মোঙ্গোলীয় জাতি
ইংরেজি :
mongoloid।
নৃবিজ্ঞানে বিশেষ দৈহিক
গড়নযুক্ত একটি জাতিগোষ্ঠী। তিনটি মহাজাতির একটি। জাতি সত্তা হিসেবে এই নামটি প্রথম
ব্যবহার করেছিলেন ক্রিস্টোফার মেইনার্স।
দেখুন :
মানুষের জাতিসত্তা
মঙ্গোলীয় চোখ |
|
|
|
মঙ্গোলীয় নাক |
এদের চুল সটান কালো চুল, মস্তিষ্ক গোলাকার, নাক চ্যাপটা, গায়ের রঙ বাদামি, চোখের রঙ কালো, ছোটো এবং চোখের প্রান্ত ভাঁজযুক্ত।
প্রাচীন সুমেরিয়ান
mong
(শস্য লোভী) শব্দ থেকে
mongoloid
শব্দটি গৃহীত হয়েছে। মিশরে এদের বলা হতো
Pehft
(নদী-মানব)।
সুমেরীয় সভ্যতার শেষের দিকে এরা খাদ্যের অন্বেষণে এদের একটি দল মধ্য-এশিয়া হয়ে-
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় প্রবেশ করে। অপর দলটি বেরিং প্রণালী পার হয়ে আমেরিকা মহাদেশে
প্রবেশ করে। এদের সাথে প্রতিটি আদিবাসীদের সংঘাত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন
স্থানে অন্যান্য আদীবাসীদের পরাজিত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। মধ্য এশিয়ায় এদের
মূল পেশা ছিল পশুপালন। পরে এরা ধীরে ধীরে শস্য উৎপাদনের জন্য ভূমি তৈরি করা শুরু
করে।
প্রাচীন মোঙ্গোলীয় ইতিহাস খুব প্রশংসনীয় নয়। মধ্যযুগে এদেরকে হিংস্র, ধর্ষণকারী, লুণ্ঠনকারী হিসাবে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষ ঘৃণা করতো। এর ফলে মধ্যযুগে এরা প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিল। অন্যান্য জাতিসত্তার ভিতর রাজ্য রক্ষার কারণে বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি হলে, এরা মোঙ্গলিয়া, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে সরে যায়। এদের প্রবল আধিপত্য এবং হিংস্রতার জন্য, এই অঞ্চলের অনেক জায়গায় প্রোটো-অস্ট্রালয়েড মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
এরা মোঙ্গলিয়া ঘুরে চীনে প্রবেশে করেছিল
১২ থেকে ১০ হাজার বছর
আগের। ৭ হাজার বছর আগে এরা শস্য উৎপাদন তথা কৃষির পত্তন ঘটিয়েছিল। ৬ হাজার আগে এরা
লিপি ব্যবহার শিখেছিল। আর চীনের প্রকৃত রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল খ্রিষ্টাপূর্ব
২১০০ অব্দে। জিয়া (Xia
) নামক এই রাজ বংশের
পতন ঘটেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দে।
বর্তমানে মোঙ্গলয়েড জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা এশিয়ার মোঙ্গোলিয়া, চীন, তাইওয়ান, জাপান,
কোরিয়া, ভিয়েৎনাম, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর অঞ্চলের প্রধান জনগোষ্ঠী।
মালোয়েশিয়াতে এদের বিশাল অংশ বসবাস করে। সেই তুলনায় ইন্দোনেশিয়াতে তুলনমূলকভাবে কম।
এছাড়া রাশিয়ার এশিয়া অংশে এদের দেখা যায়।
প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে এরা প্রবেশ করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দিয়ে। এরা প্রথমে পূর্ব ও উত্তর ভারতের পাহাড়ী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বিশেষ করে চীন-ভারতের সীমান্তবর্তী তিব্বত, ভুটান এবং হিমালয়ের ভারতবর্ষে অভিমুখী অঞ্চল নেপাল, সিকিম এবং তৎসলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের মোঙ্গোলীয়রা প্রবেশ করেছিল মায়ানমারের চীন প্রদেশের চীন পাহাড়ের বন্ধুর পথ পেরিয়ে। স্থানীয় প্রোটো-অস্ট্রালয়েড -দের সাথে সংমিশ্রণও ঘটেছিল। বাঙলি জাতিগোষ্ঠীর সাথে এদের সংমিশ্রণ ঘটেছে পূর্ব-ভারতের পাহাড়ী মোঙ্গলয়েডদের সাথে।
আধুনিক মোঙ্গোলয়েড মানব গোষ্ঠীর চেহারার সাথে
আদি মোঙ্গলয়েডদের চেহারার পার্থক্য খুবই সামান্য। নানাদেশে ছড়িয়ে থাকা মোঙ্গলয়েডদের
গায়ের রঙ বা চেহারার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে কতিপয় বিখ্যাত মোঙ্গোলয়েডদের ছবি
দেখানো হলো
কুবলাই খান |
মাও সেতুং |
ব্রুস লি |
মানুষের জাতিসত্ত্বা'র বিচারে মোঙ্গোলীয় জাতিসত্ত্বাকে ১০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো হলো―
সূত্র :