আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত উল্লেখযোগ্য, যুদ্ধাপরাধীর তালিকা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)
ইংরেজি: International Crimes Tribunal (Bangladesh)
সংক্ষেপে: ICT (Bangladesh))

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানী বাহিনী এবং অনুগত এদেশীয় দালালরা যে মানবতাবিরোধী কার্যক্রম করে এবং এই সূত্রে তারা ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা, ২ লক্ষ নারীকে ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কুকর্ম করে। এই কুকর্মকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য একটি আদালত গঠন করা হয়েছে। এর নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (বাংলাদেশ)।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি  মাসের শেষের দিকে, দালাল আইনে অন্যান্য প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে এই সময়ে শীর্ষস্থানীয় সকল যুদ্ধাপরাধীরা কারাগারে ছিল। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সূত্রে অনেক যুদ্ধাপরাধীই মুক্তি পান।

 ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান- হত্যা করার পর, ক্রমান্বয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কালক্রমে যুদ্ধাপরাধীরা নিজেদের সুসংহত করে, বাংলাদেশের মন্ত্রীপরিষদে জায়গা করে নিয়েছিল। এ নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের স্বপক্ষের জনগণের ভিতরে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সক্রিয় ছিল। এই অবস্থায়  ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনের সময়, বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার অঙ্গীকার যুক্ত করেছিল। ২০০৮-এর ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ  নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয়ী হয় এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রক্রিয়া শুরু করে। এই সূত্রে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সিনিয়র সাংসদরা প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানালে স্পিকার তা অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা এই প্রশ্ন ভোটে নেন। মৌখিক ভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে সরকার বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারিভাবে এ সংক্রান্ত ঘোষণাটি দেওয়া হয় ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ। এই বিষয়ে যে প্রাথমিক আইনগত খসড়া করা হয়েছিল, তার কিছু সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ এবং শীর্ষ আইনজীবীদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মে বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়ে ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টটি আইন কমিশনে পাঠায়। এই সূত্রে আইন কমিশন দেশের বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, বিচারপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আরও কয়েকজন আইনজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত ট্রাইব্যুনালে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে সংশোধন করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। আইন কমিশনের সকল মতামত বিবেচনা করে, ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য বিষয়টিকে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু সংশোধনী জাতীয় সংসদে মৌখিক ভোটে পাশ করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারের সাথে যুক্ত ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা এবং 'ট্রাইব্যুনাল স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবে' এই মর্মে সুস্পষ্ট আইনগত বিধান সন্নিবেশ করা সহ আরও কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। এই সূত্রে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং তাদের অপরাধের বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সময় নাগরিক সমাজের দাবি এবং তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরাতন হাইকোর্ট ভবনকে আদালত হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। এর দ্বারা ট্রাইবুনাল-১ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ট্রাইবুনালের প্রথম বিচার