জাতীয় পার্টি- এরশাদ
সূত্র: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
http://www.ecs.gov.bd/Bangla

নিবন্ধন নম্বর

০১২

নিবন্ধন তারিখ

০৩/১১/২০০৮

প্রতীক

লাঙ্গল

প্রতীক নমুনা

প্রেসিডেন্ট

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

মহাসচিব

মসিউর রহমান রাঙ্গা

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা

৬৬, পাইওনিয়ার রোড, কাকরইল, ঢাকা-১০০০

ফোন

৯৩৩১৭০৫, ৯৩৩১৭০৭, ৯৩৩১৭২৭

ফ্যাক্স

৯৩৩১৭০৫

মোবাইল

০১৭১১৬৬২৮২৮ (দপ্তর)

ইমেইল

press.jatiyoparty@gmail.com

ওয়েব ঠিকানা

 

জাতীয় পার্টি
বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। লে.জে. হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি এই দলটি গঠন করেছিলেন।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে মে সামরিক অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি
জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন আব্দুস সাত্তার। এই সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশ সেনাবাহীনীর সেনাপ্রধান ছিলেন।

১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে অপসারিত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। এর তিন দিন পরে, তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করেন বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে।

এরশাদ সামরিক শাসক থেকে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্যোগ নেন। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ তাঁর নির্দেশে রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীর জনদল নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই বছরের ২রা নভেম্বর আহসান উদ্দিন চৌধুর জনদল নামে একটি রাজনৈতিক দল তৈরি করেন এবং এই দলের পক্ষ থেকে উনিশ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে নভেম্বর, রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে 'জনদল'-এর ঘোষণা দেন। তবে তৎকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনদলের কমিটি গঠন বিলম্বিত হয়। পরে বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে আহবায়ক এবং এম.এ মতিনকে সাধারণ সম্পাদক করে জনদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী জনদল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তী সময়ে জনদলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত হন মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হন রিয়াজউদ্দীন আহমদ (ভোলা মিয়া)।

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৩শে জুন এরশাদের উদ্যোগে জাতীয় ফ্রন্ট নামে একটি নতুন মোর্চা গঠিত হয়। এ ফ্রন্টে বিএনপি থেকে শাহ আজিজ গ্রুপ, এরশাদের জনদল, মুসলিম লীগের একাংশ, গণতান্ত্রিক পার্টি, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি যোগ দেয়। এছাড়া নির্দলীয় সদস্য হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যোগ দেন। এই সময় ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটিতে সদস্য ছিল ১৩ জন।

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১লা অক্টোবর দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আনার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সীমিত আকারে তুলে নেওয়া হয়।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি জাতীয় ফ্রন্টের ধানমন্ডিস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে, জাতীয় ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এই দলের চেয়ারম্যান হন এরশাদ এবং মহাসচিব নিযুক্ত হন অধ্যাপক এমএ মতিন। দলের কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত-জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনোয়ার জাহিদ। সাংবাদিক সম্মেলনে ফ্রন্টের শরিক দল জনদল, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টি, বিএনপি (শাহ) মুসলিম লীগ (সা) নিজেদের অস্থিত্ব বিলুপ্ত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টিতে একীভূত হয়। জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণার দিনে প্রথমে ২১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৫৭ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটিসহ ৬০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথম দিনে ২১ সদস্যের প্রেসিডিয়ামের মধ্যে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, মওদদ আহমেদ, কাজী জাফর আহমেদ, সিরাজুল হোসেন খান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী, এম কোরবান আলী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, একেএম মাঈদুল ইসলাম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আমিনুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন আবদুল হামিদ চৌধুরী, শামসুল হুদা চৌধুরী, এমএ সাত্তার ও বিচারপতি একেএম নুরুল ইসলাম। নবগঠিত কমিটিতে ৩ জন যুগ্ম মহাসচিব নিয়োগের ঘোষণা করা হয়। এরা ছিলেন, সফিকুল গণি স্বপন, মোস্তোফা জামাল হায়দার এবং লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে, আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট এবং ও বিএনপি' নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহবান জানানো হয়। বিএনপি- নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করে।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসনে বিজয়ী হয় এবং নিকটতম প্রতিদ্বদন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ৭৬টি আসনে। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্দেহ ও কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হয় এবং রাষ্ট্রপতি এরশাদের পদত্যাগের দাবি উঠে।

১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশব্যাপী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। এ পরিস্থিতিতে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন এবং পুনরায় জাতীয় পার্টির সরকারের অধীনেই সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি-সহ প্রধান সব বিরোধী দলই এ নির্বাচন বর্জন করে। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে বিজয়ী হয়।

১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এ অবস্থায় এরশাদ দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।

১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর মাসে কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মুখে এরশাদ পদত্যাগের করতে বাধ্য হন। সে সময়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ। এরপরে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ গ্রেফতার হন। এই সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন মিজানুর রহমান চৌধুরী।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রবল প্রতিকূলতার ভিতরে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করে ৩৫টি আসন লাভ করে। উল্লেখ্য এই নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩২টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। এই সময় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়। এ দলের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার করে। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। পরে দলীয় প্রধান এরশাদ এই জোট ত্যাগ করেন।। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টির অন্যতম নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নতুন দল গঠন করেন। তাঁর দলের নাম হয় জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)। এই দলের প্রতীক বাইসাকেল।

১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হয়ে এরশাদ জাতীয় পার্টির হাল ধরেন।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দে নেতৃত্বের কোন্দলে এরশাদের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজিউর রহমান মঞ্জুর জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পৃথকভাবে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। বর্তমানে এই দলের নাম জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান)। এই দলটি পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়। বর্তমানে এই দলটির নেতৃত্বে আছেন আন্দালিব রহমান। এই দলের প্রতীক গরুর গাড়ি। এই দলটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) নামে পরিচিত।

মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার এক পর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। নির্বাচন কমিশন এই দলটির প্রতীক বরাদ্দ করেছে কাঁঠাল। এই দলটির নাম বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয় এবং জাতীয় সংসদে ২৭টি আসন এবং মোট ভোটের ৭% লাভ করে।  ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পার্টির সভাপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং এর সাধারণ সম্পাদক এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার মনোনীত হন।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি কাজী জাফর জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে বেরিয়ে যান এবং নতুন দল তৈরি করেন। এই দলের বর্তমান নাম জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে কাজী জাফরের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পান এরশাদের জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী এবং মহাসচিব হন মোস্তফা জামাল হায়দার।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্‌কালে জাতীয় পার্টি (এরশাদে)-র মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং নতুন মহাসচিব পদ লাভ করেন মশিউর রহমান রাঙ্গা।

 ২০শে ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে এ দলটি যোগ দেয়। টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী ও মোস্তফা জামাল হায়দার যথাক্রমে এ দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দলটি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) নামে পরিচিত।
 


সূত্র :