দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী


বাংলাদেশ-এর জামায়েত-ই-ইসলামী -এর রাজনৈতিক নেতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন যুদ্ধাপরাধী।
 

১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারী, পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ইউসুফ সাঈদী। মায়ের নাম সালেহা সাঈদী। ছোটো বেলায় তিনি নিজ এলাকায় এলাকাবাসীর কাছে দেলোয়ার শিকদার নামে তিনি পরিচিত ছিলেন। পরে তিনি তাঁর পরিচয়পত্রে সাঈদী নাম ব্যবহার করেন স্বাধীনতার পর থেকে।

তার পাশের গ্রামের একজন বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানাচ্ছেন, এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন দেলোয়ার শিকদার নামে।
'উনাকে সবাই দেলোয়ার শিকদার নামে চিনতো। স্বাধীনতার সময় তো আমার বয়স খুব কম ছিল। এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে আমি শুনছি এইটা। উনার বংশ শিকদার বংশ। উনার নাম কিভাবে সাইদী হলো সেটা বলতে পারবো না। হয়তো সাঈদখালি নাম থেকেই উনি নিজের নাম করেছেন সাঈদী।'

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়, শিকদার কখনো তাদের পারিবারিক উপাধি ছিল না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলছেন, খুব সাধারণ এক গৃহস্থ পরিবারের সন্তান তিনি। উনার বাবা একজন সাধারণ মানুষ ছিল। গ্রামে জমি-জিরাত ছিল। তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদিও অনেক তত নামকরা কোন পরিবার ছিল না।


তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। এরপর শর্ষিনার পীর পরিচালিত আলীয় মাদ্রাসা, বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া মাদ্রাসা এবং খুলনা আলীয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি গ্রামের কাছেই এক বাজারে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন, পরে খুলনায় ব্যবসা করেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি পিরোজপুরের নিজ এলাকায় চলে আসেন। এই সময় তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগিতা করা শুরু করেন। এই সময় তাঁর এলাকায় তিনি হত্যা, ধর্ষণ ও লুট-তরাজ করেন। তিনি স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করেন।

 

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি বেশ কিছুদিন অজ্ঞাতবাস করেন। এরপর তিনি খুলনাতেই তাঁর আস্তানা গাড়েন। তিনি এরপর থেকে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহিফলে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন এবং খুব দ্রুত তাঁর সুকণ্ঠ এবং ওয়াজের ভঙ্গিমার গুণে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। প্রথম দিকে অনেকেই তাঁকে জামায়েত-ই-ইসলামী -এর সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করলেও, প্রকাশ্যে তিনি এই বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত একটি গণ তদন্ত প্রতিবেদনে সাঈদী কে আল্‌ বদর বাহিনী কর্তৃক নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাথে যুক্ত থাকার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি
জামায়েত-ই-ইসলামী -এর সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়েত-ই-ইসলামী  তাঁকে মনোনয়ন দেন এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
 

২০০১ খ্রিষ্টাব্দে জামায়েত-ই-ইসলামী -এর পক্ষে বিএনপি'র সাথে জোটবদ্ধ অবস্থায় জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করেন।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের যথাযথ কতৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের পর, বক্তৃতা করার জন্য সাঈদী যুক্তরাজ্যে যান।


২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগস্ট পিরোজপুরে  মানিক পশারী নামে একজন সাঈদী-সহ আরও চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মানিক পশারী অভিযোগ করেন যে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নেতৃত্বে তাদের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল এবং বাড়ির তত্বাবধায়ক কে হত্যা করা হয়েছিল।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে জুলাই, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সাঈদীকে বিদেশ ভ্রমণে বাধা দেয়। তার বিদেশ ভ্রমণের উপর সরকারের এই বিধিনিষেধ আরোপকে অস্বীকার করে, ২৭শে জুলাই সাঈদী হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন ফাইল করেন।  চেম্বার জজের সামনে এটর্নী জেনারেল বিধিনিষেধের সপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন যে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সাঈদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন এবং সাঈদীকে যদি বিদেশ যেতে বাধা না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরকে আদালতে অভিযুক্ত করার সরকারের যে উদ্যোগ, এর বিরূদ্ধে বিদেশে প্রচারণা চালাতে পারেন।

বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে বৃটিশ মিডিয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাঈদীর ভিসা বাতিলের জন্যে অনুরোধ জানায়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী একটি মামলা করেন। এরই প্রেক্ষিতে  ২৯ জুন তারিখে রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে পুলিশ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করে।  অভিযোগে বলা হয়েছিল, সাঈদী ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে।

৪ঠা আগষ্ট, ট্রাইবুনাল-১ -এ রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আদালতের কাছে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান। যেহেতু আগেই তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগরে রাখা হয়েছিল। তাই তাঁকে ১০ই আগষ্ট আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। সাঈদীর পক্ষের আইনজীবী ট্রাইব্যুনালকে জানান অভিযুক্ত ব্যক্তি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আদালতে উপস্থিত হতে পারেন নি। ফলে ট্রাইব্যুনাল ২৪শে আগষ্ট সাঈদীকে হাজির করার পরিবর্তিত নির্দেশ জারি করেন। ২৪শে আগষ্ট, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ২১শে সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করার নতুন তারিখ নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনাল।

২১শে সেপ্টেম্বর সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে শুনানির জন্য আনা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নিজামুল হক, এটিএম ফজলে কবির ও একেএম জহির আহমেদ এর নেতৃত্বে শুনানির কাজ শুরু হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন যথাযথভাবে উপস্থাপিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করে তাকে পুনরায় কারাগারে ফেরত পাঠায়। ট্রাইব্যুনাল এই আবেদনের ওপর সাঈদীর উপস্থিতিতে ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখকে ফের শুনানির দিন ধার্য করে। ২২শে সেপ্টেম্বরে সাঈদী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে পূর্বনির্ধারিত তারিখ  ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হবে না বলে, ২১শে সেপ্টেম্বর বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতকে অবহিত করে। সাঈদীর অনুপস্থিতিতে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ১২ই অক্টোবর শুনানির পরবর্তী তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু ১২ই অক্টোবর তারিখে সাঈদী অসুস্থ থাকায় ট্রাইবুনালে হাজির করা হয় নি। তার অনুপস্থিতিতে শুনানিকালে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২রা নভেম্বর শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। তবে বারবার অসুস্থতার জন্য, ২রা নভেম্বর সাঈদীকে প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সে করে হলেও দরকারী কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়। এই দিনে সাঈদীকে আদালতে হাজির করা হয়। এই দিন বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ২৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আটক রাখার আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনাল একই সাথে ২৩শে ডিসেম্বরের মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন অথবা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত সংস্থাকে নির্দেশ দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখার আবেদন করে আদালতকে জানান যে সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া গেছে বিধায় তাকে তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার রাখা প্রয়োজন।

 

পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন সাঈদী

১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শুরুতেই বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেওয়ার কোনো দরকার নাই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। উনি শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নন, উনি দুবারের এমপি। জামায়াতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাঁকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমাদের ফিরে যেতে হবে ৪০ বছর আগে। তখন তিনি ৩০ বছরের যুবক ছিলেন। তিনি ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন তিনি কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম পাস। উর্দুতে ভালো কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, তিনি সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি; বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ।’
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।
- See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-28/news/332774#sthash.2lfx1rVE.dpuf

পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন সাঈদী

১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শুরুতেই বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেওয়ার কোনো দরকার নাই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। উনি শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নন, উনি দুবারের এমপি। জামায়াতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাঁকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমাদের ফিরে যেতে হবে ৪০ বছর আগে। তখন তিনি ৩০ বছরের যুবক ছিলেন। তিনি ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন তিনি কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম পাস। উর্দুতে ভালো কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, তিনি সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি; বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ।’
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।
- See more at: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-28/news/332774#sthash.2lfx1rVE.dpuf

বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর তাঁর ১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শুরুতেই বিচারপতি যে ভূমিকা রাখেন, তা হলো

'আমরা রায়ের আগে দুটি কথা বলতে চাই। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় দেওয়ার কোনো দরকার নাই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার মানুষ যান। উনি শুধু প্রখ্যাত মাওলানা নন, উনি দুবারের এমপি। জামায়াতের নায়েবে আমির। কিন্তু আমরা তাঁকে নায়েবে আমির কিংবা সাংসদ হিসেবে বিচার করছি না। আমাদের ফিরে যেতে হবে ৪০ বছর আগে। তখন তিনি ৩০ বছরের যুবক ছিলেন। তিনি ছিলেন বিবাহিত, এক সন্তানের জনক। পিরোজপুরে সাউদখালীতে বাড়ি। তখন তিনি কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম পাস। উর্দুতে ভালো কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়। আমাদের বিচার করতে হবে, তিনি সে সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না। আমরা সেই ৩০ বছরের যুবকের বিচার করছি; বর্তমানের সাঈদীর বিচার করছি না, যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে গ্রামের নিরীহ লোক ও সাধারণ মানুষ।'
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন।

২০১১ সালের ১১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা। আদালত অভিযোগ গঠন করে ১০ আগষ্ট। [সাঈদীর-বিরুদ্ধে-যুদ্ধাপরাধের-অভিযোগ-গ্রহণ।

৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ধারায় সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ গঠন করা হয়, তার মধ্যে চী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা (জেনোসাইড) ও বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন এবং তাতে সহযোগিতা করা। মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অপহরণ, আটক রাখা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তর করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা।

 

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ৮ এপ্রিল থেকে নয় কার্যদিবসে জবানবন্দি দেন রাষ্ট্রপক্ষের শেষ সাক্ষী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন। ৭ মে থেকে আসামিপক্ষ তাঁকে ৪৮ কার্যদিবস জেরা করে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিপক্ষে ১৭ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। ৬ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখা হয়। কিন্তু কিন্তু স্কাইপে বিতর্কের জের ধরে ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে বিচারপতি নিজামুল হক সরে দাঁড়ালে ১৩ ডিসেম্বর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। আসামিপক্ষ পুনর্বিচারের আবেদন জানায়।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের পুনর্বিচারের আবেদন খারিজ করে এবং দুই পক্ষকে আবার মামলার সারসংক্ষেপ ও আইনি বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। সে অনুসারে দ্বিতীয় দফায় দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ২৯ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আবার রায় অপেক্ষাধীন (সিএভি) রাখেন।

 

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ আন্তর্জাতিক আদালত-এর, ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর জনাকীর্ণ আদালতে আজ মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, সাঈদীর বিরুদ্ধে থাকা ২০টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬, ১৯ নম্বর অভিযোগ। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই অন্যগুলোতে আলাদা করে কোনো শাস্তি নির্ধারণ করা হয় নি। অন্যদিকে বিরুদ্ধে আনা অন্য ১২টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে সেগুলো থেকে খালাস দেওয়া হয়।
 


সূত্র :