রিলিফ
ইংরেজি :
Sculpture
ভাস্কর্য উপস্থাপনের একটি কৌশল বিশেষ। এটি পর-নির্ভর উপস্থাপন যোগ্য ভাস্কর্য। এই জাতীয় ভাস্কর্য উপস্থাপনে একটি প্রেক্ষাপট থাকে এবং এর উপরে ভাস্কর্যটি থাকে। ভাস্কর্য-এর পরিভাষায় একে বলা হয় রিলিফ (relief)। ল্যাটিন ক্রিয়াপদ levo (উত্থিত করা) থেকে বর্তমান relief শব্দটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে একটি প্রেক্ষাপটকে খোদাই করে কোনো অবয়বকে উপস্থাপন করা হয় এবং এই অবয়বটি ওই প্রেক্ষাপটের সাথে যুক্ত থাকে এবং পুরো অবয়বের ভার বহন করে। অবয়বকে ভালোভাবে উপস্থাপনের জন্য এক্ষত্রের প্রেক্ষাপটকে সমতল করা হয়।
রিলিফ তৈরি করার অন্যতম উপাদান হলো কাঠ বা পাথর। কাঠ বা পাথর কেটে রিলিফ তৈরি করা হয়। কিন্তু অনেক সময় ঢালাই পদ্ধতিতেও রিলিফ তৈরি করা হয়।
একটি রিলিফ ভাস্কর্যে উপস্থাপিত অবয়বটি কতটা প্রেক্ষাপট থেকে উন্নীত অবস্থায় আছে, তার উপর ভিত্তি করে রিলিফকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো―
২.১ উচ্চ রিলিফ (high relief): এই জাতীয় রিলিফের প্রেক্ষাপট উত্থিত অবয়বের ৫০ ভাগ বাইরের দিকে থেকে, বাকি পঞ্চাশ ভাগ প্রক্ষাপট তলের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে এর ত্রিমাত্রিক রূপ পাওয়া যায় বটে, কিন্তু চিত্রের পিছনের অংশ কখনোই দেখা যায় না।
২.২. মধ্য রিলিফ (mid-relief) : এই জাতীয় রিলিফের প্রেক্ষাপট উত্থিত অবয়বের ২০-৪৫ ভাগ বাইরের দিকে উত্থিত থাকে।
২.৩. নিম্ন রিলিফ (low-relief) : এই জাতীয় রিলিফ প্রেক্ষাপটের তলের সাথে প্রায় মিশে থাকে। কিন্তু অবয়ব আছে এমনটা বুঝা যায়।
|
|
|
গ্রিক পৌরাণিক জীব সেন্টর-এর সাথে ল্যাপিথস-এর যুদ্ধের উচ্চ রিলিফ। এর হাতের কিছু অংশ প্রেক্ষাপটের সাথে যুক্ত নেই। এর মধ্যভাগ অংশ উচ্চ রিলিফ। |
পারস্যের মধ্য রিলিফের ছবি এর কোনো কোনো নিম্ন রিলিফের কাজও দেখা যায় |
গ্রিক সম্রাট পাপিয়েনস (২৩৮ খ্রিষ্টাব্দ), মুদ্রার উপরে খোদিত লো রিলিফ |
এছাড়া কিছু বিশেষ ধরনের রিলিফ রয়েছে, যেগুলোকে যথার্থই উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন হিসাবে ভাগ করা যায় না। এই জাতীয় রিলিফগুলো হলো—
|
এই রিলিফে ফারাও আখেনাটেন এবং এর স্ত্রী নেফারতিতি এবং এঁদের কন্যাদ্বয়। |
সাঙ্কেন রিলিফ (Sunk বা sunken relief) :
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায়
এই রিলিফ প্রচুর দেখা যায়। প্রথমদিকে মিশরীয় লিপিতে এর ব্যবহার ছিল পরে বড় ধরনের
দেওয়ালের জন্য বড় বড় এই জাতীয় রিলিফ তৈরি করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে একটি পাথরের ফলকের উপরিতল
কেটে কেটে
এই রিলিফ ভাস্কর্য তৈরি করা হতো।
এই রিলিফে
সাধারণত রৈখিক হতো। তবে
অনেক সময়ই মূল ভাস্কর্যটি লো-রিলিফে করা হতো। যে অংশটির ওপর লো-রিলিফ করা
হতো, সে
অংশটি মূল সমতলের
চেয়ে কিছুটা ভেতরে ঢোকানো অবস্থায়
রাখা হতো। যার ফলে
ভাস্কর্যের লো-রিলিফটি কখনই মূল
সমতলের ওপরে উঠে আসতো
না।
এই জাতীয় রিলিফে এক ধরনের আলো-ছায়ার খেলা
চলে। প্রখর আলোতে এর মূল
সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
রৈখিক
প্রান্তীয় অংশটির ছায়ার মধ্য
রেখে মূল অবয়বটিকে প্রকাশ করা
হয়।
ফ্রান্সের গোথিক কাউন্টার রিলিফ, উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার (৯.৮ ইঞ্চি)। বিষয় খ্রিষ্টের জীবন |
কাউন্টার
রিলিফ
(Counter-relief):
ভাস্কর্যটি একেবারে
উপরিতলের ভেতরে খোদাই করে গড়ে তোলা হয়।
ভাস্কর্য জগতে এর অপর নাম
intaglio।
বাংলায় একে বলা যায় এক ধরনের খোদাই ভাস্কর্য।
এই ধরনের খোদাই কাজে কোনো
তলের ভিতরভাগ খোদাই করে একটি তল তৈরি করা হয় এবং এর ভিতরে রিলিফটি প্রকাশিত হয়।
কোনো মূর্তিকে যদি নরম কাদার উপরে চেপে ধরে ছাপ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে ওই ছাপটি
কাউন্টার রিলিফ হিসাবে বিবেচিত হবে। রিলিফের বিপরীত অর্থে কাউন্টার রিলিফ বলা যায়।
ছোটো মাপের কাউন্টার-রিলিফের কাজ দেখা যায়,
মৃৎপাত্রের গায়ে, হাতির দাঁতে তৈরি শিল্পকর্মে বা পাথরের তৈরি সামগ্রীতে।
মূল্যবান পাথরের গায়ে এই জাতীয় রিলিফ ব্যবহার করে অলঙ্কারে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া দেয়ালচিত্রে, দরজায় বা পাত্রের গায়ে এই জাতীয় রিলিফ দেখা যায়।