যম
পতঞ্জলি
রচিত যোগশাস্ত্রের
অষ্টাঙ্গের প্রথম অঙ্গ। যোগশাস্ত্রেকে বলা হয়, নৈতিক আচরণ বিধি। অর্থাৎ ব্যক্তি
তাঁর পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কীরূপ আচরণ করবে, তার বিধিই হলো
যম। মূলত যম—
হলো সংযম বিধি। সহজ, সরল, অনাড়ম্বড় এবং লালসাহীন দশায় জীবনকে উপভোগ করাই হলো
যম।
সংযমের মধ্য দিয়ে জীবনকে উপভোগ
করার মধ্য, জীবনের অর্থ খুঁজে পাবার সাধনাই হলো, যমের চর্চা। যমের যমকে মোট ৫ ভাগে
ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলোকে বলা হয়—
১.অহিংসা : সৃষ্টিজগতের কোন সৃষ্টিকে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ করার
কর্ম হলো হিংসা। আর চিন্তায় বা কর্মে এই হিংসা থেকে বর্জন করার প্রক্রিয়া
হলো অহিংসা। এই সূত্রে মানুষের জীবনের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে হিংসা ত্যাগ
করা।
যোগশাস্ত্রে অহিংসা হলো―
ঈশ্বরের সৃষ্টির সব কিছুর প্রতি ভালোবাসা এবং এই ভালোবাসার ভিতর দিয়েই
ঈশ্বরকে পাওয়ার সাধনা।
২. সত্য : কর্ম এবং বাক্যে মিথ্যা থেকে দূরে থাকবে। এবং যে কোন মিথ্যা বা প্রতারণামূলক কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। ৩. আস্থা/অস্তেয় : নিজের ক্ষমতা অনুসারে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে হবে। এবং এক্ষেত্রে নিজের কর্মক্ষমতা ও প্রতিভার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। অপরের উপর নির্ভরশীলতার মানসিকতা মানুষকে আস্থাহীন করে তোলে। তাই আস্থাকে বলা হয় স্বনির্ভরতা অর্জনের শিক্ষা। এর অপর নাম অস্তেয়। যোগশাস্ত্রে মন ও বুদ্ধির শুদ্ধতা রক্ষার্থে অস্তেয়ের বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ অর্থে, অপরের দ্রব্য না বলে নেওয়াকেই চুরি বিবেচনা করা হয়। কিন্তু অস্তেয়ের অর্থ আরও ব্যাপক। যেমন― কোন বিশেষ কারণে কোন দ্রব্য গ্রহণ করে, তা অন্য কাজে ব্যবহার করলেও তা চুরি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আবার, কোন সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোন দ্রব্য নিয়ে, অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত রাখলেও চুরি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই দিক থেকে একজন যোগী অপরের দ্রব্য না বলে গ্রহণ করবেন না। অন্যের দ্রব্য প্রার্থনা করে গ্রহণ করে, তা যথাযথ প্রার্থনা অনুসারে এবং সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। এই সকল আচরণের মধ্য দিয়ে যোগীর চিত্তে লোভ লালসা রোধ হবে এবং সত্য রক্ষিত হবে। সবশেষে অস্তেয় চর্চার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়ার পথ সুগম হবে। ৪. ব্রহ্মচর্য : যে কোনো ধরনের প্রলোভন থেকে নিজেকে দূরের রাখার প্রক্রিয়া হলো ব্রহ্মচর্য। যোগশাস্ত্রে ব্রহ্মচর্য অর্থ যৌনাচার বিহীন জীবন নয়। ব্রহ্মচারী শুদ্ধ পারিবারিক জীবনযাপন করবে এবং অমিত বা অবৈধ যৌনাচার থেকে বিরত থাকবে। ৫. অপরিগ্রহ : অপরিগ্রহ অর্থ হচ্ছে অগ্রহণ বা গ্রহণ থেকে মুক্ত থাকা। এটি ব্রহ্মচর্যেরও সহায়ক একটি কার্য। প্রাথমিকভাবে যোগী আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপনের অভ্যাস ত্যাগ করবে। সুস্থ দেহে, সুস্থ মনে, আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রার জন্য সাধানাই হবে অপরিগ্রহ। দ্বিতীয় পর্যায়ে যোগী প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছু সংগ্রহ, মজুত করবে না। এবং ভোগের লিপ্সা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে। তৃতীয় পর্যায়ে যোগী অপরের দেওয়া কোনো উপহারও গ্রহণ করা যাবে না। যোগীকে মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বরের করুণায় তিনি জীবনধারণ করে আছেন এবং ঈশ্বরই তাঁকে প্রতিপালিন করছেন। |
সূত্র :
যোগাসনে রোগ আরোগ্য। ডঃ রমেন মজুমদার
রোগারোগ্যে যোগব্যায়াম। কানাইলাল সাহা
যোগ সন্দর্শন। ডাঃ দিব্যসুন্দর দাস
যোগ ব্যায়াম। সবিতা মল্লিক