বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সূত্র: বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন
http://www.ecs.gov.bd/Bangla

নিবন্ধন নম্বর

০০৬

নিবন্ধন তারিখ

০৩/১১/২০০৮

প্রতীক

নৌকা

প্রতীক নমুনা

সভাপতি

শেখ হাসিনা

সাধারণ সম্পাদক

ওবায়দুল কাদের

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা

২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, রমনা, ঢাকা। সভাপতির কার্যালয় বাড়ি-৫১/এ, সড়ক-৩/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা।

ফোন

৯৬৬৭৭৮১-২

ফ্যাক্স

৮৬২১১৫৫

মোবাইল

০১৬৭১-৫৭৫৪৪৬

ইমেইল

alparty1949@gmail.com

ওয়েব ঠিকানা

www.http://albd.org/bn/

আওয়ামী লীগ
ইংরেজি Awami League
বাংলাদেশের একটি অন্যতম রাজনৈতিক দল। বর্তমান নাম 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। উল্লেখ্য এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিতে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর পুরো পাকিস্তানের জন্য দলটির নাম রাখা হয় 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। এই দুটি শাখার জন্য, দুটি পৃথক কমিটি তৈরি করা হয়। এই কমিটি দুটি হলো-


পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'-এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই দলের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি হন- আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান খান, শাৱখাওয়াত হোসেন, ও আলী আহমদ খান।  সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক (টাঙ্গাইল), যুগ্তম সম্পাদক বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান, শেখ,  (তখন জেলে ছিলেন), খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, একে রফিকুল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ।

['পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'-এর প্রথম ঘোষণা ও গঠনতন্ত্র]
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন-এ গঠিত 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' গঠিত হলেও, এই দলের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে সক্রিয় হয়ে উঠে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। কালক্রমে এই 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'-ই হয়ে উঠেছিল পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল 'আওয়ামী লীগ'।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন-এর 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' -এর কার্যকরী পরিষদ

সভাপতি : আব্দুল হামিদ খান ভাসানি।
সহ-সভাপতি :
আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ।
সাধারণ সম্পাদক : শামসুল হক
যুগ্ম সম্পাদক :
শেখ মুজিবর রহমান, খোন্দকার মোশতাক আহমদ, এ.কে. রফিকুল হোসেন।
কোষাধ্যক্ষ : ইয়ার মোহাম্মদ খান।


১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন, আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা উপলক্ষে শামসুল হক, 'মূলদাবী' নামক একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। এই প্রস্তাবনা পুস্তাকারে ছাপিয়ে কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই প্রস্তবনাকে আওয়ামী লীগের প্রথম ম্যানিফেস্টো হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ফলে ১১ অক্টোবর আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ করেন।

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী মুসলিম লীগ
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই' পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে-এর কাউন্সিলে শেখ মুজিবর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর, পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে
  পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি,  কৃষক-শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের-এ-বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মিলে একটি মোর্চা গঠন করে। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য এই মোর্চার নাম দেওয়া হয়েছিল 'যুক্তফ্রন্ট'। এই মোর্চা গঠনে প্রধান উদ্যোক্তা ছিল তৎকালীন 'আওয়ামী মুসলিম লীগ'।
 

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

 

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে একুশ দফা ঘোষণা করা হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা
১৯৭৩ : ২৯৩টি আসন [জয়ী]
১৯৭৯ : ৩৯টি আসন [পরাজিত]
১৯৮৬ : ৭৬টি আসন [পরাজিত]
১৯৯১ : ৮৮টি আসন [পরাজিত]
১৯৯৬ : ১৪৬টি আসন [জয়ী]
২০০১ : ৬২টি আসন [পরাজিত]
২০০৮ : ২৩০টি আসন [জয়ী]


১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১-২৩ অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষ চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই সংগঠনটির নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এই সময় খোন্দকার মোশতাক আহমেদা করেন। শুধু তাই নয় তিনি এডভোকেট আলী আমজাদ খান, আবদুস সালাম ও হাশিমউদ্দিনকে নিয়ে পাল্টা সংগঠন গড়েছিলেন পরে এই দলের সদস্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে, মূল আওয়ামী লীগে আসতে ইচ্ছা করলে, বঙ্গবন্ধু উদারতা দেখিয়ে এঁদের দলে গ্রহণ করেন।
 

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ৮-১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় কাগমারী সম্মেলন হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়। এই সভায় মওলানা ভাসানী তাঁর বক্তৃতায় বলেন  পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওআলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে। এছাড়া কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী সোহ্‌রাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলে, ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল হামিদ খান ভাসানি পদত্যাগ করেন। এই বছর ২৫ জুলাই ভাসানি ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলের একটি সম্মেলনে 'ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি' (ন্যাপ) গঠিত হয়। এই সময় শেখ মুজিবর রহমান মন্ত্রিত্ব (কৃষি ও বন মন্ত্রী) ত্যাগ করে আওয়ামী লীগকে  সংগঠিত করার দায়িত্ব নেন।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি হলে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এই সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান-সহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠে। এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ মূখ্য ভূমিকা রাখে।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় আওয়ামী লীগ এই দাঙ্গা প্রতিরোধে সক্রিয় এবং কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি পেশ করেন।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের  গণঅভ্যুত্থান অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-সহ আরও কিছু ছাত্র সংগঠন এক সাথে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে তাদের ঐতিহাসিক এগার দফা কর্মসূচী পেশ করেন। ১৯৬৯ আন্দোলনের মুখে খ্রিষ্টাব্দে আয়ুব খান পদত্যাগ করেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৪-৫ জুন পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তা হলো-

সভাপতি: শেখ মুজিবর রহমান
সহ-সভাপতি: সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও
খোন্দকার মোশতাক আহমেদ
সাধারণ সম্পাদক: তাজউদ্দিন আহমদ
সাংগঠনিক সম্পাদক: মিজানুর রহমান চৌধুরী
প্রচার সম্পাদক: আব্দুল মোমেন
দপ্তর সম্পাদক: মোহাম্মদুল্লাহ
শ্রম সম্পাদক: জহুর আহমদ চৌধুরী
সংস্কৃতি সম্পাদক। বেগম বদরুন্নেসা আহমদ

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের জুন হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে ২০০ জন প্রতিনিধি যোগদান করেছিলেন। এদের ভিতরে ৯৪জন এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি কমিটি তৈরি হয়েছিল।


পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জন্য যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তা হলো

সভাপতি: শেখ মুজিবর রহমান
সহ-সভাপতি: কাজী ফায়েজ, মোহাম্মদ মাস্টার খান গুল, বরকত আলী সালমী (বারএট ল)

সাধারণ সম্পাদক: এ এইচ কামারুজ্জামান
যুগ্ন সম্পাদক: মোহাম্মদ খান রহমানী মোহাম্মদ ও শামসুল হক
সাংগঠনিক সম্পাদক: সৈয়দ খলিল আহমদ তিরমিজী
প্রচার সম্পাদক: আব্দুল মান্নান
শ্রম সম্পাদক: মালিক ফররুখ শিয়ার আওয়াল
সমাজ সেবা ও সংস্কৃতিক সম্পাদক: জি মোস্তফা সারোয়ার
দপ্তর সম্পাদক: শফিউল আলম
কৃষি সম্পাদক: সৈয়দ এমদাদ মোহাম্মদ শাহ
কোষাধ্যক্ষ: অধ্যাপক হামিদুর রহমান
মহিলা সম্পাদিকা: বেগম নূরজাহান মুরশিদ

পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জন্য যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তা হলো

সভাপতি: শেখ মুজিবর রহমান
সহ-সভাপতি: সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও খোন্দকার মোশতাক আহমেদ

সাধারণ সম্পাদক: তাজউদ্দিন আহমদ
সাংগঠনিক সম্পাদক: মিজানুর রহমান চৌধুরী
প্রচার সম্পাদক: আব্দুল মোমেন
দপ্তর সম্পাদক: মোহাম্মদুল্লাহ
শ্রম সম্পাদক: জহুর আহমদ চৌধুরী
সংস্কৃতি সম্পাদক। বেগম বদরুন্নেসা আহমদ

কোষাধ্যক্ষ: মোহাম্মদ মহসিন
সমাজসেবা সম্পাদক: কে এম ওবায়দুর রহমান

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৯ আসনের মধ্যে ২৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। এরূপ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ দিবাগত রাত্রে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামে। এই সময় রাজনৈতিক দল হিসাবে পাক-সেনাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু দেশে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলে, বঙ্গবন্ধু 
আওয়ামী লীগ-এর সভাপতি হন এবং জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন লাভ করে। 

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে, শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় সরকার গঠনের সময়, বাকশাল নামক একটি গঠন করেন। এই সময় আওয়ামী লীগ এই দলের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর ৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের চার জাতীয় কারাগারে নেতাকে হত্যা করা হয়। এরপর প্রায় চার বছর জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনেই দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি ৩০০টি আসনের মধ্যে ২০৭টি আসন লাভ করে বিজয়ী হয়েছিল। এই সময় আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় ছিল। এর একটি দলের নাম ছিল মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। অপরটি ছিল মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে মালেক উকিলের আওয়ামী লীগ লাভ করেছিল ৩৯টি আসন। আর মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২টি আসন। এই নির্বাচনের পর মালেক উকিলের আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শক্তি করার সুযোগ লাভ করেছিল। মূলত এই দলটি আওয়ামী লীগের মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল।  মালেক উকিলের আওয়ামী লীগ ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই দলকে রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের প্রচেষ্টা প্রবলভাবে সক্রিয় রেখেছিল।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে মে-তে সংঘটিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে 
জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর তাঁকে ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে সমাহিত করা হয়। এরপর তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন।

১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ শেখ মুজিবুর রহমানের প্রবাসী কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন। এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে  জাতীয় পার্টি  ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে। এই নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৭৬টি আসন। উল্লেখ্য, বিএনপি এই নির্বাচনটি বর্জন করেছিল।

১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সহ অধিকাংশ দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৫১টি আসন নিয়ে জয় লাভ করে।


১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর গণ-আন্দোলনের মুখে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। পরে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে এবং সমর্থনে তিন দফা রূপরেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি (১৪২টি) সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে আসন পেয়েছিল ৮৮টি।
জামায়েত-ই-ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। মূলত এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সামরিক শাসন মুক্ত হয়।

নির্বাচনের পর, শেখ হাসিনা নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ আনলেও ড. কামাল হোসেন তখন বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এর জের ধরে ড. কামাল হোসেন দলীয় নেতকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেয়া এক চিঠিতে ড. হোসেন নির্বাচনে পরাজয়ের পেছনে দলীয় কোন্দল এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন। এর ফলে তার এবং শেখ হাসিনার মধ্যকার দূরত্ব অনেকটা প্রকাশ্য হয়ে উঠে।

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ড: কামাল হোসেন গণতান্ত্রিক ফোরামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ড. মোজাফফর আহমেদ, প্রফেসর রেহমান সোবহান, প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী,ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামসহ আরো অনেকে। এই গণতান্ত্রিক ফোরাম নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশ অস্বস্তি ছিল। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হবার পরেও কেন ড. হোসেন গণতান্ত্রিক ফোরাম গঠন করলেন সেটি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এই সময় কামাল হোসেন  গণতান্ত্রিক ফোরামকে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেন।
 
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এবং ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে কাউন্সিলে জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। কিন্তু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে বাদ পরেন ড: কামাল হোসেন।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের অগাস্ট মাসের শেষে  গণতান্ত্রিক ফোরামের তিন-ব্যাপী জাতীয় মহাসম্মেলন আহবান করে। ২৯ আগষ্ট কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর পদত্যাগের চিঠি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৯ আগস্ট রাজনৈতিক দল গণফোরাম গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এর ভিতর দিয়ে আওয়ামী লীগের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ পৃথক হয়ে যায়।
 
বিএনপি সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়াই ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করে। দেশে-বিদেশে এই নির্বাচন নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে, তৎকালীন বিএনপি সরকার সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-এর ঘোষণা দেয়।


১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের একই বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ১৪৬ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। পরে জাতীয় পার্টি সমর্থনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। এ আন্দোলন তেমন সফল না হলেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি চারটি দল নিয়ে একটি ঐক্যজোট গঠন করে। এই ঐক্যজোটের দলগুলো ছিল
বিএনপি, জামায়েত-ই-ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ১১ দল।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট ২১০টি আসন লাভ করে। বিএনপি এককভাবে লাভ করেছিল ১৯৩টি আসন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন পেয়েছিল।

পরবর্তী পাঁচ বৎসরে নানা কারণে  বিএনপির জনপ্রিয়তা অসম্ভব হ্রাস পায়। এই শাসনামলে চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এ বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে  ১০ জনের অধিক গ্রামবাসী মৃত্যবরণ করে। এছাড়া ঢাকার শনির আখড়ার বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে সাধারণ জনতার আন্দোলন, সরকারী ত্রাণ তাহবিল থেকে ত্রাণ সামগ্রী সরকারীদলের সাংসদদের লুটপাটের ঘটনা, বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্রের দুর্নীতির কথা জনমনে ব্যাপকভাবে আলোড়ন তোলে।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ দফা দাবিতে ১১ দলীয় জোটের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-মশাল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-কুঁড়েঘর) এই তিনটি দল মিলে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। পরবর্তীতে, ৪টি দল ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এই দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মাহবুব) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) তবে, বাসদের একাংশ ১৪ দলীয় জোটে থেকে যায়। ফলে, ১৪ দলীয় জোটে দলের সংখ্যা হয় ১১টি। এর অল্প কিছুদিন পরে, গণফোরাম বাংলাদেশ ১৪ দলীয় জোট ত্যাগ করলে দলের সংখ্যা হয় ১০টি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে দলের সংখ্যা হয় ১২টি।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ আগস্ট রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ-এর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান। কিন্তু মানুষ হতাহত হয়। এই সময় সাংসদ জিল্লুর রহমান -এর সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এই সরকারের বৈধ মেয়াদ ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে দেশে শুরু হয় ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘাত।

পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। আর এ সময় থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই বছর দেশ পরিচালনা করেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৬ জুলাই রাতে
আওয়ামী লীগ-এর সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হন। এই সময় জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগ-এর হাল ধরেন।

এ সরকারের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ২৩০ আসন নিয়ে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায় বিএনপি এবং ২৭টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই জানুয়ারি, অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এছাড়াও নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় নির্বাচন। সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিজয়ী হয়।


সূত্র :