বাহর্স্পত্য সংবৎ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা   {| বৎসর | পর্যায় কাল |মৌলিক পরিমাপ | পরিমা | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}

বৃহস্পতি গ্রহ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে সময় নয় তার উপর ভিত্তি করে গণিত সময়কে বাহর্স্পত্য সংবৎ বলা হয়। এই বর্ষ ১২ বৎসরে চক্রে বা ৬০ বৎসরের চক্রে গণিত হয়ে থাকে।

১২ বৎসর চক্র
মূলত পার্থিব ১১.৮৬১৮ পার্থিব বৎসরে বৃহস্পতি গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই আবর্তনকালকে ১২ বৎসর ধরে বাহর্স্পত্য সংবৎ বিবেচনা করতেন। বৃহস্পতির আবর্তনকালে বৃহস্পতি যখন সূর্যের থেকে দূরে অবস্থান করে, তখন বৃহস্পতির উদয়কাল বিবেচনা করা হয়। পক্ষান্তরে বৃহস্পতি সূর্যের নিকটবর্তী হলে, তখন তাকে তার অস্তমিত দশা বিবেচনা করা হয়। এই উদয় অস্তরের বিচারে যে নক্ষত্রমণ্ডলের ভিতর বৃহস্পতি উদয় হয়, তার উপর ভিত্তি করে বাহর্স্পত্য সংবৎ-এর মাসের নামকরণ করা হয়। এই নামগুলো হলো

     মহাকার্তিক : কৃত্তিকা বা রোহিনী নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহামার্গশীর্ষ : মৃগশিরা বা আর্দ্রা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাপৌষ : পুনর্বসু বা পুষ্যা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহামাঘ : অশ্লেষ বা মঘা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাফাল্গুনী : পূর্ব ফাল্গুনী, উত্তর ফাল্গুনী বা হস্তা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাচৈত্র : চিত্রা বা স্বাতী নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাবৈশাখ : বিশাখা বা অনুরাধা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাজ্যৈষ্ঠ : জ্যেষ্ঠা বা মূলা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাআষাঢ় : পূর্বাষাঢ়া বা উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাশ্রাবণ : শ্রবণা বা ধনিষ্ঠা নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাভাদ্র বা মহাভাদ্রপদ : শতভিষা, পূর্বভাদ্রপাদ বা উত্তরভাদ্রপাদ নক্ষত্রে উদিত হলে।
     মহাআশ্বিন বা আশ্বযুজ : রেবতী, অশ্বিনী বা ভরণী নক্ষত্রে উদিত হলে।

এই বর্ষচক্রে ১২ বৎসরে একটি সংবৎসরের ক্ষয় হয়। উল্লেখ্য ১২ সৌর বৎসরে বৃহস্পতি ১১ বার অস্তমিত হয়ে উদিত হয়। এই কারণে ১২ সৌর বৎসরে বিচারে ১১ বৎসরের শেষে একটি বৎসরকে ক্ষয় বৎসর ধরা হয়।

৬০  বৎসর চক্র
এই রীতিতে ৬০ সৌর-বৎসরে একটি বাহর্স্পত্য সংবৎ বিবেচনা করা হয়। এই বর্ষ গণনায় ১ থেকে ৬০ বৎসর পর্যন্ত বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-

১. প্রভব সংবৎসর
২. বিভব সংবৎসর
৩. শুক্ল সংবৎসর
৪. প্রমোদ সংবৎসর
৫. প্রজাপতি সংবৎসর
৬. অঙ্গিরা সংবৎসর
৭. শ্রীমুখ সংবৎসর
৮. ভাব সংবৎসর
৯. যুবা সংবৎসর
১০. ধাতা সংবৎসর
১১. ঈশ্বর সংবৎসর
১২. বহুধান্য সংবৎসর
১৩. প্রমাথী সংবৎসর
১৪. বিক্রম সংবৎসর
১৫. বৃষ সংবৎসর
১৬. চিত্রভানু সংবৎসর
১৭. সুভানু সংবৎসর
১৮. তারণ সংবৎসর
১৯. পার্থিব সংবৎসর
২০. ব্যয় সংবৎসর
২১. সর্বজিৎ সংবৎসর
২২. সর্বধারী সংবৎসর
২৩. বিরোধী সংবৎসর
২৪. বিকৃত সংবৎসর
২৫. খর সংবৎসর
২৬. নন্দন সংবৎসর
২৭. বিজয় সংবৎসর
২৮. জয় সংবৎসর
২৯. মন্মথ সংবৎসর
৩০. দুর্মুখ সংবৎসর
৩১. হেমলম্ব সংবৎসর
৩২. বিলম্বী সংবৎসর
৩৩. বিকারী সংবৎসর
৩৪. শার্বরী সংবৎসর
৩৫. প্লব সংবৎসর
৩৬. শুভকৃৎ সংবৎসর
৩৭. শোভন সংবৎসর
৩৮. ক্রোধী সংবৎসর
৩৯. বিশ্বাবসু সংবৎসর
৪০. পরাভব সংবৎসর
৪১. প্লবঙ্গ সংবৎসর
৪২. কীলক সংবৎসর
৪৩. সৌম্য সংবৎসর
৪৪. সাধারণ সংবৎসর
৪৫. বিরোধকৃৎ সংবৎসর
৪৬. পরিধাবী সংবৎসর
৪৭. প্রমাদী সংবৎসর
৪৮. আনন্দ সংবৎসর
৪৯. রাক্ষস সংবৎসর
৫০. অনল সংবৎসর
৫১. পিঙ্গল সংবৎসর
৫২. কালযুক্ত সংবৎসর
৫৩. সিদ্ধার্থী সংবৎসর
৫৪. রৌদ্র সংবৎসর
৫৫. দুর্মতি সংবৎসর
৫৬. দুন্দুভি সংবৎসর
৫৭. রুধিরোদ্‌গারী সংবৎসর
৫৮. রুক্তাক্ষ সংবৎসর
৫৯. ক্রোধন সংবৎসর
৬০. ক্ষয়ী সংবৎসর

বিক্রমাব্দ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা   {| বৎসর | পর্যায় কাল |মৌলিক পরিমাপ | পরিমা | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}
অপরাপর নাম : মালব সংবৎ, মালবকাল।

 

মালব রাজ্যের রাজা বিক্রম বা বিক্রমাদিত্য ৫৮ খ্রিষ্টাব্দে শকদের পরাজিত করেন। এই বিজয়োৎসবকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নিজের নামে একটি বর্ষের সূচনা করেন। রাজা বিক্রমের নামে প্রচলিত এই অব্দই বিক্রমাব্দ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। খ্রিষ্টাব্দের সাথে ৫৭ বা ৫৬ যোগ করলে বিক্রমাব্দের সংখ্যামান পাওয়া যায়।

 

উত্তরভারতে  শুরু হয় চৈত্র শুক্লা প্রতিপদে কিন্তু দক্ষিণ ভারতে এই অব্দের শুরু ধরা হয় কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদে। উত্তরভারতে প্রতিটি মাস শুরু হয় কৃষ্ণা-প্রতিপদে আর শেষ হয় পূর্ণিমা অতিক্রান্ত হলে। দক্ষিণ ভারতের মাস নির্ধারণ করা হয়, এর ঠিক উল্টো, অর্থাৎ শুক্লা প্রতিপদ থেকে অমান্ত পর্যন্ত।

 

এছাড়া কাথিয়াবাড়, গুজরাট, রাজপুতনার কিছু অংশে এই অব্দ গণনা করা হয়তো আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদে। এই অব্দের মাসগুলো অমান্ত। রাজপুতনার উদয়পুর অন্যান্য কিছু রাজ্যে এই অব্দ শুরু হতো শ্রাবণ কৃষ্ণা প্রতিপদে। আর মাসগুলো ছিল পূর্ণিমান্ত।


বর্তমানে এই অব্দটি খুব বেশি মান্য করা হয় না। কিন্তু একসময় এই অব্দ উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক প্রচলিত ছিল, অন্তত এ কথা বলা যায়।
 
 


বীরনির্বাণ-সংবৎ
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা   {| বৎসর | পর্যায় কাল |মৌলিক পরিমাপ | পরিমা | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}
বীরনির্বাণ নামক যে সংবৎ/কর্মধারয় সমাস।
অপরাপর নাম :
বীরনির্বাণ-সংবৎ, বীরনির্বাণ-সংবৎসর।

জৈনদের শেষ তীর্থাঙ্কর ছিলেন মহাবীর। এঁর নির্বাণ (মোক্ষ) লাভ করার সময় থেকে এই বৎসর গণনা করা হয়। বীর (মহাবীর) এবং নির্বাণ শব্দ দুটি নিয়ে এর নামকরণ করা হয়েছে- বীরনির্বাণ। খ্রিষ্টাব্দের সাথে ৫২৭ বৎসর যুক্ত করলে এই বৎসর-কাল পাওয়া যায়। 


সূত্র : প্রাচীন ভারতীয় লিপিমালা। গৌরীশঙ্কর হীরাচাঁদ ওঝা। অনুবাদ মণীন্দ্রনাথ সমাজদার্। বাংলা একাডেমী ঢাকা। আষাঢ় ১৩৯৬। জুন ১৯৮৯।