দ্রাবিড়
ইংরেজি :
Dravid


সাধারণভাবে দ্রাবিড়িয়ান ভাষাসমূহে কথা বলে এমন ভারতীয় নরগোষ্ঠী। এরা মূলত ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী। এরা তেলেগু, তামিল, কর্ণাটক, ও মালায়ালাম ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ মূল দ্রাবিড় গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  ভারতের নিকটতম দেশের বিচারে  এদের দেখা যায় শ্রীলঙ্কা ও নেপালে। বাংলাদেশের দ্রাবিড়রা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মিলে গেছে। এই বিচারে বিশুদ্ধ দ্রাবিড় বাংলাদেশে ততটা দেখা যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালোয়েশিয়াতে তামিলদের একটি বড় অংশ বসবাস করে।

এই জাতিসত্তা মানুষের প্রধান তিনটি মহাজাতিসত্তার ভিতরে পুরোপুরি ফেলা যায় না। এই কারণে একে স্বতন্ত্র জাতি সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরা বসবাস করতো একমাত্র ভারতবর্ষ এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে। বর্তমানে এরা পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে অভিপ্রয়াণের মাধ্যমে বসবাস করছে।

ভারতীয় দ্রাবিড়

ব্রাহুই

এদের গায়ের রঙ কালো, গড় উচ্চতা মাঝারি। নিগ্রোয়েডদের মতো এদের ঠোঁট মোটা নয়। মাথা গোলাকার, চুল ঢেউ খেলানো বা মোটামুটি সপাট। তবে মোঙ্গোলীয়দের মতো সটান নয়। নাকের উচ্চতা মাঝারি। চোখ বড়, চোখের মণি কালো বা ঘোলাটে কালো হয়।

নৃবিজ্ঞানী এবং ভাষাতাত্ত্বিকরা মনে করেন যে, প্রোটো-অস্ট্রালয়েড জনগোষ্ঠীর পরে এবং আর্যদের ভারতে প্রবেশের আগে এরা ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল। এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০-৩৫০০ বৎসরের ভিতরে বসতি স্থাপন করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে যে সকল নমুনা এই অঞ্চলের হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদাড়ো থেকে পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে এই সভ্যতাকে সামগ্রিকভাবে 'সিন্ধু সভ্যতা' নামে অভিহিত করা হয়। আবার  J. Bloch এবং M. Witzel -এর মতো অনেকে গবেষক মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল আর্যদের অগ্রবর্তী দল এবং অনেকে মনে করেন, এদের দ্বারা ঋগ্বেদের আদি অংশ রচিত হয়েছিল। দ্রাবিড়রা ধীরে ধীরে দক্ষিণ ভারতে নিজেদের বসতি স্থাপন করা শুরু করে। অনেক মনে করেন বেলুচিস্তানের ব্রাহুই ভাষাভাষীরা দ্রাবিড়দের একটি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। ব্রাহুইরা তুলনামূলকভাবে ভারতীয় দ্রাবিড়দের চেয়ে ফর্সা, লম্বা এবং সুদর্শন।

থমসন, কাফম্যান এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে- খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের পরে, দ্রাবিড়রা আর্যদের দ্বারা ভারতবর্ষের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল থেকে বিতারিত হয়ে  দক্ষিণ ভারতে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছিল। দক্ষিণ ভারতে আগে থেকেই থাকা দ্রাবিড় এবং বিতারিত দ্রাবিড়দের সমন্বয়ে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আর্যরা এই বিশাল দ্রাবিড় অঞ্চলকে পদানত করতে পারে নি। কিন্তু ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর (নেগ্রিটো, প্রোটো-অস্ট্রালয়েড, দ্রাবিড়) আরেকটি অংশ থেকেই গিয়েছিল। এদেরকে আর্যরা অনার্য হিসেবে অভিহিত করতো। 

দ্রাবিড় নৃগোষ্ঠী'র শ্রেণিবিভাজন
ভারতের দ্রাবিড়ীয় জনগোষ্ঠীর নৃগোষ্ঠীগুলো রয়েছে, তারা হলো

দ্রাবিড়দের ভাষা-শ্রেণিগত বিভাজন
ভাষাতাত্ত্বিকরা দ্রাবিড়দের ভাষাকে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো-
১. উত্তর-পশ্চিমা ব্রাহুই।
২. মধ্য গোণ্ড
৩. পূর্ব মাল্‌তো
৪. অন্ধ্র তেলেগু
৫. দক্ষিণী দ্রাবিড়ীয়

দক্ষিণী দ্রাবিড়ীয় ভাষাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর এক ভাগে রয়েছে কন্নড়, টুলু ইত্যাদি ভাষা। অন্য ভাগে আছে মলয়ালম ও তামিল ভাষা।


সূত্র :

সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা। ডঃ রামেশ্বর শ।