অষ্টসিদ্ধি
হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের যোগ ও
তান্ত্রিক সাধনায় বিশেষ আটটি সিদ্ধ লাভ করাকে বলা হয় অষ্টসিদ্ধি। এই আটটি সিদ্ধ হলো-
- অণিমা: অণু হওয়া। নিজ দেহকে অতিক্ষুদ্র করে অণুর মতো করে নেওয়ার ক্ষমতা।
- মহিমা: বিরাট হওয়া। দেহকে অসীমভাবে বড় করে বিশাল আকার ধারণ করা।
- লঘিমা: হালকা হওয়া। নিজের দেহকে অতিপারলৌকিক হালকা করে নেওয়া, যেন আকাশে ভাসতে পারে।
- গরিমা: দেহকে অসীম ভারযুক্ত করে নেওয়া।
এর ফলে যেন কেউ তা নড়াতে না পারে।
- প্রাপ্তি। ইচ্ছামতো কিছু পাওয়া। যে কোনো বস্তুকে ইচ্ছামতো পাওয়ার বা গ্রহণ করার ক্ষমতা।
- প্রাকাম্য: ইচ্ছাপূরণ নিজের ইচ্ছামতো ঘটনা ঘটানো বা ইচ্ছা অনুযায়ী বাস্তবতা সৃষ্টি করার শক্তি।
- ঈশিত্ব: নিয়ন্ত্রণ। প্রকৃতি ও অন্যান্য সত্তার উপর কর্তৃত্ব বা রাজত্ব করার ক্ষমতা।
- বশিত্ব: বশীকরণ। অন্যকে নিজের ইচ্ছায় বশ মানাতে পারা। মন, বস্তু, প্রাণ বশীভূত করা।
পতঞ্জলি যোগসূত্র, শিব পুরাণ, বেদব্যাসের ভাগবত পুরাণ ও তান্ত্রিক গ্রন্থসমূহে অষ্টসিদ্ধির উল্লেখ রয়েছে।
ভগবদ্গীতা (১১.৪৩) ও নাথ যোগ শাস্ত্রেও এই শক্তিগুলোর কথা বলা হয়েছে।
সাধনার দ্বারা অষ্টসিদ্ধির লাভে সাধকের মনে অহঙ্কারের জন্ম নেয়। চেতনা ও আত্মোন্নতির পথে
এই অহঙ্কার বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই গুরুগণ সাধককে উপদেশ দিয়ে বলেন “সিদ্ধি নয়, মুক্তি হোক লক্ষ্য”।
অনেক তান্ত্রিক বা অবধূত সাধক এ ক্ষমতাগুলো লাভ করলেও তাঁরা তা গোপন রাখেন।
অষ্টসিদ্ধি সম্পর্কে যে সকল গ্রন্থে বিশেষভাবে জানা যায় তা হলো-
- শ্রীমদ্ভগবত পুরাণে (কান্তি খণ্ড, ১১তম স্কন্ধ (উদ্ধব গীতা অংশ)) বলা
হয়েছে- ৮টি পারমার্থিক শক্তির নামকে একযোগে “অষ্টসিদ্ধি” হিসাবে
বলা হয়। মূলত এই সিদ্ধিগুলো ভগবানের কৃপায় বা যোগসাধনায় লাভ করা যায়।
তবে এগুলো মোহজাল সৃষ্টি করতে পারে, তাই এগুলোকে আত্মজ্ঞান লাভের
পথে প্রতিবন্ধক বলা হয়েছে।
- শিব পুরাণের রুদ্র সংহিতা ১৩‑এর ৫০ শ্লোকে অষ্টসিদ্ধি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
যার সামনে (ভগবানের সামনে) আটটি সিদ্ধি নিরন্তর নৃত্য করে”। এখানে অষ্টসিদ্ধিদের
নারী রূপে
কল্পনা করা হয়েছে যারা শিবের সেবা করেন এবং যোগীসাধকের সাধনায় সহায়তা করেন।
- যোগসূত্র (পতঞ্জলি), তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে- ধ্যানে স্থিত হলে বিশেষ জ্ঞান বা শক্তি লাভ হয়।
পতঞ্জলি মনে করতেন- অষ্টসিদ্ধি সাধকের সিদ্ধিপথের ফল চূড়ান্ত মুক্তি নয়।
এগুলো বিনাশযোগ্য, তাই এর মোহ না করাই উত্তম।
- গোরক্ষনাথ ও মৎসেন্দ্রনাথের রচনায় এই সিদ্ধিগুলোকে শরীরতত্ত্ব ও
কুণ্ডলিনী জাগরণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
- নাথপন্থায় বলা হয়েছে, অষ্টসিদ্ধি
কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
- দত্তাত্রেয় 'ত্রিপুরা
রহস্য' গ্রন্থে অষ্টসিদ্ধির পরিচিতি আছে। তন্ত্র-যোগের মাধ্যমে
মহাশক্তি (ত্রিপুরা সুন্দরী)-র কৃপায় সাধক অষ্টসিদ্ধি লাভ করেন।