বজ্রযান
বৌদ্ধ ধর্মের একটি বিশেষ মার্গ বা পথ।

এই মতে বজ্র শব্দের অর্থ হলো শূন্য বা নির্বাণ। এই মতে পরমদেবতা হলেন আদিবুদ্ধ। এই পরমদেবতা হলেন আত্মা এবং পরমাত্মা। বজ্রযানের এই মত উপনিষদ থেকে গ্রহণ করা হয়েছিল।

পরমব্রহ্মের মতো পরমদেবতা একই সাথে নির্গুণ এবং সগুণ। এই পরমদেবতার উদ্দেশ্যে একেকেন্দ্রিক ধ্যান হলো বোধিচিত্ত। কঠোর যোগাচারের দ্বারা ইন্দ্রিয়কে দমন করে চিত্তকে দৃঢ় করা হয়। এই অবস্থায় সাধক বোধিজ্ঞান লাভ করেন। আর এই বোধিজ্ঞানকে আশ্রয় করে নির্বাণ লাভের পথই হলো বজ্রযান। আদিবুদ্ধ বজ্রসত্ত্বরূপ, জ্ঞান এবং করুণার আধার।
বৌদ্ধ তন্ত্রে বজ্রসত্ত্ব হলো হেরুক (হে বজ্র)। এঁর প্রকৃত নাম বজ্রসত্তাত্মিকা, বজ্রবরাহী, প্রজ্ঞা, প্রজ্ঞাপারমিতা। একে আবাহন করা হয় 'হুং' বীজমন্ত্রে। এই মতে বজ্র হলো পুরুষ আর প্রজ্ঞা হলো নারী। আবার উপায় পুরুষ আর চন্দ্র নারী। সূর্যকে সবসময় পুরুষ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এই পুরুষ নারীর মিলনে সৃষ্টি হয় পরম আনন্দময় দশা। এই অবস্থায় প্রাপ্ত চেতনাই হলো বোধিচিত্ত। এক্ষেত্রে সনাতন হিনদু ধর্মের তান্ত্রিক মতের সাথে মিল খউঁজে পাওয়া যায়। নারী রূপ কমল (প্রজ্ঞা) এবং বজ্র রূপ পুরুষের মৈথুনকে বলা হয় 'বজ্রকমল সংযোগ'। এই সংযোগে সৃষ্টি হয় বোধিচিত্ত।

মূলত এই মতে আদিবুদ্ধের সাধনা করা হয়। বজ্রযানে বলা হয়, গুরু ছাড়া বোধিজ্ঞান লাভ এবং নির্বাণ লাভ সম্ভব নয়। তাই গুরুকে নির্বাণ লাভের জন্য পথের সারথি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বজ্রযানের অনুসারীরা মনে করেন। মানুষের ভৌতিক দেহ পঞ্চস্কন্ধ দ্বারা গঠিত। এই পঞ্চস্কন্ধের রয়েছে রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার, ও বিজ্ঞান নামক পাঁচটি গুণ। এই পঞ্চস্কন্ধের প্রতীকী দেবতারা হলেন বৈরোচন, রত্নসম্ভব, অমিতাভ, অমোঘসিদ্ধি ও অক্ষোভ্য। ধ্যানের প্রয়োজনে এসকল দেবতারা সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এরা সবাই ধ্যানী বুদ্ধ। এদের শক্তি হলো বজ্রাধাতেশ্ধরী মামকী, পাণ্ডরা, আর্যতারা বা তারা ও লোচনা। এদের বোধিসত্তরা হলেন চক্রপাণি, রত্নপাণি, পদ্মপাণি (অবলোকিতেশ্বর), বিশ্বপাণি ও বজ্রপাণি। এছাড়া এরা ভূত-পিশাচ, মাতঙ্গী পিশাচী ডাকিনী যোগীনি প্রভৃতি লৌকিক সংস্কারজাত অপশক্তির পূজা করে।  এই মতের আর্যতারা নামক দেবী শ্যামতারা, শ্বেততারা, উগ্রতারা প্রভৃতি নামে পূজিতা হয়ে থাকেন।

বজ্রযানী সাধকদের বলা হত সিদ্ধ অথবা সিদ্ধাচার্য। এঁদের সংখ্যা ছিল ৮৪।
 


সূত্র :
বাউল । আহমদ শরীফ।