ঢাকার জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভসমূহ ঢাকার
গুরুত্বপূর্ণ এলাকা |
ঢাকা
বাংলাদেশ-এর সংবিধান মতে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। [প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ঢাকা। প্রথম ভাগ, অনুচ্ছেদ ৫। (১) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ৪ বৈশাখ, ১৪১৫। ১৭ এপ্রিল ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ]
এর ভৌগলিক অবস্থান
অক্ষাংশ
২৩°৪২′০″ উত্তর
এবং
দ্রাঘিমাংশ ৯০°২২′
৩০″ পূর্ব (২৩°৪২′
০″
উত্তর ৯০°২২′
৩০″
পূর্ব)। এর শহরের মোট
আয়তন ৩৬০ বর্গ কি.মি. (১৪০ বর্গ মাইল)। এই শহরটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এই
শহরের অপরএকটি নদী রয়েছে, এর নাম তুরাগ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর।
ঢাকা বিভাগের এবং ঢাকা জেলার প্রধান শহর। ঢাকা মহানগর বর্তমানে লোকসংখ্যা
প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং সর্বাপেক্ষা ঘন জনবহুল শহরগুলির
অন্যতম। ঢাকাকে মসজিদ শহর নামেও অভিহিত করা হয়। ঢাকায় মোট ২৪ টি থানা আছে। এগুলো
হলো—
লালবাগ, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, রমনা, মতিঝিল, পল্টন, ধানমণ্ডি,
মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, তুরাগ, সবুজবাগ, ঢাকা
ক্যান্টনমেন্ট, ডেমরা, শ্যামপুর, বাড্ডা, কাফরুল, কামরাঙ্গীর চর, খিলগাঁও ও উত্তরা।
ঢাকা শহরটি মোট ১৩০টি ওয়ার্ড ও ৭২৫টি মহল্লায় বিভক্ত। ঢাকা জেলার আয়তন ১৪৬৩.৬০ বর্গ
কিলোমিটার (৫৬৫ বর্গমাইল)। এই জেলাটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী,
নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।
ঢাকার নামকরণ : ঢাকার নামকরণ নিয়ে নানা রকম মত রয়েছে। যেমন—
১.মহারাজ সমুদ্রগুপ্তের আলাহাবাদ শিলালিপিতে এই স্থানকে ডবাকই জয়ের কথা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এই ডবকই হলো ঢাকা।২. এক সময় এই অঞ্চল অরণ্যে ঢাকা ছিল। সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন খ্রিষ্টীয় ১২শ শতাব্দীতে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণ করতে আসেন। এই সময় এই অরণ্যে আবৃত এই অঞ্চলে একটি দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের সূত্রে আশপাশে ক্রমে ক্রমে জন বসতি গড়ে উঠে। কালক্রমে ঢাকেশ্বরী নাম থেকে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।
৩. মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে বঙ্গদেশের তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে 'ঢাক' বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়।
দ্বিতীয় গল্পটি ততটা গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কারণ, একটি প্রদেশের রাজধানী যে নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হলো- সরাকরি নির্দেশনামায় তাঁর একটি পরিচতি থাকাই স্বাভাবিক। সম্ভবত বল্লাল সেনের শাসনামল থেকে এই অঞ্চলে ঢাকা নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলে বিশাল জনগোষ্ঠী বসবাস না করলে, কিছু লোক বসবাস করতো। সেনানায়ক ইসলাম খান একে রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন, দুটি কারণে। এক, এই স্থানটি রাজধানী হওয়ার মতো সুরক্ষিত এলাকা ছিল এবং এই স্থানটি থেকে নৌ পথে অন্যান্য অঞ্চলের শাসন করার সুবিধা ছিল সবচেয়ে বেশি। দুই. যেকোনো বড় শহরে আশপাশের এলাকা থেকে রসদ সরবরাহের সুবিধার বিচারেও এই স্থানটি উপযুক্ত ছিল। ইসলাম খান সম্রাটকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই স্থানটির নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। প্রশাসনিক কাজ কর্মে প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে জাহাঙ্গীরনগর ব্যবহৃত হলেও, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আদিতে প্রচলিত ঢাকা নামটিই থেকে যায়।
ঢাকার ইতিহাস : প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে ঢাকার নাম পাওয়া যায় না। বঙ্গদেশ বা বাঙ্গালা বলতে এক সময় রাঢ়, বরেন্দ্র, বাগড়ি ইত্যাদির একত্রীভূত অঞ্চলকে বুঝানো হতো। কালক্রমে এই বঙ্গদেশের পূর্বাঞ্চলের সাধারণ নাম ছিল পূর্ব-বঙ্গ-এ পরিণত হয়েছিল। সেনরাজদের আমলে এই অঞ্চলটি বিক্রমপুর নামে অভিহিত হতো।
সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার
প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো বিহারের রাজমহল। সুবা বাংলায় তখন চলছিলো মোগলবিরোধী স্বাধীন
বারো ভূইঁয়াদের রাজত্ব। বারো ভূইয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাংলাকে নিজেদের আয়ত্তে আনার
জন্য ১৫৭৬ থেকে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বারবার চেষ্টা চালানো হয়। ১৫৭৬
খ্রিষ্টাব্দে কররানী রাজবংশের সুলতান দাউদ মোগলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই
বিদ্রোহ দমনের জন্য টোডরমল এবং মুনিম খাঁ নামক দুইজন মোগল সেনাপতি এই বিদ্রোহ দমনে
অগ্রসর হন। তুকরাই এবং রাজমহলের যুদ্ধের পর, সুলতান দাউদ পরাজিত ও নিহত হলে, কাগজে
কলমে বাংলাদেশ মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মোগলরা বাংলার
উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে নাই। ফলে ঢাকা মোগলদের শাসনধীনের বাইরেই থেকে যায়।
এরই ভিতরে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশের প্রামাণিক জরিপ করার
উদ্যোগ নেন।
এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীররের আমলে ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে, পশ্চিম বাংলায় মোগল শক্তি
প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু এই সময়, বাংলার বার ভুইয়াদের বিরোধিতার কারণে, পূর্ব ও
দক্ষিণ বাংলা মোগল শাসনাধীনের বাইরেই ছিল। এদের দমনের জন্য, সম্রাট জাহাঙ্গীর, ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতীকে রাজমহলের সুবেদার
নিযুক্ত করেন। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে ইসলাম খা বার ভুইয়ার অনেকাংশ দমন করতে
সক্ষম হন। এই সময় বাংলার ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে, তিনি ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে
বাংলার রাজধানী
রাজমহল থেকে সরিয়ে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এই সময় সুবাদার ইসলাম খান ঢাকার নাম পাল্টে
রাখেন জাহাঙ্গীরনগর।
১৬৩৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। ১৬৩৯
খ্রিষ্টাব্দে শাহ সুজা ঢাকা থেকে রাজমহলে রাজধানী স্থানান্তর করেন।
১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে মোগল নৌ বিভাগের কর্মকর্তা মীর মুরাদ 'হুসেনী দালান' সিয়া
সম্প্রদায়ের জন্য ইমামবাড়া হিসেবে তৈরি করেন।
১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে শাহ সুজা দ্বিতীয়বার বঙ্গদেশের জরিপ
চালান। এই সময় ঢাকা নগরী মর্যাদাহীন দশায় পৌঁছেছিল।
শাহ
সুজা'র পতনের পর ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায়
স্থানান্তর করেন। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বাংলার
সুবাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সুবেদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর, বাংলাদেশের
শাসনভার পান শায়েস্তা খাঁ। এই সময় ঢাকা থেকে আসাম এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোগলরা বহু
সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে।
১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হুগলীর প্রধান পরিচালক ম্যাথু ভিন্সেন্ট
ঢাকায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতি লাভের জন্য ঢাকা আসেন এবং অনুমতি লাভ করেন।
১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলার
সুবেদার হন এবং সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত
করেন। এরপর
ঢাকায় মোঘল শাসনামলে চলতো নায়েবে নাজিমদের শাসন।
১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে জাফর খাঁ বঙ্গাদেশের একটি জরিপ করান। এই সময়
বঙ্গ-সুবাকে 'ইহতিমাম' বা জমিদারীতে বিভক্ত করা হয়েছিল। এই বিভাজনের সূত্রে
জালালপুর ইহতিমাম-এর অধীনে পড়ে ঢাকার অধিকাংশ অঞ্চল, ফরিদ ও বাখরগঞ্জ।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে নবাব
সিরাজদ্দৌলার পরাজয়ের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা
স্থানান্তরিত হয়। কোম্পানির আমলে ভারতবর্ষের রাজধানী হিসাবে কলকাতার সৃষ্টি এবং
বিকাশের সূত্রে ঢাকা অনেকাংশে ম্লান হয়ে যায়। ১৭৬৩
খ্রিষ্টাব্দে নবাব মীরকাসেম বঙ্গদেশে জরিপ পরিচালনা করেন। তবে এর দ্বারা প্রশাসনিক
রদবদল ঘটে নি।
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে
ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি
ঢাকাকে মুর্শিদাবাদ থেকে শাসন করার ব্যবস্থা করেছিল। ঢাকাকে এই সময় জেলার মর্যাদা
দেওয়া হয়। ঢাকার রাজস্বনিয়ন্ত্রণের জন্য হুজুরী নামক রাজস্ববিভাগের অধীনে আনা হয়।
মুর্শিদাবাদের একজন দেওয়ান তাঁর ডেপুটির দ্বারা ঢাকার রাজস্বব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ
করতেন। কিন্তু ফৌজাদারী এবং আদালতের বিষয় দেখার জন্য
পৃথক বিভাগ ছিল। এই বিভাগটির নাম ছিল নিজামত।
১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে হুজুরী ও নিজামত বিভাগের
তদারকের জন্য একজন রাজস্ব পরিদর্শকের ব্যবস্থা করা হয়।
১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে রাজস্ব-পরিদর্শককে কালেক্টের উপাধি দিয়ে ঢাকার রাজস্ব প্রশাসকের
মর্যাদা দেওয়া হয়। এই সময় মহম্মদ রেজা খাঁ মুর্শিদাবাদ থেকে দেওয়ানী বিভাগ পরিচালনা
করতেন। এই বছরে ঢাকায় পৃথক দেওয়ানী আদালত স্থাপিত হয়। এই সময় কালেক্টর দেওয়ানী
আদালতের সুপারেন্টন্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৭৭৩-৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ছিল বঙ্গদেশের পঞ্চম বিভাগ। এ প্রসঙ্গে শিশিরকুমার বসাক সাহিতভূষণ তাঁর 'ঢাকা নগরীর ইতিবৃত্ত' প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন-
'বিলাতে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে হেষ্টিসের লিখিত ১৭৭৩ খৃষ্টাব্দের ২৩শে নভেম্বরের একটি পত্র হইতে জান! যায় যে, ১৭৭৩-৭৪ খৃষ্টাব্দে বাঙ্গল৷ দেশে ঢাকা পঞ্চম বিভাগ নামে অভিহিত হইত। সে সময়ে বারওয়েল, পালিং, থ্যাকারে, সেক্সপীয়ার এবং হল্যাণ্ড প্রমুখ ব্যক্তিগণ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। বারওয়েল উহার সভাপতি ও প্রধান সদস্য ছিলেন। তাঁহার মাসিক বেতন ছিল ৩,০০০ টাকা। তাহার ব্যবসা-বাণিজ্য করিবার অধিকার ছিল না। অন্যান্য সদস্যগণের ব্যবসা- বাণিজ্য করিবার অধিকার ছিল এবং তাঁহারা তাহ করিতেনও। ওয়ারেন হেষ্টিংস ১৭৭২ খৃষ্টাব্দে (বাংলা সন ১১৭৯) বাঙ্গলার গবর্ণর হইয়া আসেন।' [সূত্র: মাসিক মোহম্মদী [৩০শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা। জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৬ (মে-জুন ১৯৫৯)। পৃষ্ঠা: ৬৪৫]
এই সময় ঢাকা জেলা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। ভাগ দুটি হলো- ঢাকা জালালপুর ও ঢাকা সদর। উল্লেখ্য সে সময় জালালপুর ছিল ঢাকা এবং ফরিদপুরের অন্তর্গত একটি পরগণা। পরে ঢাকা ও জালালপুর একীভূত হয়েছিল।
১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় রাজস্ব এবং
দেওয়ানী আদালতের জন্য নায়েব পদ সৃষ্টি করা হয়। একই সাথে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভাকে
দেওয়ানী আদালতের নিষ্পত্তি-বিচার করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়। এই সময় ঢাকার কালেক্টর ছিলেন
উইলিয়াম ডগলাস্।
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা বাতিল করে কালেক্টরী ও দেওয়ানী আদালত
প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় ঢাকার কালেক্টরকে 'চিফ' নামে অভিহিত করা হতো। এই সময় সমগ্র
ঢাকা জেলার আয়তন ছিল ১৫৩৯৭ বর্গমাইল। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং
ত্রিপুরাকে জেলার মর্যাদা দেওয়া
১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থাকে ফরিদপুর জেলাকে পৃথক করা হয়। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাখেরগঞ্জ জেলা তৈরি করা হয়।
১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে
ভূমিকম্পে ঢাকার শহরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এই সময়
১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত 'হুসেনী দালান' ভেঙে পড়েছিল। পরে
নবাব আহসানুল্লাহ এর মেরামত করেছিলেন।
১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিভাগ নামে
একটি বৃহৎ বিভাগের সদর দফতরে পরিণত হয়। ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৪
খ্রিষ্টাব্দে ১ আগস্ট-এ। এই সময় ঢাকার অধীনে ছিল বৃহত্তর ঢাকা জেলা, ময়মনসিংহ জেলা,
ফরিদপুর জেলা এবং বাখেরগঞ্জ জেলা।
১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলা থেকে শ্রীহট্ট
ও কাছাড় জেলাকে পৃথক করা হয়।
১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা জেলাকে ঢাকা বিভাগের অধীনে আনা হয়। কিন্তু ১৮৮০
খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরাকে ঢাকা বিভাগ থেকে আবার পৃথক করা হয়।
এরপর ঢাকার প্রশাসনিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৮৮৫ সালের মধ্যে বঙ্গপ্রদেশে কলকাতার পরে ঢাকা নগরীকে সর্ববৃহৎ বেসামরিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের পর নবগঠিত বাংলা ও আসাম প্রদেশের রাজধানী করা হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহৃত হলে ঢাকা তার প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদাটি হারায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় ঢাকা পূর্ব-পাকিস্তানের অংশে পড়ে এবং ঢাকাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাজধানী করা হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর সাংবিধানিকভাবে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ ঢাকা-কে 'কর্পোরেশন'-এ উন্নীত করা হয়।
ঢাকার আবহাওয়া : ঢাকার জলবায়ু
প্রধানত উষ্ণ। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্রতার প্রাবাল্য লক্ষ্য করা যায়। এই শহরে প্রচুর
বৃষ্টিপাত হয় । বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮১.৫ ডিগ্রি
ফারেনহাইট) এবং জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে তাপমাত্রা ১৯.৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি
সেলসিসয়াসের (৬৭ থেকে ৯০ ডিগ্রি ফাটেনহাইট) মধ্যে থাকে। মে থেকে অক্টোবর মাসের
মধ্যে গড়ে প্রায় ২১২১ মিলিমিটার (৮৩.৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারাবছরের
মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮৭%।
পরিবেশ : ঢাকার বায়ু দুষণের পরিমাণ অত্যাধিক হলেও প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং বায়ু
প্রবাহ অনেকটাই দূষণমুক্ত করে। বায়ু দূষণের প্রধান উৎসগুলো হলো—
প্রচুর
যানবাহন এবং শিল্প কারখানা থেকে উৎপন্ন
গ্যাস, শহরের নিকটবর্তী ইঁট ভাটা। এছাড়া ঢাকার বর্জ্য পদার্থ বুড়িগঙ্গায় পতিত হওয়ার
কারণে এই নদী সম্পূর্ণ দুষিত নদীতে পরিণত হয়েছে।
সূত্র: