নিয়ম
পতঞ্জলি
রচিত যোগশাস্ত্রের
অষ্টাঙ্গের দ্বিতীয় অঙ্গ। কিছু বিধির মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি করা এবং ওই সকল বিধির
নিয়মিত চর্চাই হলো নিয়ম।
নিয়মের ভিতর দিয়ে জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা
আনয়ন করা এবং দায়িত্বকে যথাযথভাবে পালন করার সাধনা করতে হবে। যোগ শাস্ত্রে
নিয়মকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই
ভাগগুলো হলো।
১. শৌচ :
এর সাধারণ অর্থ―
দেহশুদ্ধি,
পবিত্রতা,
বিশুদ্ধতা,
মলত্যাগ
ইত্যাদি। এর দ্বারা দেহ মনের শুচিতা আনা হয়। যোগশাস্ত্র মতে শৌচ দুই
প্রকার। যথা- ক. বাহ্য শৌচ : পানি, মাটি ইত্যাদি দ্বারা দেহের বাহ্য শৌচ সম্পন্ন হয়। এছাড়া পবিত্র আহারের দ্বারাও বাহ্য শৌচ রক্ষা পায়। খ. অন্তর শৌচ : মৈত্রী, করুণা, মুদিতা এবং উপেক্ষার দ্বারা অন্তর শৌচ সম্পন্ন হয়। যোগ ক্রিয়ায়, দেহের শুচিতার চেয়ে মনের শুচিতার প্রাধান্য অধিক দেওয়া হয়। অহঙ্কার, ঈর্ষা, কামুকতা, ক্রোধ, ঘৃণা, দ্বেষ, প্রবঞ্চনা, লালসা, লোলুপতা ইত্যাদির দ্বারা মন কলুষতা লাভ করে। তাই মনের শুচিতার জন্য এগুলো পরিহার করা উচিৎ। পরমব্রহ্মের সাধনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে, 'ওঁম' বা ঈশ্বরের সাধানার ধ্বনি-চর্চার মাধ্যমে নিজের ভেতরে নিজেকে আত্মস্থ করার প্রক্রিয়া বিশেষ। এই সাধনায় নেতিবাচক মনোদৈহিক চেতনাগুলো বর্জন করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মনের শুদ্ধতা রক্ষার জন্য কুচিন্তা পরিত্যাগ করতে হবে এবং দেহের শুদ্ধতার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। একই সাথে নিষ্কলুষ আহার গ্রহণ, পরিষ্কার পোশাক পরিধান এবং বাসস্থানের পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বজায় রাখতে হবে। ২. সন্তোষ : এর সাধারণ অর্থ হলো- প্রীতি, তৃপ্তি, আহ্লাদ, আনন্দ। ব্যক্তি অবশ্যই তাঁর নিজ অবস্থাকে সুখকর মনে করবে। অপরে ঐশ্বর্য বা প্রভাব দেখে মনের ভিতরে ক্ষেদ জমবে না। নিজ সামর্থ্য এবং কর্মদক্ষতা দ্বারা যা অর্জন করতে পারবে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে। যোগশাস্ত্রে অত্যন্ত সাধনার দ্বারা সন্তোষকে উজ্জীবিত করতে হয়। মনের অতৃপ্ততা থেকে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তাই মনকে লালসা বা ভোগমুক্ত করে, সন্তোষের সৃষ্টি করা হয়। সন্তোষ সৃষ্টি হলে, যোগে মনোনিবেশ করা যায় এবং ঈশ্বরের সাথে মিলনের পথ সুগম হয়।
৩. তাপস : তাপস মানে
আত্ম-সংযম। মূলত সন্তোষের একটি বর্ধিত রূপ মাত্র। শৌচ বা সন্তোষের সাধনাই
হলো তাপস। এর মাধ্যমে দেহ মন ও বাক্যে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা আনয়ন করতে হবে। এর
অর্থ সংসারের সকল কর্তব্য অবহেলা করে কঠোর তপস্বী বা যোগী হয়ে যাওয় না।
মূলত দেহ ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চতর আত্মিক উন্নয়নের জন্য সাধনাই হলো
তাপস। ৫. ঈশ্বর-প্রণিধান : পরম-ব্রহ্মের প্রতি বিশ্বাস এবং সেই পরম সত্তার সাথে নিজেকে বিলীন করার সাধনাই হলো ঈশ্বর-প্রণিধান। নিজের ভিতরে ঈশ্বরের উপলব্ধি করার সাধনার মধ্য দিয়ে পরম আধ্যাত্মিক আনন্দে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া হবে মূল লক্ষ্য। |
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক