|  | 
সমাচার 
								দর্পণ
								
								১৮১৮-১৮৪১
								বাংলা 
								ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র।  
								
								
								বাংলাভাষায় প্রথম প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা
								দিগদর্শন, 
								প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল 
								
								১৮১৮ 
								খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে। এই পত্রিকার সম্পাদক 
								ছিলেন
								
								জন ক্লার্ক মার্শম্যান। এই বছরের ২৩ 
								মে (শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১২২৫ বঙ্গাব্দ)  প্রকাশিত 
								হয় সাপ্তাহিক 'সমাচার দর্পণ'। এই পত্রিকার 
								উদ্দেশ্য ও প্রকাশের কারণ হিসেবে যে বিজ্ঞপ্তি 
								দেওয়া হয়েছিল, তা হলো-
								
								এই পত্রিকাটি প্রকাশের সময়ে মিশনারিদের মধ্যে 
								মতভেদ হয়েছিল। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরি পত্রিকা 
								প্রকাশ করে সরকারের বিরাগভাজন হতে চান নি। পরে 
								স্থির হয় যে, প্রথম সংখ্যাটির ইংরাজি অনুবাদ-সহ 
								একখানি কপি সরকারকে পাঠান হবে এবং অনুমতি পেলে 
								তবেই পত্রিকা প্রকাশ চালিয়ে যাওয়া হবে। সেই 
								সিদ্ধান্ত অনুসারে মার্শম্যান, ভাইস প্রেসিডেন্ট এডমনস্টোন, চিফ সেক্রেটারি ও গভর্ণর জেনারেল 
								
								ওয়ারেন হেস্টিংস-এদের প্রত্যেককে অনুবাদ-সহ পত্রিকার 
								প্রথম সংখ্যা পৌঁছে দেবার জন্য কলকাতায় রওনা হন। 
								লর্ড
								
								ওয়ারেন হেস্টিংস স্বহস্তে চিঠি লিখে 
								মার্শম্যানকে এদেশে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর 
								সঙ্কল্পে পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রশংসা করেন। 
								এরপরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ 
								করা হয়। 
                
								[পত্রিকাটির 
								প্রথম সংখ্যার প্রথম পাতার নমুনাচিত্র]
								
								যাঁরা বাংলা ভাষা জানতেন না, তাদের জন্য একটি 
								ফার্সি সংস্করণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৮২৬ 
								খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মে থেকে এই ফার্সি সংস্করণ 
								প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়, তবে এটি দীর্ঘকাল স্থায়ী 
								হয় নি। 
								
								১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জুলাই 
								থেকে 'সমাচার দর্পণ' ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় 
								প্রকাশিত হতে থাকে। সম্ভবত ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে 
								কলকাতায় 
								
								হিন্দু কলেজ  
								
								প্রতিষ্ঠিত হলে, দেশীয় লোকদের ইংরেজি শিক্ষার 
								প্রতি আগ্রহ জন্মে। 
								বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত তথ্যাদির চাহিদা বৃদ্ধির কারণে, ১৮৩২ 
												খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি থেকে 
												পত্রিকাটি শনিবার ছাড়াও প্রতি বুধবারও 
												প্রকাশিত হতে থাকে। এই 
												সময় পত্রিকার দাম ধার্য হয় মাসিক 
												দেড় টাকা। 
জন ক্লার্ক মার্শম্যান নামে মাত্র সম্পাদক ছিলেন। মূলত বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচারদর্পণ সম্পাদনা করতেন। কিন্তু দেশীয় পণ্ডিতদের দ্বারা সম্পাদন করে পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এমন কি দেশীয় পণ্ডিতদের ছাড়া পত্রিকাটি প্রকাশ করা অসম্ভব ছিল। বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যায় ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে। বিজ্ঞপ্তিটি ছিল−
“আমারদের পণ্ডিতগণ আগামি সোমবারপর্য্যন্ত স্ব ২ বাটী হইতে প্রত্যাগত হইবেন না অতএব এই কালের মধ্যে দর্পণে নূতন২ সম্বাদ প্রকাশ না হওয়াতে পাঠক মহাশয়েরা ত্রুটি মার্জ্জনা করিবেন।"
শুরুর দিকে সম্পাদকীয় বিভাগে ছিলেন পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলেজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, তিনি ওই কলেজে কাব্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর এই পত্রিকার সম্পাদনার সহযোগী হিসেবে যোগদান করেছিলেন পণ্ডিত তারিণীচরণ শিরোমণি। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তারিণীচরণের মৃত্যু হয়। এরপর পত্রিকাটির সম্পাদনায় সহযোগিতা কে করেছিলেন, তা জানা যায় না।
সংবাদপত্রের ডাকমাশুল বৃদ্ধির কারণে পত্রিকাটি আবার শনিবার-ভিত্তিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। নব পর্যায়ের সাপ্তাহিক 'সমাচার দর্পণ' প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই নভেম্বর শনিবার।এ বিষয়ে পত্রিকায় পাঠকদের উদ্দেশ্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি হলো−
“পাঠক মাহাশয়েরদিগকে অতিখেদপূর্ব্বক আমরা জ্ঞাপন করিতেছি যে ইহার পূর্ব্বে এতদ্দেশীয় সম্বাদপত্রে যে মাশুল নির্দ্দিষ্ট ছিল তাহা সম্প্রতি গবর্ণমেন্টের হুকুমক্রমে দ্বিগুণ হওয়াতে ইহার পর অবধিই আমারদের বুধবাসরীয় দর্পণ প্রকাশ রহিত করিতে হইল|”
												
												১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুলাই,
												
								জন ক্লার্ক মার্শম্যান-এর উপর 'গবর্মেন্ট 
												গেজেট' নামক একটি সাপ্তাহিক 
												পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ 
												করা হয়। এই কাজের জন্য
												
												মার্শম্যান ‘সমাচার দর্পণ’ 
												থেকে পদত্যাগ করেন। উপযুক্ত 
												সম্পাদক না পাওয়ায়, 
												‘সমাচার দর্পণ’- সাময়িকভাবে বন্ধ 
												হয়ে যায়। এই পর্যায়ে এর শেষ সংখ্যা 
												প্রকাশিত হয় ১৮৪১ সালের ২৫শে 
												ডিসেম্বর। 
												
												১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি 
												মাসে, রামগোপাল ঘোষ ও তাঁর কয়েকজন 
												বন্ধুর চেষ্টায় পত্রিকাটি পুনরায় 
												প্রকাশিত হয় ইংরিজি ও বাংলা 
												ভাষায়। ইংরিজি ও বাংলা উভয় ভাষার 
												সংস্করণের সম্পাদক ছিলেন 
												ভগবতীচরণ চট্টোপাধ্যায়। এই 
												পর্যায়ের ‘সমাচার দর্পণ’ ১৮৪৩ 
												খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাস 
												সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছিল।
												
												
												এরপরে শ্রীরামপুর মিশন পত্রিকাটি 
												পুনরায় প্রকাশ করবার ব্যবস্থা 
												করে। এই পর্যায়ে ১৮৫১ 
												খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে, শনিবার 
												থেকে এর প্রকাশনা শুরু হয়। বছর 
												দেড়েক এটি চলেছিল। পরে পত্রিকাটি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। 
										
								
সূত্র :