বাংলা পত্রিকার ইতিহাস
    [বাংলা পত্রিকার বর্ণানুক্রমিক সূচি দেখুন]

পত্রিকা প্রকাশের কথা উঠলেও প্রথমে মনে উঠে আসে মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানার কথা। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ ধর্ম প্রচারকগণ ভারতের পশ্চিম উপকূলের গোয়া নগরে প্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। ১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম বোল্টস নামে জনৈক ইউরোপীয় কলকাতা থেকে একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করার জন্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোম্পানি সেই অনুমতি দেয় নি। সম্ভবত এই সময় কলকাতায় মুদ্রণযন্ত্র ছিল। তা না হলে বোল্টস সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্যোগ কীভাবে নিয়েছিলেন। তবে এই মুদ্রণযন্ত্র সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় স্থাপিত হয় ইংরেজি ভাষা প্রকাশের উপযোগী ছাপখানা। আর ভারতে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদ পত্র 'বেঙ্গল গেজেট' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি। এরপর প্রকাশিত হয়েছিল ইন্ডিয়া গেজেট, ক্যালকাটা গেজেট, হরকরা ইত্যাদি।

১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে পত্র-পত্রিকা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতো। এর ফলে অনেক সময় অত্যন্ত অশীলন শব্দচয়নে এবং অশীলন বিষয়াদি প্রকাশিত হতো। বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর চলাচলের গোপন সংবাদও পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। এই অবস্থা নিরসনের জন্য ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে লর্ড ওয়েলস্‌লি সংবাপত্রের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এই বিধি অনুসারে সে সময় থেকে, কোনো সচিব দ্বারা পরীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হতে পারতো না। এই নিয়মের ফলে পত্রিকার প্রবন্ধাদি থেকে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত পরীক্ষা করা হতো। এই বিধির ভিতরেই বাংলা পত্রিকার সূচনা হয়েছিল।

বাংলা প্রকাশনা ও বাংলা পত্রিকার প্রথম অধ্যায়
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে হুগলীর ‘শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস’ স্থাপিত হয়। এটি ছিল বাংলা ভাষার প্রথম ছাপাখানা। এই ছাপখানার উদ্যোক্তাতারা ছিলেন জোওয়া মার্শম্যান (১৭৬০-১৮৩৭),  উইলিয়াম কেরি (১৭৬১-১৮৩৪) ও উইলিয়াম ওয়ার্ড (১৭৬৯-১৮২১)। ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফোরিস কোম্পানি প্রেস স্থাপিত হয়। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় এই প্রেস থেকে প্রথম বাংলা মুদ্রিত বই অন্নদা মঙ্গল প্রকাশিত হয়।

প্রকাশকাল ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রকাশিত পত্রিকা:
দিগদর্শন, সমাচার দর্পণবাঙ্গাল গেজেটি


১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের লর্ড ওয়েলস্‌লি'র প্রবর্তিত  'সংবাদপত্র প্রকাশের বিধি' বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এই বিধিনিষেধকে প্রথম অগ্রাহ্য করেছিলেন বঙ্গদেশে জন্মগ্রহণকারী হিটলী নামক একজন ইংরেজ। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের তাঁর স্বত্বাধিকার এবং সম্পাদনায় প্রকাশিত 'মর্নিং পোস্ট' নামক পত্রিকায় বিধি লঙ্ঘন করেন। সংবাদপত্র পরীক্ষক ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের সংখ্যার কিছু অংশ ছাপাতে নিষেধ করেন। তিনি সে নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেই পুরো লেখাই ছাপিয়ে দেন। এ বিষয়ে সংবাদপত্র পরীক্ষককে তিনি জানিয়েছিলেন যে, যেহেতু তাঁর জন্ম বঙ্গদেশে এবং বঙ্গদেশ তাঁর মাতৃভূমি, তাই এই আদেশ লঙ্ঘন করলে তাঁর কোনো শাস্তি হবে না। কারণ সংবাদপত্রের এই বিধি ইউরোপীয় সম্পাদকের জন্য প্রণীত হয়েছে। সংবাদপত্র-বিষয়ক বিধিনিষেধের আইনি-ফাঁক থাকায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বেলি সাহেব গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসকে জানান। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট হেস্টিংস সংবাদপত্রের 'সেন্সর' পদ বিলুপ্ত করে কতকগুলো সাধারণ নিয়ম করে দেন। নতুন এই আইন প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বেই বাংলা ভাষার প্রথম মাসিক পত্রিকা 'দিগদর্শন' প্রকাশিত হয়েছিল। উল্লেখ্য এই পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে।

১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে মার্শম্যান-এর প্রচেষ্টায় হুগলীর শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রথম মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার নাম ছিল দিগদর্শনএকই বছর 'সমাচার দর্পণ' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এই পত্রিকাটি প্রকাশের সময়ে মিশনারিদের মধ্যে মতভেদ হয়েছিল। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরি পত্রিকা প্রকাশ করে সরকারের বিরাগভাজন হতে চান নি। পরে স্থির হয় যে, প্রথম সংখ্যাটির ইংরাজি অনুবাদ-সহ একখানি কপি সরকারকে পাঠান হবে এবং অনুমতি পেলে তবেই পত্রিকা প্রকাশ চালিয়ে যাওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে মার্শম্যান, ভাইস প্রেসিদেন্ত মিঃ এডমনস্টোন, চিফ সেক্রেটারি ও গভর্ণর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস-এদের প্রত্যেককে অনুবাদ-সহ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা পৌঁছে দেবার জন্য কলকাতায় রওনা হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস স্বহস্তে চিঠি লিখে মার্শম্যানকে এদেশে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর সঙ্কল্পে পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রশংসা করেন। এরপরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এই বছরে বাঙালি গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য কলকাতায় বাংলা মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। এ মুদ্রণযন্ত্রটির নাম ছিল ‘বাঙ্গালা গেজেট প্রেস’। তিনি হুগলীর শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে কম্পোজিটার হিসেবে কাজ শিখে কলকাতায় প্রেস স্থাপন করেন। ‘বাঙ্গাল গেজেট প্রেস’ থেকে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য 'বাঙ্গালা গেজেট' নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এ দিক থেকে বলা যায়, গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাঙালি পেশাদার সাংবাদিক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক। ভবানীচরণ ব্যানার্জী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখের লেখায় এর প্রকাশ ও অস্তিত্বের কথা জানা যায়। “ওরিয়েন্টাল স্টার” পত্রিকার সূত্রে জানা যায় বাঙ্গাল গেজেটি ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মে তারিখে পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধায়ের মতে, এই তারিখ ১৪ই মে থেকে ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে এবং এক বছর চলার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

প্রকাশকাল ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রকাশিত পত্রিকা: গস্‌পেল মাগাজীন

খ্রিষ্টীয় তত্ত্ববিষয়ক পত্রিকা 'গস্‌পেল মাগাজীন' প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। এই সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। বাংলা ভাষায় এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। পত্রিকাটির প্রকাশক ছিল- 'Baptist Auxiliary Missionary Society'

প্রকাশকাল: ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দ
প্রকাশিত পত্রিকা:
 ব্রাহ্মণ সেবধি ব্রাহ্মণ ও মিসিনরি সম্বাদসম্বাদ কৌমুদী

১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর, 'সমাচার দর্পণ' পত্রিকায়  “কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি দূর দেশ হইতে কয়েক প্রশ্ন সম্বলিত” শিরোনামে হিন্দু ধর্মের উপর আঘাত হেনে একটি পত্র ছাপা হয়। এর প্রতিবাদস্বরূপ রামমোহন রায় তাঁর গুরু শিবপ্রসাদ শর্মার নামে পত্রে প্রকাশিত প্রশ্নের জবাব ' সমাচার দর্পণ'-এ পাঠান। পত্রিকার সম্পাদক এই প্রতিবাদ কাটাছাট করে ছাপানোর মনোভাব ব্যক্ত করলে, রামমোহন রায় একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এই সূত্রে রামমোহন রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'Brahmunical Magazine. The Missionary and the Brahmun No. 1 ব্রাহ্মণ সেবধি ব্রাহ্মণ ও মিসিনরি সম্বাদ সং ১ 1821’ পত্রিকা। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে। এই বছরে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক 'সম্বাদ কৌমুদী'। পত্রিকার পরিচালনায় ছিলেন তারাচাঁদ দত্ত ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রকাশকাল: ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দ
প্রকাশিত পত্রিকা:
পশ্বাবলী, সমাচার চন্দ্রিকা, খ্রীষ্টের রাজ্যবৃদ্ধি'

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা স্কুলবুক সোসাইটি থেকে প্রাণীবিষয়ক পত্রিকা 'পশ্বাবলী' প্রকাশিত হয়। এর ২২টি সংখ্যা প্রকাশের পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এই বছরে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ছিল 'সমাচার চন্দ্রিকা'। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজা রামমোহন রায় যখন সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, সেই সময়ে রামমোহনের বিরোধিতা করার জন্য এই পত্রিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। মূলত এটা ছিল হিন্দু ধর্মসভার মুখপত্র। কত সংখ্যা প্রকাশের পর এই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তাঁর পুত্র রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় পত্রিকার সম্পাদক হন। কিন্তু রাজকৃষ্ণ বিভিন্নভাবে ঋণাগ্রস্ত হয়ে পড়লে, তিনি ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভগবতী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পত্রিকার স্বত্ব বিক্রি করে দেন।

১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হয় মাসিক 'খ্রীষ্টের রাজ্যবৃদ্ধি'। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো 'খ্রিষ্টধর্মের প্রচারের জন্য।

বাংলা পত্রিকার দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল ১৮২৩ বঙ্গাব্দের পত্রিকা আইনের সূত্রে। এর আগে বাংলা পত্রিকা প্রকাশক এবং সম্পাদকরা বেশ স্বাধীনভাবেই তাঁদের পত্রিকাগুলো প্রকাশ করতেন। এই সূত্রে ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৬টি বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো-দিগদর্শন, সমাচার দর্পণ, বাঙ্গাল গেজেটি, গস্‌পেল মাগাজীন, ব্রাহ্মণ সেবধি ব্রাহ্মণ ও মিসিনরি সম্বাদ সম্বাদ কৌমুদী, পশ্বাবলী, সমাচার চন্দ্রিকা, খ্রীষ্টের রাজ্যবৃদ্ধি

১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের 'পত্রিকা আইন' এর সূত্রে বাংলা ভাষার পত্রিকা-সহ, ভারতীয় সকল পত্রিকা একটি বিশেষ বিধি অনুসরণ করতে বাধ্য হয়।

পত্রিকা আইন ১৮২৩
১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে প্রকাশনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না। এই সময়ের ভিতরে সিল্ক বার্কিংহামের 'ক্যালকাটা জার্নাল'-এমন কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল যা, তাতে লর্ড হেস্টিং-এর প্রবর্তিত আইনের বিরুদ্ধে ছিল। এছাড়া ধর্ম বিষয়ক রচনা প্রকাশের ইংরেজ যাজকদের আপত্তি উঠেছিল প্রবলভাবে। এই প্রেক্ষিতে বড়োলাটের মন্ত্রণাসভায় সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর উইলিয়াম বাটারওয়ার্থ বেলি ইংরেজি, বাংলা, ফার্সি পত্রিকার বিষয়াবলি নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন।  এর ভিতরে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন সম্বাদ কৌমুদী' ও 'সমাচার চন্দ্রিকা' নিয়ে। তাঁর মতে এই দুটি পত্রিকায় ত্রিত্ববাদ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য প্রকাশ করা হয়। সভার অন্যান্য সভ্যদের আপত্তির কারণে, ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর, লর্ড হেস্টিংস সংবাদপত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ক্ষমতা প্রার্থনা করেন। এই প্রার্থনা অনুসারে ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা মার্চ একটি প্রেস-আইন তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হয়। এই বছরের ৪ঠা এপ্রিল সুপ্রিপ কোর্টের অনুমোদনে আইনটি বৈধতা পায়।

এই নতুন আইন অনুসারে, কোনো প্রকাশনা পরিচালনার আগে স্বত্বাধিকারী, মুদ্রাকর এবং প্রকাশককে সরকারে অনুমতি নিতে হবে এবং তা লাইসেন্স হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা পেশ করে, ওই হলফনামা গবর্মেন্ট চিফ সেক্রেটারির কাছে পাঠানোর পর, লাইসেন্স পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এই নতুন আইনে রাজা রামোহন রায়ের ফার্সি পত্রিকা 'মীরাৎ-উল্-আখ্‌বার' বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা
বাংলা পত্রিকার দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সম্বাদ তিমিরনাশক পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা পত্রিকা প্রকাশের প্রধান ক্ষেত্র ছিল কলকাতা। এর বাইরে ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল রংপুর থেকে 'রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ ' ও রঙ্গপুর দিকপ্রকাশ। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা পত্রিকা প্রকাশের অন্যতম স্থান লাভ করেছিল, তৎকালীন ঢাকা। এই ক্ষেত্রটি উন্মুক্ত হয়েছিল ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় স্থাপিত 'বাঙ্গালা যন্ত্র'।
উল্লেখ্য ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র ঢাকা নিউজ (ইংরেজি) প্রকাশের চার বছর পর এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। সম্ভবত: বাংলা ছাপাখানার অভাব এবং ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের সময় সংবাদপত্র দমন আইন জারি (গেগিং এ্যাক্ট) হয়। কিছুদিন পর এই এ্যাক্ট প্রত্যাহার এবং ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে  'বাঙ্গালা যন্ত্র' প্রেস প্রতিষ্ঠার সূত্রে বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। এই মুদ্রণযন্ত্র প্রকাশিত প্রথম সাহিত্য সাময়িকী হলো- কবিতা কসুমাবলী। পত্রিকাটি সম্পাদক ছিলেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। এই সাময়িকীটির প্রথম দিকে বার্ষিক মূল্য ছিল এক টাকা।

দেখুন:
বাংলা পত্রিকার কালানুক্রমিক সূচি
বাংলা পত্রিকার বর্ণানুক্রমিক সূচি


সূত্র: