যুদ্ধাপরাধ
ইংরেজি : war crime

কোনো দেশে যুদ্ধ বা সামরিক সংঘাত চলাকালীন সময়ে, সাধারণ জনগণকে খুন, জনসাধারণের সম্পত্তি লুণ্ঠন, ধর্ষণ, কারাগারে আটক ব্যক্তিকে বিনাবিচারে হত্যা, দেশের নগর, বন্দর, হাসপাতালে কোন ধরনের সামরিক উস্কানি ছাড়াই আক্রমণ বা ধ্বংস প্রভৃতি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৮৯৯ ও ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে হেগ কনভেনশন সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আইনসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়।

১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে হলি রোমান সাম্রাজ্যে জার্মান ও আলসেইক সেনাবাহিনীর কমান্ডার পিটার ভন হ্যাজেনব্যাক-এর যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। এই ট্রাইবুনালকে আর্ন্তজাতিক ভাবে প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কতিপয় জামার্ন সামরিক বাহিনীর কমান্ডারকে জার্মান সুপ্রীম কোর্টে বিচার করা হয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে।

আধুনিক যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের লন্ডন ঘোষণাকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই অগাষ্ট প্রকাশিত লন্ডন ঘোষণাতে নূরেমবার্গের গণহত্যার বিচার সংক্রান্ত ধারাতে যুদ্ধাপরাধ সর্ম্পকে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়। নূরেমবার্গের বিচার কয়েকটি সামরিক ট্রাইবুন্যালের সমন্বয়ে ১৯৪৫-১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত হয়। এই বিচার জার্মানির বেভারিয়াতে নূরেমবার্গের বিশেষ আদালতে করা হয়। এই সময় ২৪জন গ্রেফতার হওয়া নাৎসি জার্মানের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে নূরেমবার্গ আন্তর্জাতিক আদালতে নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়। যাদেরকে আদালতে হাজির করা হয় তাদের শাস্তি দেয়া সম্ভব হলেও পলাতকদের গ্রেফতারের পর বিচারের রায় কার্যকর হয়।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট জেনেভায় বিশ্বের ৫৮টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত। এ কনভেনশনের আলোচ্য বিষয় ছিল যুদ্ধ আইন, যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের সাথে আচরণ প্রভৃতির বিধির উপর ৪টি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও ৩টি প্রটৌকলের সমন্বয়ে গঠিত চুক্তিসমূহ। অর্থাৎ আগের ৩টি চুক্তির আপডেট করে, এর সাথে ৪ নম্বর চুক্তিটি যোগ করা হয়। তাই এটাকে 4th Geneva Conventionও বলা হয়। এসব চুক্তির মধ্যে সামরিক সংঘাত ও যুদ্ধকালীন সময়ে বেসামরিক লোকের মৌলিক অধিকার ও প্রতিরক্ষার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সবগুলি বা প্রায় সবগুলি চুক্তি ও প্রটৌকলে মোট ১৯৪টি দেশ স্বাক্ষর করে। ফলে জেনেভা কনভেনশন একটি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছায়।

১৯৯০-এর দশকে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার গণহত্যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সে সময় স্থায়ী ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রকটভাবে দেখা দেয়। অবশেষে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জুলাই রোম সম্মেলনে একটি স্থায়ী International Criminal Court স্থাপনের সিদ্ধান্ত ও সংবিধি ১২০টি দেশের 'হ্যাঁ' ও ৭টি দেশের 'না' ভোটের ফলাফলের মধ্য দিয়ে গৃহীত হয়। "না" ভোট প্রদানকারী ৭টি দেশ হল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইসরাইল, ইরাক, লিবিয়া, কাতার এবং ইয়েমেন। রোম সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও বিধিবদ্ধ আইনকানুনকে Rome Statute বলা হয়। অবশেষে ২০০২ সালের ১লা জুলাই হেগে স্থায়ী International Criminal Court স্থাপন করা হয়। এই দিন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সংঘটিত নিম্নলিখিত চার ধরনের অপরাধের বিচার ভবিষ্যতে এখানেই সম্পন্ন হবে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানী বাহিনী এবং অনুগত এদেশীয় দালালরা যে মানবতাবিরোধী কার্যক্রম করে এবং এই সূত্রে তারা ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা, ২ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কুকর্ম করে। এই কুকর্মকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য একটি আদালত গঠন করা হয়েছে। এর নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (বাংলাদেশ)। ইংরেজিতে : International Crimes Tribunal (Bangladesh), সংক্ষেপে ICT (Bangladesh))