বাংলাদেশের ঋতুচক্র
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ।
বঙ্গাব্দের শুরু হয় বৈশাখ থেকে। এই মাস থেকে দুটি করে মাস নিয়ে এক একটি ঋতুকে মান্য করা হয়। সাধারণ কথ্য ভাষায় একে কাল বলা হয়। যেমন বর্ষাকাল। এই নিয়মে ছয়টি ঋতু তৈরি হয়। এগুলো হলো–
গ্রীষ্ম: বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ।
এই ঋতুতে সূর্যের প্রখর আলো ও তাপে প্রকৃতি উৎতপ্ত হয়ে উঠে। সাধারণ
মার্চের শেষ দিক থেকে
গ্রীষ্মকাল আরম্ভ হয়ে মে মাস পর্যন্ত বহাল থাকে। এই সময় অধিকাংশ অগভীর জলাশয়
শুকিয়ে যায়। বর্তমানে অধিকাংশ বাংলাদেশের বড় বড় নদীতেও বিশাল বিশাল জেগে উঠে।
তীব্র তাপে স্থলাঞ্চলের মাটি ফেটে যায়।
গ্রীষ্মকালে পদ্মা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচের ভূমি |
গ্রীষ্মের গড়াই নদী |
কালবৈশাখী নামক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগের বিভিন্ন স্থানে হয়। এই
ঋতুর প্রধান ফল- আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু।
বর্ষা: আষাঢ় ও শ্রাবণ।
আষাঢ় তথা জুন মাসে সাধারণত মৌসুমী বায়ুর প্রকোপে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। তখন
উষ্ণতা অনেক কমে যায়, কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। বর্ষাকাল জুন মাসে
আরম্ভ হয়ে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বর্ষায় এদেশে বৃষ্টিপাত হয়
প্রচুর। বাংলাদেশে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০০ মি.মি. থেকে ৪০০০ মি. মি.
পর্যন্ত। সাধারণত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক। খুব
দ্রুত খালবিল ভরে উঠে। এই সময় বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলগুলো বন্যায় ভেসে যায়। অনেক
নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়। ফলে কোনো কোনো অঞ্চলের মানুষ প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে
পড়ে। অনেক অঞ্চলে চলাচলের একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়
নৌকা বা
ভেলা। এই সময় বাংলাদেশের সবুজ গাছ-পালায় ছেয়ে যায়। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য
ফুল
কদম,
কেয়া,
দোলনচাঁপা,
নয়নতারা, বেলি।
বর্ষার নদী |
বর্ষার ফুল কদম |
শরৎ: ভাদ্র ও আশ্বিন
বর্ষার শেষে নদনদীতে জলপ্রবাহ কমে যায়। স্থায়ী জলাশয়গুলোতে পানি কমে যায়। এই
সময়ের তাপামাত্রা গরম থাকলেও শীতল বায়ু প্রবাহের কারণে, গরম সহনীয় মাত্রা্য়
থাকে। শরতের সাদা মেঘ, সাদা কাশের বন বাংলাদেশের প্রকৃতিকে মোহনীয় করে তোলে। এই
কারণে শরৎকে অনেক সময় শুভ্র ঋতু বলা হয়।
শুভ্র শরৎ |
হেমন্ত: কার্তিক ও অগ্রহায়ণ
এই সময়টা বাংলাদেশে অভাব কম থাকে। মৌসুমী ফসল ওঠার কারণে কৃষকরা স্বস্তিতে
থাকে। এই ঋতুর শেষের দিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
শীত: পৌষ ও মাঘ
সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের চলে যাওয়ার কারণে, দিন ছোটো হয়ে যায়। প্রকৃতিতে এমনি
শীতল হয়ে পড়ে। এছাড়া উত্তর থেকে আগত শৈত প্রবাহ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ঘন
কুয়াশা হলেও, বাংলাদেশে বরফ পরে না।
বসন্ত: ফাল্গুন ও চৈত্র
সূর্য উত্তর গোলার্ধের দিকে ফিরে আসার কারণে, দিন বড় হয়ে যায়। ফলে তাপমাত্রা
বৃদ্ধি পায়। শীতের আড়ষ্টভাব
কাটিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে উদ্দীপনার আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণে বসন্তে
প্রকৃতির যৌবনকাল বলা হয়। এই ঋতুর উল্লেখযোগ্য ফুল পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া,
সোনালু।
বসন্তে রঙিন শিমুল ফুলে |