মার্শম্যান, জন ক্লার্ক
(১৭৯৪-১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দ)
মিশনারি, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক।

১৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেড ব্রিটেনের ব্রিষ্টলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জশুয়া মার্শম্যান এবং মায়ের নাম হান্নাহ্ শেফার্ড। জশুয়া মার্শম্যান ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি ছিলেন পিতামাতার প্রথম পুত্র। তাঁর পিতামাতা ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান। তাঁর পিতা ও মাতা মিশনারি উদ্দেশ্য নিয়েই ভারতে এসেছিলেন ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে।


১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্শম্যান পিতামাতার সাথে শ্রীরামপুরের ডেনিশ বণিক বসবাস শুরু করেন। এখানে কেরী ও ওয়ার্ড নামের দুই বিখ্যাত প্রটেস্ট্যান্ট পণ্ডিতের তত্ত্বাবধানে মার্শম্যান ধর্ম এবং অন্যান্য শিক্ষা গ্রহণ করেন।

১৮১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মার্শম্যান শ্রীরামপুর মিশনে তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর মিশনারি কাজে বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য তিনি ইতালি, রোম ও গ্রিস ভ্রমণ করেন। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ফিরে তিনি শ্রীরামপুর মিশনারি প্রেসে যোগ দেন।
শ্রীরামপুরের ইংরেজ মিশনারিরা ধর্ম প্রচারের জন্য দেশীয় ভাষা চর্চার জন্য যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ  করেছিল, এরই একটি উদ্যোগ ছিল সংবাদপত্র প্রকাশ। এই সময় লর্ড ওয়েলেসলি'র সংবাদপত্র প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা বলৎ ছিল। তাই মিশনারিরা চিঠিপত্র, সারকুলার, হিসাব বই এবং পুস্তিকা ছাপতে লাগলেন। এই অবস্থা থেকে বেরিয়া আসার জন্য মার্শম্যান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবং তাঁরই উদ্যোগে এবং সম্পাদনায় বাংলাভাষায় প্রথম সাময়িক পত্র দিগ্‌দর্শন প্রকাশিত হয়, ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে।

একই বছর '
সমাচার দর্পণ' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এই পত্রিকাটি প্রকাশের সময়ে মিশনারিদের মধ্যে মতভেদ হয়েছিল। বিশেষ করে উইলিয়াম কেরি পত্রিকা প্রকাশ করে সরকারের বিরাগভাজন হতে চান নি। পরে স্থির হয় যে, প্রথম সংখ্যাটির ইংরাজি অনুবাদ-সহ একখানি কপি সরকারকে পাঠান হবে এবং অনুমতি পেলে তবেই পত্রিকা প্রকাশ চালিয়ে যাওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে মার্শম্যান, ভাইস প্রেসিদেন্ত মিঃ এডমনস্টোন, চিফ সেক্রেটারি ও গভর্ণর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস-এদের প্রত্যেককে অনুবাদ-সহ পত্রিকার প্রথম সংখ্যা পৌঁছে দেবার জন্য কলকাতায় রওনা হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস স্বহস্তে চিঠি লিখে মার্শম্যানকে এদেশে জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর সঙ্কল্পে পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রশংসা করেন। এরপরে পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
                [পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যার প্রথম পাতার নমুনাচিত্র]


'সমাচার দর্পণ'-এর শেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময় পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে মার্শম্যানের শিক্ষা-প্রসারের চিন্তা ও উদ্যোগের ফলস্বরূপ কলিকাতা স্কুল-বুক সোসাইটি স্থাপিত হয়।
১৮১৮ থেকে ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মার্শম্যান
Friend of India (মাসিক ও ত্রৈমাসিক) সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।
১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শ্রীরামপুর কলেজ এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।
১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের অনুবাদকের কাজ করেন।
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে
Government Gazette এর সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে


সূত্র : মৃণালিনী । বিশ্বভারতী পৌষ ১৩৯৭।