নিয়োজেন অধিযুগ
২৩.০৩ কোটি-২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
ইংরেজি: Neogene Period
সেনোজোয়িক যুগের
দ্বিতীয় অধিযুগ। এই অধিযুগে মহাদেশগুলো বেশ কাছাকাছি ছিল। এদের আন্তঃসংঘর্ষে
ভূপৃষ্ঠে বিশাল বিশাল পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছিল। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য পর্বতমালাগুলো
হলো-
১. হিমালয়: ভারত উপমহাদেশ ধীরে ধীরে এশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়া শুরু হয় এই সময়ে। সূত্রে ধীরে হিমালয় পর্বতমালার উৎপত্তি ঘটে।
২. আল্পস: ইতালি প্রবল ভাবে ইউরোপের চাপ সৃষ্টি করলে, আল্পস পর্বতমালার উত্থান হয়।
৩. পাইরেনিস: স্পেন এবং ফ্রান্সের চাপে সৃষ্টি হয়েছিল এই পর্বতমালা।
৪. উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা পরস্পরের সাথে যুক্ত ছিল। উভয় বিযুক্ত হ্ওয়ার সূত্রে মধ্য- আমেরিকায় পানামা খালের উৎপত্তি হয়েছিল।
৫. ভূস্তরের প্রবল চাপে উত্তর আমেরিকার, রকি, সুয়েরা নেভাদা এবং ক্যাসকেট পর্বতসমূহের উত্থান ঘটে।
এই সব পর্বতের উত্থানের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বায়ু প্রবাহে ব্যাপক পরিবর্তনের সৃষ্টি হয়েছিল। এই অধিযুগের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে মেরু প্রদেশে বরফের স্তর বেশ পুরুত্ব লাভ করেছিল। একই কারণে ফলে সাগরের উপরিতল নেমে গিয়ে আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ার মধ্য ভূ-যোগাযোগের পথ তৈরি হয়েছিল। আবার ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ভিতরেও এমনি ভূ-সংযোজকের সৃষ্টি হয়েছিল।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের ফলে এবং ভূভাগের পরিবর্তনের ফলে এই অধিযুগে প্রাণী ও উদ্ভিদকুলেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। এই সময় আফ্রিকা থেকে ইউরেশিয়াতে প্রবেশ করেছিল হাতি এবং নানা ধরনের এপ। আবার ইউরেশিয়া থেকে শুকর, সাবের-টুথ, গণ্ডার আফ্রিকায় প্রবেশ করেছিল। আবার ইউরেশিয়া থেকে বেরিং প্রণালী পার হয়ে হাতি, গণ্ডার উত্তর আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল। গ্রাউন্ড শ্লথরা আবার দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তর আমেরিকায় প্রবেশ করেছিল। আর রেকুনরা উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় চলে গিয়েছিল।
এই সময় মহাদেশগুলোতে বিশালাকার বনাঞ্চল এবং তৃণভূমি তৈরি হয়েছিল। এর ফলে পৃথিবীর জলবায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়ে পড়েছিল। এই সময় তৃণভোজীদের ভিতরে এনামেলযুক্ত দাঁতের বিকাশ ঘটে। এই সময় তৃণভোজী এবং জাবরকাটা প্রাণীকূলের ভিতরে বাইসন, উট, ভেড়া, জিরাফের উৎপত্তি ঘটেছিল।
সাগর জলে উদ্ভব হয়েছিল বিশাল আকারে বাদামী শৈবাল। আর নানা ধরনের হাঙরের আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে। এই সময়ের দানবাকারের মেগালোডোন হাঙরের বিকাশ হয়েছিল। কোরিস্টোডেরা নামক সরীসৃপকুল এবং এ্যালোকাউডাটা নামক উভচররা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে উন্নততর স্তন্যপায়ী এবং পক্ষীকুলের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল এই সময়ে।
ভূবিজ্ঞানীরা এই অধিযুগকে দুটি অন্তঃযুগে ভাগ করেছেন। এই ভাগ দুটি হলো-
মিয়োসিন অন্তঃযুগ (২.৩০৩ কোটি-৫৩.৩৩ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
প্লিয়োসিন অন্তঃযুগ (৫৩.৩৩-২৫.৮ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
সূত্র
https://www.nationalgeographic.com/science/prehistoric-world/neogene/