গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
(? )
প্রথম বাঙালি মুদ্রণযন্ত্র স্থাপক ও পত্রিকার সম্পাদক।
 

গঙ্গাকিশোরের জন্ম-মৃত্যু বা পরিবার পরিজন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। বিভিন্ন সূত্র থেকে শুধু এটুকু জানা যায় যে, ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি  হুগলীর শ্রীরামপুরের নিকটবর্তী বহরা গ্রামে বসবাস করতেন। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম কেরি এবং অন্যান্য মিশনারীদের প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুরে একটি মিশন গড়ে উঠে। ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা প্রসারের তাঁরা একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। এই সময় গঙ্গাকিশোর সেখানে কম্পোজিটর হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছায় তিনি কলকাতায় এসে পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রয়ের ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। 'সমাচার দর্পণ পত্রিকার ৩০শে জানুয়ারি ১৮৩০ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়

"এতদ্দেশীয় লোকের মধ্যে বিক্রয়ার্থে বাঙ্গালা পুস্তক মুদ্রিতকরণের প্রথমোদ্যোগ কেবল ১৬ বৎসরাবধি হইতেছে ইহা দেখিয়া আমাদের আশ্চর্য্য বোধ হয় যে এত অল্প কালের মধ্যে এতদ্দেশীয় লোকেরদের ছাপার কর্ম্মের এমন উন্নতি হইয়াছে। প্রথম যে পুস্তক মুদ্রিত হয় তাহার নাম অন্নদামঙ্গল শ্রীরামপুর ছাপাখানার এক জন কর্ম্মকারক শ্রীযুত গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্য তাহা বিক্রয়ার্থে প্রকাশ করেন।"

১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে গঙ্গাকিশোর কলকাতার Ferris and Company Press-এ বাংলা ভাষার প্রথম সচিত্র পুস্তক 'অন্নদামঙ্গল' প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তিনি এখান থেকে 'গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিণী', 'লক্ষ্মীচরিত্র', 'বেতাল পঞ্চবিংশতি', 'চাণক্য শ্লোক' প্রকাশ করেন। 

১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে গঙ্গাকিশোর কলকাতায় 'বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস' ও অফিস স্থাপন করেন এবং '
বাঙ্গাল গেজেট' নামের একটি পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করেন। এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশ কাল নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য আছে। বিভিন্ন সূত্র অনুসরণ করে, ধারণা করা হয় এই পত্রিকাটি ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই মে থেকে ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল। এর সাধারণ মূল্য ছিল এক টাকা ও সডাক মূল্য ছিল দু'টাকা। পত্রিকাটি এক বছর চলার পর বন্ধ হয়ে যায়।

গঙ্গাকিশোর এরপর কি করেছিলেন এবং কতদিন জীবিত ছিলেন, সে বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা যায় নি।