বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
|
নিবন্ধন নম্বর |
০০৭ |
নিবন্ধন তারিখ |
০৩/১১/২০০৮ |
প্রতীক |
ধানের শীষ |
প্রতীক নমুনা |
|
সভাপতি |
বেগম খালেদা জিয়া |
মহাসচিব |
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর |
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা |
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৮/১, নয়াপল্টন (ভি আই পি রোড), ঢাকা-১০০০। |
ফোন |
৮৩১৮৬৮৭ |
ফ্যাক্স |
৮৬২১১৫৫ |
মোবাইল |
০১৭২০৩৮৫৪৯১ |
ইমেইল |
bnpcentral@gmail.com |
বিএনপি
১৯৭৭
খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত সায়েমকে অপসারণ করার পর, ২১শে এপ্রিল
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে
জিয়াউর রহমান
শপথ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে, পূর্ববর্তী 'বাকশাল'-ই প্রথা
বিলোপ করে, দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন এবং তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর
সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিকভাবে
জিয়াউর রহমান
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন এবং জয়লাভ করেন।
১৯৭৮
খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তাঁর সামরিক সরকারের উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি
আব্দুস সাত্তারকে প্রধান করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠা করেন।
ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর
রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি ৭৬.৬৭% ভোট
পেয়ে বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রপতির পদে বহাল থাকেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর তিনি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন তিনি নিজে
এবং তিনি এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর অধ্যাপক এ. কিউ. এম
বদরুদ্দোজা চৌধুরী এই দলের প্রথম মহাসচিব হন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে আগস্ট
পূর্বগঠিত জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং জাগদলের সকল
সদস্যদের বিএনপির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিএনপি-র অগ্রযাত্রা
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই নভেম্বর থেকে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং সামরিক
শাসনের ক্রম-শৈথিল্য অনুসরণে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন।
১৯৭৯
খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনেই
দ্বিতীয়
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি ৩০০টি আসনের ভিতরে ২০৭টি আসন লাভ করে।
এই নির্বাচনে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন লাভ করেছিল। এই বৎসরের ১লা
এপ্রিলে সামরিক শাসনের ভিতরেই প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে। এরপর সংবিধানের পঞ্চম
সংশোধনীর বিধি অনুসারে, ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যহার
করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি পূর্ণাঙ্গরূপে বেসামরিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে মে-তে সংঘটিত
একটি সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি
হন। পরে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন। পরবর্তী প্রায় এক যুগ বিএনপি রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতার বাইরে থাকে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে
তৃতীয়
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল।
এই নির্বাচনে
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩০০টি
আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। এরপর বিএনপি এরশাদ সরকারের
বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ চতুর্থ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
ফলে জাতীয়
পার্টি (এরশাদ) ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন
নিয়ে জয় লাভ করে। কিন্তু
গণ-আন্দোলনের
মুখে, ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। পরে
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে এবং সমর্থনে তিন দফা রূপরেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি
পঞ্চম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে
বিএনপি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। এই নির্বাচনে
জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দেন। এ
নির্বাচনে বিএনপি (১৪২টি) সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করে। তারা
জামায়েত-ই-ইসলামীর সমর্থন
নিয়ে সরকার গঠন করে। মূলত এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সামরিক শাসন মুক্ত হয়।
কিন্তু
জামায়েত-ই-ইসলামীর সাংসদের উল্লেখযোগ্য জামাতের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায়নে
সহযোগিতা করার জন্য বিএনপি বিতর্কিত হয়ে পড়ে।
বিনএপি সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়াই ১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারি
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল এই
নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। এই নির্বাচনে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%।
নির্বাচনটিতে বিএনপি ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। এ নির্বাচন
আওয়ামী লীগ-সহ অন্যান্য
রাজনৈতিক দল বর্জন করায় একই বছর ১২ জুন
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে
আওয়ামী লীগ।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিএনপি
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ২০০১
খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের
অষ্টম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ
করেছিল। এই নির্বাচনে বিএনপি চারটি দল নিয়ে একটি ঐক্যজোট গঠন
করেছিল। এই ঐক্যজোটের দলগুলো ছিল—
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট ২১০টি আসন লাভ করে।
এর ভিতরে নির্বাচনে ১৯৩টি আসন লাভ করেছিল বিএনপি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে
আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৬২টি
আসন। তবে মোট ভোট প্রাপ্তির বিচারে
আওয়ামী লীগ সমীহ
জাগিয়েছিল। উল্লেখ্য প্রদেয় ভোটের ৪১.৪০ ভাগ পেয়েছিল বিএনপি এবং ৪০.০২ ভাগ পেয়েছিল
আওয়ামী লীগ।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পর বিএনপি মনোনয়নে দলের প্রথম মহাসচিব অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ছয় মাস রাষ্ট্রপতি থাকার পর বি. চৌধুরী, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্রে পদত্যাগ করেন এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ মাসে বিএনপির বিএনপির একটি অংশ নিয়ে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল 'বিকল্পধারা বাংলাদেশ' গঠন করেন।
পরবর্তী পাঁচ বৎসরে নানা কারণে
বিএনপির জনপ্রিয়তা অসম্ভব হ্রাস পায়। এই শাসনামলে চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এ
বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১০ জনের অধিক গ্রামবাসী মৃত্যবরণ
করে। এছাড়া ঢাকার শনির আখড়ার বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে সাধারণ জনতার আন্দোলন, সরকারী
ত্রাণ তাহবিল থেকে ত্রাণ সামগ্রী সরকারি দলের সাংসদদের লুটপাটের ঘটনা, বেগম খালেদা
জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির কথা জনমনে ব্যাপকভাবে আলোড়ন তোলে। এছাড়া বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীত্ব প্রদান এবং স্বাধীনতা বিরোধী
শক্তিকে মদদ দেওয়ার জন্য, বিএনপি চরমভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়ে।
২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে
আওয়ামী লীগ-এর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী
শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান। কিন্তু মানুষ হতাহত হয়। এই সময় সাংসদ
জিল্লুর রহমান -এর সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী
আইভি
রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
এই সরকারের বৈধ মেয়াদ ২০০৬ সালের ৬
অক্টোবর শেষ হওয়ার পর, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে দেশে শুরু হয় ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘাত।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম জাতীয় সংসদের
মেয়াদ শেষ হবার ঠিক আগের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাদের একজন কর্ণেল (অব:) ড: অলি আহমেদ
বীর বিক্রম, বিএনপি সরকারের কতিপয় নেতা কর্মী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে
বিএনপি ত্যাগ করেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর 'বিকল্প ধারা'র সাথে একীভূত হয়ে
নতুন রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংক্ষেপে এল.ডি.পি. গঠন করেন।
পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০০৭
খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সারাদেশে জরুরি অবস্থা
জারি করেন। আর এ সময় থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই বছর দেশ পরিচালনা করেন
ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
এ সরকারের
তত্ত্বাবধানে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত
নবম জাতীয়
সংসদ নির্বাচনন। এই নির্বাচনে ২৩০টি আসন নিয়ে জয়লাভ
করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায়
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং ২৭টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয়
পার্টি
২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সাবেক
সংসদীয় হুইপ ও জেষ্ঠ্য নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ম
পালন করে আসছিলেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে
মৃত্যুবরণ করার পর জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের
মহাসচিবের ভার দেয়া হয়।
২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল বিএনপি
১৮ দলীয় জোট গঠন করে। এই জোটে ছিলে - জামায়াতে
ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে
ইসলাম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক
পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল
ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ
ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও পিপলস লীগ।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাশ হয়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো,
নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় চালু করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু
করে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ চলমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়। এই
প্রেক্ষিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয়।
এরই ভিতরে যুদ্ধাপরধীদের বিচার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫
ফেব্রুয়ারি [মঙ্গলবার], জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
আবদুল
কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি
ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায়
দেন। এই রায় প্রকাশের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এরই
ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয়
শাহবাগ গণজাগরণ। উল্লেখ্য, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে,
বাংলাদেশ-এর রাজধানী
ঢাকার
শাহবাগ-এর
চৌরাস্তার মোড়ে আন্দোলনকারীরা সমবেত হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে
স্বাধীনতার স্বপক্ষী বিশাল জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। এরই সূত্র ধরে
আন্দোলনটি সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে ক্রমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী
পক্ষ ছাড়া সকল মানুষ এই জাগরণকে সমর্থন করে এবং সক্রিয়ভাবে গণ-জমায়েতের অংশভাগী হয়।
এই সময় বিএনপি নতুনভাবে যুদ্ধাপরাধীর প্রশ্নে বিতর্কিত হয়ে পড়ে। মূলত বিএনপি
পরোক্ষভাব যুদ্ধাপরাধীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়ে।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি
দশম জাতীয়
সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ
দলই বর্জন করে। ফলে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করে। এই নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ১৫৪ আসনে
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার ফলে এবারের নির্বাচনে সারা দেশের মোট
৯,১৯,৬৫,৯৭৭ ভোটারের মধ্যে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান ৪,৩৯,৩৮,৯৩৮ জন।
বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করার পর, ধীরে ধীরে রাজনৈতিক শক্তি হারাতে থাকে। এছাড়া
পরবর্তী চার বছর
আওয়ামী লীগ ব্যাপক
উন্নয়ন করায় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। আবার দলীয় ব্যক্তি বিশেষের
দুর্নীতির জন্য কিছুটা জনপ্রিয়তা হারায়।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়
একাদশ
জাতীয় নিরবাচন। সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এবং আর কিছু দল নিয়ে তৈরি হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
তৈরি করে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই
ঐক্যফ্রন্ট
একাদশ
জাতীয় নিরবাচনে অংশগ্রহণ করে। এই নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছিল ৭টি আসন। এর
ভিতরে বিএনপির আসন ছিল ৫টি আসন।
বিএনপির রাজনীতির মূল চারটি নীতি
এই দলের প্রধান নীতি হিসাবে গ্রহণ করা হয়, চারটি বিষয়কে গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো-
১. সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র উপর বিশ্বাস,
২. জাতীয়তাবাদ,
৩. গণতন্ত্র,
৪. সমাজতন্ত্র (অর্থনৈতিক ও সমাজিক ন্যায়বিচারের অর্থে)।
বিএনপি'র ঘোষণাপত্রে এ দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিচে
এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো (বিএনপির
ওয়েব পৃষ্ঠা)
(ক) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ-ভিত্তিক ইস্পাতকঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও
সুসংহত করা।
(খ) ঐক্যবদ্ধ এবং পুনরুজ্জীবিত জাতিকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদ,
সম্প্রসারণবাদ, নয়া-উপনিবেশবাদ, আধিপত্যবাদ ও বহিরাক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা
করা।
(গ) উৎপাদনের রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক
ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন।
(ঘ) জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামে-গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং
সার্বিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রচনা ও বাস্-বায়নের ক্ষমতা ও দক্ষতা জনগণের
হাতে পৌঁছে দেওয়া।
(ঙ) এমন এক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় সমাজের মৌলিক স্-রে
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়।
(চ) এমন একটি সুস্পষ্ট ও স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নিশ্চিতি দেওয়া
যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাঁদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারবেন।
(ছ) বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদীয়
পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং সুষম জাতীয় উন্নয়ন ও
সমৃদ্ধি আনয়ন।
(জ) গণতান্ত্রিক জীবন ধারা ও গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসাবে
গণনির্বাচিত জাতীয় সংসদের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার
সংরক্ষণ করা।
(ঝ) রাজনৈতিক গোপন সংগঠনের তৎপরতা এবং কোন সশস্ত্র ক্যাডার, দল বা এজন্সী গঠনে
অস্বীকৃতি জানানো ও তার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা।
(ঞ) জাতীয় জীবনে মানবমুখী সামাজিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন এবং সৃজনশীল উৎপাদনমুখী
জীবনবোধ ফিরিয়ে আনা।
(ট) বাস্-বধর্মী কার্যকরী উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে
ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সুষম অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা, যাতে করে সকল বাংলাদেশী নাগরিক অন্ন,
বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়।
(ঠ) সার্বিক পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীকে অগ্রাধিকার দান করা ও সক্রিয় গণচেষ্টার
মাধ্যমে গ্রাম বাংলার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
(ড) নারী সমাজ ও যুব সম্প্রদায়সহ সকল জনসম্পদের সুষ্ঠু ও বাস্-বভিত্তিক সদ্ব্যবহার
করা।
(ঢ) বাস্-বধর্মী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থাপনা
সম্পর্ক স্থাপন এবং সুষ্ঠু শ্রমনীতির মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উৎপাদন
নিশ্চিত করা।
(ণ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও বাংলাদেশের ক্রীড়া
সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার সাধন।
(ত) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশী জনগণের ধর্ম ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষার
সুযোগ দান করে বাংলাদেশের জনগণের যুগপ্রাচীন মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা, বিষে করে
অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর জাতীয় তাদের অধিকতর সুবিধা
ও অংশগ্রহণের সুযোগের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
(থ) পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আন্-র্জাতিক বন্ধুত্ব,
প্রীতি ও সমতা রক্ষা করা। সার্বভৌমত্ব ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের
সঙ্গে, তৃতীয় বিশ্বের মিত্র রাষ্ট্রসমূহের সাথে এবং ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম
রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে প্রীতি ও সখ্যতার সম্পর্ক সুসংহত এবং সুদৃঢ় করা।
সূত্র: