√যুজ্ (যুক্ত করা, মিশ্রিত করা) + অ (ঘঞ্), ভাববাচ্য।
এই বিচারে নানা ধরণের অর্থ হতে পারে। সাধারণ অর্থ হলো- একত্রিত অর্থে: ঐক্য,মিলন (একযোগে কাজ করা)। সংস্রব অর্থে: সংসর্গ, সংস্রব, সম্বন্ধ । (ভিতরে ভিতরে ওদের যোগ ঠিকই আছে)। কিন্তু যোগশাস্ত্রের যোগ হলো- হিন্দু দর্শনে দেহ ও মনের প্রগাঢ় সংযোগই হলো যোগ । গূঢ় অর্থ হলো- জীবাত্মা ও পরমাত্মার সংযোগ।
সাধারণভাবে চিত্ত বলতে মনকে বুঝায়।
প্রতিটি ব্যক্তি সত্ত্বার ভিতরে 'আমি' নামক একটি সত্তা। এই
আমি প্রতিটি ব্যক্তিকে পরিচালিত করে। স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন উপকরণের কার্যকারিতার সমন্বয়ে যে
পরিচালক শক্তির সৃষ্টির উদ্ভব হয়, 'আমি' নামক সত্তা। এই 'আমি'র পরিচালক বা নিয়ন্ত্রক হলো মন।
মন আত্মা ইচ্ছাকে জাগ্রত রাখে এবং প্রকাশযোগ্য করে তোলে। যোগ সাধনার প্রথম স্তর হলো-
চিত্তকে
নিয়ন্ত্রণ করা।
চিত্তকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন চিত্তবৃত্তিকে নিরোধ
করা।
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে দেহের বাইরের জগতের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে 'আমি' উপলব্ধি করে।
এর মধ্য দিয়ে চিত্তের নানা ধরনের ইচ্ছা জাগ্রত হয়ে ওঠে। এর ভিতর দিয়ে চিত্ত নানা
দশায় পৌঁছায়। এই অবস্থাদশাকে বলা হয়
চিত্তভূমি।
যোগশাস্ত্রে চিত্তের স্বাভাবিক অবস্থা বা চিত্তভূমিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-
ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র ও নিরুদ্ধ। যোগীর সাধনা চিত্তভূমিকে সাধনার
উপযুক্ত দশায় আনা। উল্লিখিত পাঁচটি
চিত্তভূমি'র
মধ্যে একাগ্র ও নিরুদ্ধ দশা হলো সাধনা লাভের অবস্থা। এর ভিতরে একাগ্র দশায় যোগীর
আংশিক সমাধি (সম্প্রজ্ঞাত সমাধি) ঘটে। পক্ষান্তরে নিরুদ্ধ চিত্তভূমিতে ঘটে
পূর্ণাঙ্গ সমাধি (অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি )।
পঞ্চেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে উপলব্ধির এই প্রক্রিয়া হলো চিত্তবৃত্তি।
চিত্তকে
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজন চিত্তবৃত্তিকে নিরোধ করা। এর জন্য প্রথম প্রয়োজন নিরুদ্ধ
চিত্তভূমি'তে
প্রবেশ করা।
পতঞ্জলির যোগসূত্রের চর্চা ‘সাংখ্যযোগৌ পৃথগ্ বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ।যৎ সাংখ্যৈঃ প্রাপ্যতে স্থানং তদযোগৈরপি গম্যতে।
একমপ্যাস্থিতঃ সম্যগুভয়োর্বিন্দতে ফলম্ ॥ (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা: ৫/৪)
অজ্ঞ ব্যক্তিগণ সাংখ্য ও যোগকে পরস্পরবিরুদ্ধ ও ভিন্ন-ফল-বিশিষ্ট বলে থাকেন, কিন্তু আত্মজ্ঞানীগণ তা বলেন না। কারণ উভয়ের ফল এক মোক্ষ। সেজন্য একটি সম্যক্ রূপে অনুষ্ঠিত হলে উভয়ের ফল মোক্ষ লাভ হয়।
একং সাংখ্যং চ যোগং চ যঃ পশ্যতি স পশ্যতি॥ (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা : ৫/৫)সাংখ্য যার অধিগম্য, যোগও তার অধিগম্য। সাংখ্য ও যোগের ফল একই মোক্ষ বলে উভয়কে যিনি অভিন্ন দেখেন, তিনিই যথার্থদর্শী, সম্যক্ জ্ঞানী।
পাতঞ্জলি সূত্রাবলী শুরু হয়েছে যোগানুশাসনম্ অধ্যায় দিয়ে
পাতঞ্জলির যোগশাস্ত্রে
চিত্তের নিরোধ দশাকে যোগ বলা
হয়। যখন কোনো প্রকার বিকার ছাড়া
চিত্ত স্থির দশায় পৌঁছায়,
তখনই জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনঘটে। সাধকের এই অবস্থাকে বলা হয় সমাধি।
চিত্ত নানাভাবে থাকতে পারে। চিত্তের নানা ভাবে থাকাটা তার অবস্থা। চিত্তের
স্বাভাবিক অবস্থাকে বলা
হয়
চিত্তভূমি ।
আর ইন্দ্রিয়ের সাথে যে কোনো বিষয়ের সংযোগের ফলে, তা চিত্তের বিষয়াকারে
পরিণত হয়।
চিত্তের এই পরিনামকে বলা হয় চিত্তবৃত্তি।
পতঞ্জলির যোগশাস্ত্রে
চিত্তের নিরোধই
হলো যোগ
বলা হয়। তাই যোগসাধনায় প্রথমেই
চিত্তভূমিকে
জানতে হয়।
যোগশাস্ত্র
দেখুন: যোগশাস্ত্র সূচি
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক
http://horoppayoga.wordpress.com/2010/01/06/yoga-eight-limbs-of-patanjali/