ত্রিপিটক
বৌদ্ধধর্মের মূলগ্রন্থ।
গৌতম বুদ্ধ
তাঁর
জীবদ্দশায় তাঁর ধর্মমত যেমনটা করতে চেয়েছিলেন, হয়তো তা অনেকাংশে পূরিত হয়েছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রইলো না। বুদ্ধের যোগ্য শিষ্যদের অনেকে মৃত্যুবরণ করায়,
বুদ্ধের বাণী এবং তার ব্যাখ্যা বিলীন হওয়ার আশংকা তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। এছাড়া
অপ্রধান ভিন্ন ভিন্ন শিষ্যদের দ্বারা এর বিকৃতরূপ নিতে শুরু করেছিল। এই সমস্যা
সমাধানের জন্য,
৪৮৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে
মগধের মহারাজ অজাতশত্রুর (৪৯৩-৪৬২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) সহায়তায় অনিরুদ্ধ মহাকাশ্যপ এক
বৌদ্ধসভার আয়োজন করেন। বুদ্ধের বাণী সংগ্রহের কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই সভা
থেকে। বৌদ্ধ ইতিহাসে এই সভার নাম দেওয়া হয়েছে 'মহাসঙ্গীতি'। প্রথম মহাসঙ্গীতির
সিদ্ধান্ত অনুসারে বুদ্ধের অন্যতম শিষ্য আনন্দের নেতৃত্বে সংগৃহীত হয়েছিল ধর্মাংশ
এবং আর বুদ্ধের অপর শিষ্য উপালি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিনায়ংশ। পরে এই দুই সংগ্রহকে
বিষায়ানুসারে ভাগ করে, তৈরি করা হয়েছিল বিনয়পিটক ও সূত্রপিটক। পরে সূত্রপিটকের একটি
অংশ পৃথক করে অভিধম্মপিটক নামক তৃতীয় পিটক তৈরি করা হয়। এই তিনটি পিটকের সংকলনই হলো
ত্রিপিটক।
পিটক শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো বাক্স, ঝুড়ি।
ভিক্ষুরা পিটক শব্দটি গ্রহণ করেছিলেন সংকলন অর্থে। যাবতীয় বৌদ্ধসাহিত্যে পিটককে
দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো-
- পালি পিটক: বুদ্ধের মুখনিঃসৃত
উপদেশাবলি। এরই সংকলন হলো ত্রিপিটক।
- অনুপালি বা অনুপিটক: ত্রিপিটককের
ব্যাখ্যাদানকারী গ্রন্থাদি। এই পর্যায়ের গ্রন্থগুলোর ভিতরে রয়েছে অত্থকথা,
আচার্যবাদ, কোষ, বংশ, টীকা, অনুটীকা, ব্যাকরণ, দীপিকা ইত্যাদি।
মূলত তিনটি
গ্রন্থ সংকলনের সম্মিলিত নাম হলো ত্রিপিটক।
মুলত ত্রিপটকের
প্রতিটি খণ্ডে বুদ্ধের বাণীগুলোকে বিষয়ানুসারে তিনটি ভিন্ন নামে পৃথক গ্রন্থ হিসেবে সংগৃহীত হয়েছে।
পিটকভেদে এই সংকলনে যে সকল গ্রন্থ পাওয়া যায়, তা হলো-
- বিনয় পিটক:
গৌতম বুদ্ধের নানাবিধ উপদেশ-ভিত্তিক,
বৌদ্ধ সঙ্ঘের আচার সম্বন্ধীয় নিয়মাবলি
নিয়ে এই পিটক তৈরি হয়েছে। এর
প্রধান তিনটি ভাগ হলো- সুত্তবিভঙ্গ, খণ্ডক ও পরিবার।
খণ্ডকে দু’টি গ্রন্থ রয়েছে- মহাবগ্গ ও চুল্লবগ্গ। এগুলোতে ভিক্ষুসঙ্ঘের সাথে
সম্বন্ধ রাখার বিষয় বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিভাবে সঙ্ঘে প্রবেশ করা যায়,
নানা সময়ে কোন্ কোন্ ব্রত পালন করতে হয়, চাতুর্মাস্য কিভাবে উদ্যাপন করতে হয়,
ভিক্ষু কিরূপ কাপড় পড়বে, ভোজনের জন্য কোন্ নিয়ম পালন করবে ইত্যাদি কথা রয়েছে
মহাবগ্গ ও চুল্লবগ্গে।
‘পরিবার’ হচ্ছে বিনয়পিটকের সার। এতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বৌদ্ধভিক্ষুদের নিয়ম
ও কর্তব্য প্রতিপাদিত হয়েছে।
-
সুত্তবিভঙ্গ:
সুত্তবিভঙ্গ দুই ভাগে বিভক্ত।
ভাগ দুটি হলো ভিক্ষু-বিভঙ্গ ও
ভিক্ষুণী-বিভঙ্গ
। এই দুটি ভাগে বিশদভাবে
ভিক্ষু ও ভিক্ষুনীদের অবশ্য পালনীয় নিয়ম বর্নীত
হয়েছে। কি কারণে
ভিক্ষু বা ভিক্ষুনী পতিত হয়,
তাও এই ভাগে বলা হয়েছে।
পতিত হওয়ার কারণ স্বরূপ ২২৭টি
অপরাধের । প্রত্যেক পূর্ণিমাতে ভিক্ষুসঙ্ঘের
সম্মুখে তাদেরকে এরূপ কৃত পাপের পাঠ করতে হয়, এ হচ্ছে তাদের জন্য
প্রায়শ্চিত্ত। সুত্তবিভঙ্গে এসকল অপরাধ ও পালনীয় নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
-
খণ্ডক:
এই অংশে রয়েছে
মহাবগ্গো
ও চুল্লবগ্গো নামক দুটি গ্রন্থ। এই দুটি গ্রন্থে ভিক্ষুসঙ্ঘে প্রবেশ করা,
এর সাথে সম্বন্ধ রাখা, ব্রত পালন করার নিয়ম, চাতুর্মাস্য পালনের নিয়ম
ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।
-
পরিবার:
এই অংশে রয়েছে,
পারাজিকা,
পাচিত্তিয়,
ও
পরিবার পাঠ।
এই সংকলনটিকে বলা হয়
বিনয়পিটকের
সার। এতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বৌদ্ধভিক্ষুদের নিয়ম ও কর্তব্য বিষয়ে
জ্ঞান দান করা হয়েছে।
- সূত্র পিটক: এই সংকলনে রয়েছে
বুদ্ধের
ধর্ম বিষয়ক বার্তা। গ্রন্থটি ৫টি নিকায় বিভক্ত। এগুলো হলো ১.দীঘনিকায়,
২.মজ্ঝিমনিকায়, ৩.অঙ্গুত্তরনিকায়, ৪.সংযুক্তনিকায়, ৫.খুদ্দনিকায়।
- দীঘ নিকায়: এই নিকায়-তে
৩৪টি সূত্র আছে। গ্রন্থটি তিন বর্গে বিভক্ত। এর
পতিটি সুত্রে
বুদ্ধের সংবাদ সঙ্কলিত আছে। এছাড়া যজ্ঞের উপযোগ, মানুষের উচ্চকুল বা
নীচকুলে জন্মের কারণ, নির্বাণ, পুনর্জন্ম ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
- মাজ্ঝিম নিকায়: বাংলায় একে
বলা হয় মধ্যম নিকায়। এর সূত্রগুলো দীর্ঘ নিকায়-র সূত্র গুলো থেকে ছোটো। এই
নিকায় তিনটি বর্গে, ১৫টি উপবর্গে এবং ১৫২টি সূত্রে গ্রথিত। এই নিকায়টি তিন
খণ্ডে বিভক্ত।
- অঙ্গুত্তরনিকায়: এই
নিকায়-তে রয়েছে
২৩০০ সূত্র।
এই নিকায়টি মোট ১১ খণ্ডে বিভক্ত।
- সংযুক্ত নিকায়: এই নিকায়
৫টি বর্গে বিভক্ত। সূত্র সংখ্যা ৫৬টি।
- খুদ্দ নিকায়: এটি একটি বড়
ধরনের সংকলন। এতে রয়েছে ১৫টি গ্রন্থ। এগুলো
খুদ্দকপাঠ, ধম্মপাদ, উদান, ইতিবুতক, সুত্তনিপাত, বিমানবত্থু, থেরগাথা,
থেরীগাথা, জাতক, নিদ্দেস, পহিসম্মিদা, অপদান, বুদ্ধবংস, চরিয়াপিটক।
- খুদ্দক পাঠো
- ধম্মপদং
- উদানং
- ইতিবুত্তক
- সুত্ত নিপাতো
- বিমান বত্থু
- পেতবত্থু
- থেরগাধা
- থেরীগাথা
- জাতকং
- চুলনিদ্দেসো
- মহানিদ্দেসো
- অপাদানং
- বুদ্ধবংসো
- চরিয়াপিটকং
- পটিসম্ভিদামগ্গো
- অভিধর্ম্ম পিটক
- ধম্মসঙ্গনি
- বিভঙ্গো
- কথাবত্থু
- ধাতুকথা
- পুগ্গলপঞ্ঞত্তি
- যমকং
- পঠ্ঠানাং