যোগশাস্ত্রে চিত্তের স্বাভাবিক অবস্থা বা চিত্তভূমিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-
ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র ও নিরুদ্ধ। যোগ সাধনার জন্য চিত্তের অবস্থা বিবেচনা
করে, এই পাঁচটি দশায় ভাগ করা হয়েছে। এই পাঁচটি ক্ষেত্রে কিভাবে মনের তিনটি বিকার (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ)
সক্রিয় থাকে সে বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
- ক্ষিপ্তভূমি: চিত্তের অস্থির দশাকে বলা হয় তাকেই ক্ষিপ্তভূমি। ক্ষিপ্ত অবস্থায় চিত্ত অস্থির হয়ে উঠে এবং রজঃ ও তমোগুণের
প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে চিত্র কোন বিশেষ বিষয়ের প্রতিই স্থির থাকতে পারে না।
ফলে চিত্ত অতীন্দ্রিয় বা আধ্যাত্মিক বিষয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা হারায়। এর প্রভাবে কাণ্ডজ্ঞহীনের মতো বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে বিচরণ করে।
যোগশাস্ত্র মতে চিত্তের এই ক্ষিপ্ত অবস্থা, কোনোভাবেই যোগ সাধনার উপযোগী অবস্থায় থাকে
না।
- মূঢ়ভূমি: চিত্ত যখন প্রবল রাগ ও মোহের দশায় চলে যায়, তখন চিত্ত মূঢ়ভূমি দশায় চলে যায় ।
মূঢ়ভূমিতে তমোগুণ প্রাধান্য প্রাধান্য পায়। এই দশায় চিত্ত ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে না।
মোহাচ্ছন্ন চিত্তে নিষ্ক্রিয়তা, আলস্য, তন্দ্রার আধিক্য বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রেও চিত্ত সাধনার একাগ্রতা থেকে বিচ্যুত হয়।
তাই যোগশাস্ত্র মতে এই দশায় কোনো ধরনের তত্ত্বচিন্তায় প্রবেশ করতে পারে না। তাই অবস্থাও যোগ সাধনার অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- বিক্ষিপ্তভূমি: এই দশায় চিত্ত ক্ষিপ্ত দশার মতো সবসময়ে অস্থির থাকে না। এই দশায় চিত্ত তত্ত্ব সাধনায় কখনো কখনো
তত্ত্ববিষয়ক জ্ঞানে চিত্তের আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিছুটা সাধনায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। কিন্তু এই ভাব স্থায়ী হয়ে ওঠে না।
যোগশাস্ত্র মতে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় চিত্ত তমোগুণের প্রভাব থেকে মুক্ত হয় বটে, কিন্তু কিন্তু রজঃ-এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না।
তাই তাই বিক্ষিপ্ত অবস্থায়ও যোগসাধনা সম্ভব নয়।
- একাগ্রভূমি: এই দশায় চিত্ত যে কোনো বিষয়ে বিরাজ করে। একে বলা হয় একাগ্র চিত্ত।
ফলে এই অবস্থায় চিত্ত তমঃ ও রজঃ প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে। এই কারণে চিত্ত
যেকোনো একটি বিশেষ বিষয়ে নিবিষ্ট থাকতে পারে। এ অবস্থায় অবস্থায় চিত্তের অনেক বৃত্তির নিরোধ হলেও সব বৃত্তির নিরোধ হয়
না। সাধক যখন এই অবস্থায় চিত্তকে ত্ত্ব চিন্তায় নিবিষ্ট হয়, তখন সে সমাধিস্থ হয়। এই সমাধিকে বলা হয় সম্প্রজ্ঞাত সমাধি।
- নিরুদ্ধভূমি: এই অবস্থায় চিত্তের সর্বপ্রকার বৃত্তি নিরুদ্ধ হয়।
অর্থাৎ সাধক সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়। একটি বিষয়ে মন
সম্পূর্ণ নিবিষ্ট দশায় চলে যায়। চিত্ত চাঞ্চল্য সম্পূর্ণ নিরুদ্ধ হওয়াতে সাধকের
মন শান্ত ও অকম্পিত দশায় পৌঁছায়। এই অবস্থাকে যথার্থ সমাধি দশা বলা হয়।
যোগশাস্ত্র মতে চিত্তবৃত্তি সম্পূর্ণ নিরুদ্ধ হলেও দেহের কোন বিকার হয় না। কারণ
এই সময় দেহে তখন পরমাত্মা অবস্থান করে। সাধারণ দশায় চিত্তে পরমাত্মার প্রভাব
থাকে না। কিন্তু সমাধি অবস্থায় পরমাত্মা যোগীর চিত্তকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এ অবস্থায় যে সমাধি হয়, তাকে অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি বলা হয়।
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক
http://horoppayoga.wordpress.com/2010/01/06/yoga-eight-limbs-of-patanjali/