ওয়ারেন হেস্টিংস
(১৭৩২-১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দ)

ব্রিটিশ
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি'র অধীনস্থ ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের গভর্নর (১৭৭২-১৭৭৪) এবং বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ১৭৭৪-১৭৮৫)।

১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের
অক্সফোর্ডসায়ারের চার্চিলের একটি গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের কিছু পরেই তার মায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর পিতার অর্থ-সঙ্কটের কারণে তাঁর এক পিতৃব্য তাঁর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি তাঁকে লন্ডনে নিয়ে আসেন। লণ্ডনে তাঁকে ওয়েস্টমিনিস্টারের একটি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। স্কুলের পাঠ শেষ করার পর তিনি ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি'র অধীনে একটি সামান্য চাকরিতে যোগদান করেন এবং এই সূত্রে বঙ্গদেশে আসেন।

১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কলকাতা পৌঁছেন। ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে সে সময়ের রেশমিবস্ত্র সংগ্রহের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কাসিমবাজারে,  তিনি একটি ছোটো পদে নিযুক্ত হন। তাঁর অফিসার ছিলেন  উইলিয়াম ওয়াটস।

১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার অধিপতি, নবাব সিরাজদৌল্লা যখন কলকাতা আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তখন হেস্টিংস কাশিমবাজারে ছিলেন। সিরাজ পথিমধ্যে কাশিমবাজার দখল করেন এবং সেখানকার ব্রিটিশদের সাথে তিনিও বন্দী হন। নবাবের কলকাতা দখলের পর, সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান এবং ফলতায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই সময় মেরী নাম্নী এক বিধবাকে বিয়ে করেন। উল্লেখ্য মেরীর প্রাক্তন স্বামী সিরাজদৌল্লার কলকাতা অবরোধের সময় নিহত হয়েছিলেন। মেরীর গর্ভে হেস্টিংসের যে দুটি সন্তান জন্মায় তারা অচিরেই মারা যায়।

১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানির কাছে
নবাব সিরাজদৌল্লা পরাজিত ও পরে নিহত হলে বাংলার নবাব হন মীরজাফর। ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মীরজাফর-এর রাজদরবারের কোম্পানির রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানি মীরজাফরকে সরিয়ে তাঁর জামাতা মীরকাশিম -কে নবাব করে। এর কিছুদিন পর, কলকাতা গিয়ে গভর্নর হৈনরী ভ্যান্সিটার্ট-এর কাউন্সিল সদস্য হন। ১৭৬৩-৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মীরকাশিম ও কোম্পানির মধ্যকার যুদ্ধে মীরকাশিম ন এবং পালিয়ে যান। কোম্পানির এই আচরণ নিয়ে ভ্যান্সিডার্ট ক্ষুব্ধ হন এবং ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদত্যাগ করে ইংল্যান্ডে ফিরে যান। ইংল্যান্ডে গিয়ে তিনি ভারত নীতি সম্পর্কে নতুন পথ দেখান এবং সার্বিকভাবে নিজেকে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর ফলে তিনি মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট কাউন্সিলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। নতুন পদ নিয়ে, ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ হেস্টিংস মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। একই জাহাজে তাঁর সহযাত্রী ছিলেন ফরাসী বংশোদ্ভুত জার্মান মহিলা আনা মেরিয়া অ্যাপোলোনিয়া চ্যাপুস্টেইন। তিনি তাঁর স্বামীর সাথে ভারতে বেড়ানোর জন্য এসেছিলেন। তাঁর স্বামী শেষ পর্যন্ত ইউরোপে ফিরে যান, আর আনা মেরিয়ান হেস্টিংসের সাথে থেকে যান। ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে হেস্টিংস তাঁকে বিয়ে করেন। তাঁদের কোন সন্তান সন্ততি হয় নি।

১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে  (১১৭৬ বঙ্গাব্দ) অনাবৃষ্টি হয়। এই সময় বাংলাদেশে চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইতিহাসে একে বলা হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। এই মন্বন্তরে ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গদেশে বিপুল পরিমাণ লোক মৃত্যুবরণ করে। এর ফলে ভারতে কোম্পানির কার্যলাপকে নতুন আইনের অধীনের ঢেলে সাজানোর বিষয় উঠে আসে। কোম্পানির পরিচালক সভার নির্দেশের (২৮ আগস্ট ১৭৭১) আওতায় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিল প্রশাসনের ক্ষেত্রে নিজেকেই সুবা বাংলার জন্য সর্বোচ্চ সরকার ঘোষণা করে।

১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানির আঞ্চলিক বিষয়াদি প্রশাসনের জন্য কলকাতায় রাজস্ব কমিটি নামে এক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রেসিডেন্ট হন গভর্নর এবং বাংলার ফোর্ট উইলিয়মের প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন হেস্টিংস। ওয়ারেন হেস্টিংস ঘোষণা করেন যে, ক্লাইভের দেওয়ানি ও নিজামত দ্বৈত-প্রশাসন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করেন। এবং এই বিষয়ে ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে কয়েক দফা ইস্তাহার জারি করা হয়। এসব ইস্তাহার অনুসারে, রাজস্ব চাষিদের প্রকাশ্য নিলামে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য জমি ইজারা দেওয়া হয়। এ পাঁচসালা বন্দোবস্ত কার্যকরী করার জন্য, দায়িত্ব দেওয়া হয় গভর্নর ও কাউন্সিলের চার সদস্যের নেতৃত্বে এক সার্কিট কমিটির উপর। এ কমিটির অতিরিক্ত দায়িত্ব ছিল ইজারাদারদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা। দেশীয় জেলা কর্মকর্তাদের ভিতর ফৌজদার, কানুনগো আর আমিলদের স্থলে, কালেক্টর বা রাজস্ব আদায়ের জন্য ব্রিটিশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পাঁচসালা রাজস্ব বন্দোবস্তের অধীনে, রাজস্ব নিলামদাররা অত্যুচ্চ হারে খাজনা আদায় করতে থাকে। ফলে অনেক রায়ত জমি ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেক সময় এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পেশ করে এবং বহু জায়গায় রায়তরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কিন্তু কোম্পানির প্রশাসনিক সামর্থ্য ছিল না। ফলে ইজারদাররা এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিল। অবশেষে কোম্পানি পাঁচশালা বন্দোবস্তের ত্রুটি অনুধাবন ধরতে সক্ষম হয়।

১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়। ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর ব্রিটিশ সরকার হস্তক্ষেপ করা শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার আইন করে বাংলার শাসন ক্ষমতা পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি সুপ্রিম কাউন্সিলের অধীনে আনা হয়। এই কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে গভর্নর জেনারেলের নিয়োগ দেওয়া হয়।  এছাড়া রাজকীয় জজদের সমন্বয়ে গঠিত হয় কলকাতায় একটি সুপ্রিম কোর্ট। এই আইনের অধীনে বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল হন হেস্টিংস। এই সময় জন ক্লেভারিং, জর্জ মনসন এবং ফিলিপ  ফ্রান্সিসকে কাউন্সিলের তিন জন্য সদস্য হিসেবে সরাসরি বিলেত থেকে পাঠানো হয়।

১৭৭৩-৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হেস্টিং-এর নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী রোহিলাখণ্ডের যুদ্ধে অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত ১৭৮৪ সালে হায়দার আলীর পুত্র টিপু সুলতান ও ইংরেজ বাহিনীর মধ্যে ম্যাঙ্গালোরের চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের সাময়িক অবসান ঘটে।


১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে অক্টোবর নতুন কাউন্সিলরগণ কলকাতায় আসেন। সদ্য বিলেত থেকে আসা এই কাউন্সিলারদের সাথে হেস্টিংসের বিরোধিতার সৃষ্টি হয়। নতুন কাউন্সিলররা রোহিলা যুদ্ধের জন্য হেস্টিংসকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। কাউন্সিলররা মনে করতেন  পূর্বতন সরকারের সব কার্যকলাপই দূর্নীতিতে আচ্ছন্ন এবং স্বয়ং হেস্টিংস বাংলার সম্পদ লুটপাট এবং অপচয়ের ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছেন না। এদের উৎসাহে মহারাজা নন্দকুমার হেস্টিংসের উৎকোচ গ্রহণ সংক্রান্ত একটি মামলা করেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই সুপ্রিম কোর্টে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে নন্দকুমারকে মুত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই আগস্ট তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। হেস্টিংসের বিরুদ্ধবাদীরা তড়িঘড়ি করে নন্দকুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করতে থাকেন। অনেকে এও বলেন যে, হেস্টিংস নিজেকে রক্ষা করার জন্য রায় প্রদানে বিচারকদের প্রভাবিত করে থাকতে পারেন। 

এরপর পাঁচশালা ভূমি বন্দোবস্তের বিষয় নিয়ে তিনি রাজস্ব আদায়ের সর্বোত্তম পদ্ধতি নিয়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে থাকেন। অবশেষে ১৭৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠিত এক সভায় কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য রিচার্ড বারওয়েল জমিদারদের দীর্ঘমেয়াদে ভূমি বন্দোবস্ত দানের প্রস্তাব করেন। ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জানুয়ারি কাউন্সিলের আরেক সদস্য ফিলিপ ফ্রান্সিস এর চূড়ান্ত রূপ দেন। তাঁর এই তত্ত্বটকে বলা হয় ‘চিরস্থায়ী ভূমি রাজস্ব পরিকল্পনা ১৭৭৬’ । তিনি বিশেষভাবে তাঁর তত্ত্বে বলেন,  জমিদাররাই জমির মালিক। অতএব তাদেরকে চিরস্থায়িভাবে জমির বন্দোবস্ত দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। জমিদারদের সাথে ভূমি বন্দোবস্তের ব্যাপারে ওয়ারেন হেস্টিংস বারওয়েলকে সমর্থন দেন। পাঁচসালা বন্দোবস্ত ব্যবস্থার অবসানের প্রাক্কালে, ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৪শে ডিসেম্বর কোম্পানির পরিচালকরা একটি সভায় মিলিত হন। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়. যে, নিলামে জমি ইজারা দানের রীতি পরিহার করে কেবল জমিদারদের জমির স্বল্পমেয়াদি বন্দোবস্ত দিতে হবে। এই সভায় ভূমি বন্দোবস্তের লক্ষ্যে জমির সম্পদ সঠিকভাবে নিরূপণের জন্য প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা করতে কাউন্সিলকে পরামর্শ দেওয়া হয়। কাউন্সিল ১৭৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ও পরবর্তী তিন বছরের জন্য বার্ষিক ভিত্তিতে জমিদারদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ভূমি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এই নতুন ব্যবস্থাতেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি না পেয়ে কমে যেতে থাকে। 

হেস্টিংসের দুজন বিরুদ্ধবাদী, মনসন ও ক্লেভারিং মারা গেলে হেস্টিংস শাসনব্যবস্থায় পুনরায় তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এরপর ফ্রান্সিস একাই তার বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই আগস্ট হেস্টিংসের সাথে ডুয়েল লড়ে ফ্রান্সিস কিঞ্চিৎ আহত হয়ে ভারত ত্যাগ করেন।

১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে শক্তিশালী মহীশুর বাহিনী ব্রিটিশ আশ্রিত কর্ণাট অঞ্চল আক্রমণ করে। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে একদল ফরাসি সৈন্য মহিশূরের সাহায্যার্থে ভারতে পদার্পণ করে। হেস্টিংস কূটকৌশলে ভারতীয় মৈত্রীজোটকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হন। তিনি প্রচুর অর্থ, রসদ ও সৈন্যবাহিনী বাংলা থেকে মাদ্রাজে পাঠান। এর ফলে মহিশূর বাহিনীকে পিছু হটতে হয় এবং ফরাসি বাহিনীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এতদসত্ত্বেও যুদ্ধের কারণে স্বদেশে হেস্টিংসের ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। তিনি একজন যুদ্ধবাজ শাসক হিসেবে চিত্রিত হন। যুদ্ধের প্রয়োজনে হেস্টিংস কোম্পানির উত্তর ভারতীয় কিছু মিত্র শক্তি ও আশ্রিত রাজ্যের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষভাবে তিনি বেনারসের রাজা চৈৎসিংহ কোম্পানিকে অতিরিক্ত কর দিতে বাধ্য করেন। চৈৎসিংহ  কোম্পানির ন্যায়সঙ্গত দাবি মেটাতে উপেক্ষা করছেন এই অজুহাতে ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে হেস্টিংস স্বয়ং চৈৎসিংহের রাজ্যে যান এবং তার ওপর বিপুল অঙ্কের জরিমানা চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজার রক্ষীদল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে হেস্টিংসকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়। বেনারসের পর হেস্টিংস ইংরেজদের মিত্র অযোধ্যার নওয়াবের কাছ থেকে বলপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ জোগার করেন। নওয়াব ভূমিকর বাড়াতে এবং তাঁর মা ও পিতামহীর বিপুল সঞ্চিত সম্পদ জবরদখল করে কোম্পানির দাবি মেটাতে বাধ্য হন। ব্রিটিশ সরকার হেস্টিংস-এর কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে হেস্টিংস পদত্যাগ করেন। এরপর ভারত ত্যাগ করে ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুন তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে পা রাখেন।  ১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভূস্বামী শ্রেণির অন্যতম সদস্য লর্ড কর্নওয়ালিসকে গভর্নর জেনারেল করে পাঠানো হয়।

১৭৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা সরকারকে অনতিবিলম্বে রাজস্ব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করা এবং সরকার ও জমিদার উভয় তরফের জন্য সুবিধাজনক শর্তের আওতায় জমিদারদের সাথে রাজস্ব প্রশ্নে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পাদনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিনি আশা করেছিলেন, দেশে ফিরলে দেশবাসী সম্মানিত করবেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁকে কাঠগড়াতেই দাঁড়াতে হয়। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ হাউস অফ লর্ডসে (House of Lords) তার বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল

১৭৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বার্ক কমন্সসভায় হেস্টিংসের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনয়ন করেন। রোহিলা যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রথম প্রস্তাবটি কমন্স সভায় উত্থাপিত হয় নি। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে চৈৎসিংহ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অপরাপর প্রস্তাবের সাথে পাশ হয় এবং ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ইমে হেস্টিংসকে ইমপিচ করা হয়। প্রথম দিকে অভিযোগগুলো হেস্টংস-এর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে উত্থাপিত হলেও ১৭৯১ সালের ৩০ মে-র মধ্যে ধারণা পাওয়া যায় যে, হেস্টিংস-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। ১৭৯৫ সালে লর্ডসভায় বিপুল ভোটাধিক্যে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ইমপিচমেন্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার পর হেস্টিংস গ্রামে ফিরে যান এবং একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতে থাকেন।

১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে আগস্ট হেস্টিংস এর ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। 


তাঁর শাসনামলের উল্লেখযোগ্য ঘটনা


সূত্র :