প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষদের তালিকা |
---|
|
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তালিকা |
|
প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষদের তালিকা |
---|
|
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তালিকা |
|
হিন্দু কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ,
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের পশ্চিম বাংলার
রাজধানী কলকাতায় অবস্থিত একটি পুরানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর আদি নাম ছিল হিন্দু
কলেজ, পরে এর নাম হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং সবশেষ প্রেসিডেন্সি
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
এই কলেজ স্থাপনের পিছনে কিছু ঐতিহাসিক প্রয়োজন বিশেষভাবে কাজ করেছিল। কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী থাকার সময় ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে, কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট স্থাপিত হয়। এই আদালতে চাকরি বা আইনগত সুবিধা লাভের জন্য স্থানীয় বাঙালি হিন্দুরা ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু করে।
বাঙালি নবজাগরণের উষালগ্নে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই সময় এই কলেজে আরবি, হিন্দুস্তানি, ফারসি, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা শেখানো হতো। ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা এখানে ছিল না। তাই ডেভিড হেয়ার এবং রাজা রাধাকান্ত দেব ইংরেজি শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। এই সূত্রে উচ্চতর ইংরেজি শেখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বদ্দিনাথ মুখোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড।
১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মে, বদ্দিনাথের বাসায় এ বিষয়ে একটি সভা হয়। এই সূত্রে ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় পূর্ববর্তী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কলকাতার গরানহাটায় গোরাচাঁদ বসাকের বাড়িতে হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সাথে ছিলেন- রাজা রাধাকান্ত দেব, বর্ধমানের রাজা তেজেন্দ্র রায়, ডেভিড হেয়ার,বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড, প্রসন্নকুমার ঠাকুর এবং বাবু বদ্দিনাথ মুখোপাধ্যায়। এই সময় তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুর।
আনুষ্ঠানিকভাবে এই কলেজটি উদ্বোধন হয়েছিল ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি (শুক্রবার, ২৮ পৌষ ১২২৩)। প্রথমে এই কলেজের ছাত্র ছিল মাত্র ২০ জন। দুটি পরিচালন কমিটির সাহায্যে এই কলেজটি পরিচালিত হতো। প্রথম কমিটির গভর্নর ছিলেন বর্ধমানের রাজা তেজেন্দ্র রায় এবং বাবু গোপীমোহন ঠাকুর। এর পরিচালক কমিটিতে ছিলেন শোভাবাজারের বাবু গোপীমোহন দেব, বাবু জয়কিষাণ সিংহ, বাবু রাধাবাধব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাবু গঙ্গানারায়ণ। বদ্দিনাথ মুখোপাধ্যায় কলেজের প্রথম সেক্রেটারি হিসাবে নিয়োগ পান। পরে এর সাথে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে যুক্ত হয়েছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির কাউন্সিলারের সদস্য রামকমল সেন।
ক্রমে ক্রমে এই কলেজটি তৎকালীন কলকাতা তথা সমগ্র পূর্ব-ভারতের অন্যতম কলেজে পরিণত হয়। ফলে বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উড়িষ্যা থেকে বহু শিক্ষার্থী এই কলেজে পড়তে শুরু করে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজের ছাত্র সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০০। এই কলেজটি ইংরেজি শিক্ষার জন্য চালু হলেও, ক্রমে ক্রমে এতে যুক্ত করা হয় আইন, চিত্রকলা এবং প্রকৌশল বিভাগ। ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন জে কার (J. Kerr)। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তাঁর কার্যকাল শেষ করলে, রিচার্ডসন ১ বৎসরের জন্য (১৮৪৮-১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দ) অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৯-১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ই লজ নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেন জে সুট্ক্লিফ। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন থেকে 'হিন্দু কলেজ' 'প্রেসিডেন্সি কলেজ' পরিচয়ে কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথম দিকে, এই কলেজে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই পড়ার সুযোগ পেতেন। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি কলেজ থাকা উচিৎ, এই বিবেচনায় নতুন কলেজ স্থাপনের প্রয়োজনীতা অনুভব করেছিলেন সেকালের অনেক বুদ্ধিজীবী। এই সূত্রে কলকাতা কলেজ বা মেট্রোপলিটন কলেজ নামে কোনো নতুন কলেজ তৈরির আলোচনা উঠেছিল। কোনো নতুন কলেজ স্থাপনের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা দিতে তৎকালীন সরকার রাজি ছিল না। ফলে বিকল্প হিসাবে হিন্দু কলেজকেই সর্ব-সম্প্রদায়ের কলেজে পরিণত করার উদ্যোগ নেয় হয়। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার গভর্নর লর্ড ডালহৌসি, ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর-এ এক বিবৃতিতে জানান-
a new general college should be established at Calcutta by the government and designated "The Presidency College" .. the College should be open to all youths of every caste, class or creed.'দ্যা প্রেসিডেন্সি কলেজ' নামে কলকাতায় একটি সাধারণের জন্য একটি সরকারি কলেজ স্থাপিত হওয়া উচিৎ।...এই কলেজটি হওয়া উচিৎ প্রত্যেকটি সম্প্রদায়, শ্রেণি এবং ধর্মাবলম্বীদের জন্য'।
লর্ড ডালহৌসি প্রেসিডেন্সি শব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন- তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের 'বেঙ্গাল প্রেসিডেন্সি' প্রদেশের নামানুসারে। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারিতে 'হিন্দু কলেজ'-এর পরিচালকমণ্ডলী সর্বশেষ সভা করেন। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন থেকে 'হিন্দু কলেজ' 'প্রেসিডেন্সি কলেজ' পরিচয়ে কার্যক্রম শুরু করে। এই সময় নতুন ১০১ জন নতুন ছাত্র ভর্তি করা হয়। এর ভিতরে মুসলমান ছাত্র ভর্তি হয়েছিল মাত্র ২ জন। বাকি ছাত্ররা ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই কলেজ থেকে প্রথমবার ২৩ জন ছাত্র বিএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ৬ জন এমএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
প্রেসিডেন্সি কলেজ চালু হওয়ার পর ক্রমাগত ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থেকে। ফলে এই কলেজের সম্প্রসারণের
প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই সূত্রে ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ নতুন ভবন উদ্বোধন
করা হয়। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই নতুন ভবনে রসায়ন বিভাগের পরীক্ষাগার স্থাপন করা
হয়। শিবপুর প্রকৌশল কলেজ স্থাপনের আগে, ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই কলেজে প্রকৌশল
বিভাগের পাঠদান হতো। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজে ভূতত্ত্ব বিভাগ খোলা হয়। ১৮৯৭
খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মহিলাদের এই কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ দেওয়া হয়। আর ১৯০০
খ্রিষ্টাব্দে জীববিজ্ঞান খোলা হয়। এই কলেজে বাণিজ্য অনুষদ খোলা হয় ১৯০৩
খ্রিষ্টাব্দে।
বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি এই কলেজের বাকের
গবেষণাগার উদ্বোধন করেন। এরপর এই নতুন ভবনে পদার্থবিজ্ঞান, শারীরতত্ত্ব,
উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং ভূতত্ত্বের গবেষণাগারগুলো তুলে আনা হয়।
এই কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দীর্ঘকাল অতিবাহিত করে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরিত করার দাবি উত্থাপন করা হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। সূত্র :