |
১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে
জার্মান সাম্রাজ্যের (পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য)
স্ট্রাবার্গ (Straßburg)
থেকে প্রকাশিত হয় কাগজে মুদ্রিত একটি পত্রিকা। জার্মান ভাষায় লিখিত এই পত্রিকার নাম
ছিল- পত্রিকা Relation
aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien।
এটিই ছিল প্রথম ইউরোপ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা। এর প্রকাশক ছিলেন জন কার্লোস (Johann
Carolus (1575−1634)।
ইউরোপীয় গবেষকবৃন্দ এবং ইউরোপীয় ভাবধারায় পুষ্ট প্রতিষ্ঠান
World Association of Newspapers
অবশ্য চীন থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোকে যথার্থ বিবেচনা না করে, জার্মান ভাষায়
প্রকাশিত এই পত্রিকাকে পৃথিবীর প্রথম পত্রিকা হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপ (জার্মান
জার্মান সম্রাজ্যের Wolfenbütte)
থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের প্রাচীনতার বিচারে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জার্মান ভাষার
অপর একটি পত্রিকা Avisa
Relation oder Zeitung।
এই পত্রিকটি প্রকাশিত হয়েছিল- ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর আরও তিনটি জার্মান ভাষার
পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। নিচে ভাষাভিত্তিক প্রথম পত্রিকার তালিকা তুলে ধরা হলো।
সময়কাল | পত্রিকার নাম | ভাষা | স্থান |
খ্রিষ্টীয় অষ্টম অষ্টম শতাব্দী | জিং বাও ((京报) | চীনা | বেইজিং, চীন |
১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ | Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien | জার্মান | Straßburg
জার্মান সাম্রাজ্য |
১৬১৮ খ্রিষ্টাব্দ | Courante uyt Italien, Duytslandt, &c. | ডাচ |
আমস্টার্ডম নেদারল্যান্ড |
১৬৩১ খ্রিষ্টাব্দ | La Gazette | ফরাসি | প্যারিস, ফ্রান্স |
১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দ | Ordinari Post Tijdender | সুইডিশ | স্টকহোম, সুইডেন |
১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দ | Merkuriusz Polski Ordynaryjny | পোলিশ | ক্রাকোকৌ পোলিশ-লিথুনিয়ান কমনওয়েল্থ |
১৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দ | Gazzetta di Mantova | ইতালিয়ান | মান্টুয়া, মান্টুয়া প্রদেশ |
১৬৬৫ খ্রিষ্টাব্দ | Oxford Gazette | ইংরেজি | অক্সফোর্ড ইংল্যান্ড |
১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দ | Berlingske Tidende | ড্যানিশ | কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক-নরওয়ে |
১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ | Adresseavisen | নরোজিয়ান | ট্রোনঢেইম, ডেনমার্ক-নরওয়ে |
১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দ | দিগ্দর্শন | বাংলা | কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত |
১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ | El Peruano | স্প্যানিশ | লিমা, পেরু |
১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ | Diario de Pernambuco | পোর্তুগিজ | রেসিফ, ব্রাজিল |
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দ | Chosen shinpo | জাপানি | পুসান, কোরিয়া |
১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ | Hanseong Jubo | কোরিয়ান | সিউল, কোরিয়া |
প্রকাশের মাধ্যম :
একসময় পত্রিকা বলতেই বুঝাতো কালির লেপনে কাগজে মুদ্রিত তথ্য-প্রকাশক মাধ্যম।
কম্পিউটার ভিত্তিক তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে 'শুধু কাগজে মুদ্রিত' ভাবনা
বাতিল হয়ে গেছে। প্রকাশের মাধ্যমের বিচারে পত্রিকা ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ ৩টি
হলো—
১.
কঠিন মাধ্যম পত্রিকা : এক্ষেত্রে তথ্যাবলি প্রকাশিত হবে কঠিন বস্তুর
উপর মুদ্রিত করে। এই মাধ্যম হতে পারে যে কোন ধরনের কাগজ, চামড়া, ধাতু।
সংজ্ঞার বিচারে এই কঠিন বস্তুর তালিকায় নানাবিধ দ্রব্য যুক্ত করা যেতে
পারে। বাস্তবে পত্রিকার সুলভ মাধ্যম হলো কাগজ। সাধারণত দৈনিক পত্রিকাগুলোতে
অপেক্ষাকৃত কম দামি কাগজ ব্যবহার করা হয়। আবার ফ্যাশান, চলচ্চিত্র,
কম্পিউটার ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত পত্রিকাতে দামি কাগজ ব্যবহার করা হয়।
অনেক সময় পত্রিকার নিয়মিত পাতার চেয়ে বিজ্ঞাপনের পাতার কাগজ দামি থাকে।
এই জাতীয় পত্রিকার
বিশেষ সংস্করণ হলো—
দেওয়াল পত্রিকা। সাধারণত সংঘ বা কোনো শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান,
এই পত্রিকার একটি মাত্র সংখ্যা শক্ত কাগজ বা বোর্ডের উপর তৈরি করে দেওয়ালে
সেঁট দেয়। মূলত এই পত্রিকা হাতে লিখে প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে অনেক
প্রতিষ্ঠান কম্পিউটারের মাধ্যমে একই সংখ্যা দু-তিনটি ছাপিয়ে একাধিক দেওয়ালে
সেঁটে দেয়। ৩. শ্রুতি পত্রিকা : এই জাতীয় পত্রিকার প্রধান ভিত্তি হলো শ্রবণ মাধ্যম। পৃথিবীর প্রথম শ্রুতি পত্রিকা সম্ভবত সঞ্জয় কর্তৃক কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ বর্ণনা। কথিত আছে, ব্যাসদেবের বরে সঞ্জয় দিব্যচক্ষুলাভ করেছিলেন। এই ক্ষমতা বলে, সঞ্জয় কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রতিদিনের সংবাদ অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে প্রকাশ করতেন। আধুনিক কালে অন্ধদের জন্য একধরনের ডিজিটাল পত্রিকা তৈরি করা হয়, যা কম্পিউটার পাঠ করে শোনায়। এক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন যে, এই পত্রিকা মূলত ডিজিটাল সংস্করণ কিন্তু তা কম্পিউটারের বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার দ্বারা পঠিত হয়ে শ্রোতার কানে পৌছায়। তাই এই জাতীয় পত্রিকাকে ডিজিটাল পত্রিকার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। অনেকে এই জাতীয় পত্রিকাকে মিশ্র মাধ্যম বলতে চান। কারণ, এই জাতীয় পত্রিকায় দর্শন এ্ববং শ্রবণ দুটি মাধ্যম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। |