Sean Hunter Williams-কৃত মাটির হাতি

মডেলিং (প্রতিমানকরণ)
ইংরেজি : modeling, modelling

সাধারণত ইংরেজি থেকে আগত 'মডেলিং' শব্দটিই বাংলাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাতে model শব্দের একাধিক অর্থ আছে। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এর অর্থ হলো অনুকরণীয় অবয়ব। এক শব্দে বলা যেতে পারে 'প্রতিমান' বা 'প্রতিমা'। আর যে প্রক্রিয়ায় প্রতিমান বা প্রতিমা তৈরি করা হয়, তা হলো modeling, বাংলায় এর অর্থ হতে পারে প্রতিমানকরণ বা প্রতিমাকরণ।

টুস্যাডোর যাদুঘরের
মোমের তৈরি হিটলার

ভাস্কর্যশিল্পে মডেলিং বা প্রতিমানকরণ একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত পারিভাষিক শব্দ। ভাস্কর্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর ভিতরে কিছু পদার্থকে সহজে নরম করা যায়। এই জাতীয় পদার্থকে হাতের চাপে বা অন্যকোনো উপকারণের দ্বারা ইচ্ছামতো রূপ দেওয়া যায়। এই জাতীয় পদার্থের ভিতর রয়েছে কাঁচা মাটি এবং মোম বা মোম জাতীয় পদার্থ। এই সকল পদার্থ দিয়ে শিল্পী হাতের সাহায্যে কোনো অবয়বের প্রাথমিক রূপ তৈরি করেন। পরে এই অবয়বকে নিখুঁত করার জন্য কাঠ বা ধাতুর তৈরি নানা রকমের হাতিয়ার ব্যবহার করে থাকেন। এইভাবে ভাস্কর্য তৈরির প্রক্রিয়াটিকে মডেলিং বা প্রতিমানকরণ বলা হয়।

ভাস্কর্যশিল্পে প্রতিমানকরণের প্রক্রিয়াটি অতি প্রাচীন। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষ মাটির মূর্তি করে আসছে। প্রাচীন মিশর, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতবর্ষে মাটির মূর্তি তৈরি করার কৌশল জানতো। এরা প্রথম দিকে কাঁচা মাটিতে তৈরি মূর্তি শুকিয়ে শক্ত করতো। কিন্তু এই মূর্তি অতিভঙ্গুর হতো। সে কারণে এই মূর্তিকে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হতো স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য। কাঁচা মাটির প্রতিমান তৈরি প্রক্রিয়াটি ভারতবর্ষে এখনো প্রচলিত আছে। এর ভিতরে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত নমুনা হলো বাংলাদেশের শারদীয় দুর্গা পূজার জন্য নির্মিত প্রতিমাসমূহ। টেরাকোটা (পোড়ামাটি)

মোম দিয়ে তৈরির প্রতিমানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নমুনা হলো- মাদাম টুস্যোড (Madame Tussaud)-এর যাদুঘরের মোমের মূর্তিগুলো। মৌমাছির সৃষ্ট বাসা ভেঙে মোমের মূল উপাদান সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত মোমকে পরিশোধিত করা হয় এবং পরে তা মূর্তি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। মাটির মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে মৃৎশিল্পীরা মাটিকে মূর্তি বানানোর উপযোগী করে নেন। এক্ষেত্রে মাটিকে কাদায় পরিণত করে অতি নমনীয় করা হয়। উল্লেখ্য হাড়ি-পাতিল তৈরির সময় কুমাররা যেভাবে মাটি তৈরি করেন, এর প্রক্রিয়াটিও প্রায় একই রকম। ছোটো আকারের একই রকম অনেক মূর্তি তৈরি করার সময় সাধারণ মৃৎশিল্পীরা ছাঁচ ব্যবহার করেন। কিন্তু দুর্গা প্রতিমার মতো বড় মূর্তি তৈরি করার সময়, শিল্পীরা একটি কাঠ বা এই জাতীয় কোনো কঠিন বস্তু দিয়ে কাঠামো তৈরি করেন। এরপর এর উপরে খড় জাতীয় উপকরণ দিয়ে কাঠামোর চূড়ান্ত রূপ দেন। প্রতিমা-শিল্পীরা এই কাঠামোর উপর কাদা মাটি লাগিয়ে মূর্তির প্রাথমিক রূপ দেন। প্রাথমিক অবয়ব তৈরির পর, নানা ধরনের কাঠ বা ধাতুর হাতিয়ার ব্যবহার করে, মূর্তিটির চূড়ান্ত রূপ দেন। সাধারণত এই মডেলিং-এ মূল অবয়বকেই প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ভারতবর্ষে মানুষ বা দেবতার প্রতিমার সাথে আবরণ এবং আভরণ দুই-ই ব্যবহার করা হয়। অনেক শিল্পী, মাটিকে পোড়ালে যে স্বাভাবিক রঙ পাওয়া যায়, সেই রূপেই মূর্তিকে রাখেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে এর উপর বাড়তি রঙ ব্যবহার করা হয়। মাটির মূর্তিক চকচকে বা মসৃণতা আনার জন্য অনেক সময় বিশেষ ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং বিশেষ ধরনের চুল্লীতে তা পোড়ানো হয়।


সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki