জীবন (
life
) |
আর্কিয়া
Archaea
এককোষী আনুবীক্ষণিক জীবের একটি স্বক্ষেত্র (Domain)। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের এর নামকরণ করেন- Woese, Kandler এবং Wheelis। জীবজগতের শ্রেণিবন্যাসে একে জীবন (life) -এর আদি ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৪০০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে সাগরজলে
এ্যামিনো এ্যাসিড সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জীব সৃষ্টির সূত্রপাত হয়েছিল। ক্রমবিবর্তনের
ধারায় ৪০০-৩৯০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে আরএনএ ভিত্তিক জীবকণিকার বিকাশ ঘটেছিল এই সময়ের
ভিতরে।
এই জীবকণিকা থেকেই
উদ্ভব হয়েছিল প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ
এবং এই জাতীয় কোষ ভিত্তিক জীব।
এই কোষে সুসংগঠিত ডিএনএ, মাইটোকণ্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, লাইসোজোম, গলজি বস্তু ছিল না। সেকালের এই কোষের আকার এক থেকে দশ মাইক্রোমিটার (µm) এর মধ্যে ছিল।
৩৯০-৩৬০ কোটি
খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে
প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-ভিত্তিক
আদি জীবকণিকা থেকে ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব হয়েছিল। বর্তমানে ব্যাক্টেরিয়াকে
জীবস্বক্ষেত্র
(Domain)
হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই সময়ের ভিতরে জীবকোষেরই একটি প্রজাতি
থেকে
আর্কেব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ঘটেছিল।
প্রায় ৩০০
কোটি খ্রিষ্টপূ্বাব্দের পুরানো জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে, এই ব্যাক্টেরিয়ার
পূর্বপুরুষদের অস্তিত্বের কথা জানা গেছে।
এদের দেহে শক্তি উৎপন্ন হতো গ্লাওকোলাইসিস
(Glycolysis)
প্রক্রিয়া। এই
প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তি জীবকণিকাগুলোর ভিতরে সঞ্চালিত হতো।
আদি পৃথিবীর কর্দমাক্ত
পরিবেশে এরা সবুজ এবং
লোহিতনীল
বর্ণের গন্ধক অঞ্চলে বসবাস করতো এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া হাইড্রোজেন
সালফাইড ব্যবহার করতো। ফলে অক্সিজেনের পরিবর্তে এরা বাতাসে গন্ধক পরিত্যাগ
করতো। এই কারণে এদের শরীরের চিনি তৈরি হতো না।
ফলে অক্সিজেনের পরিবর্তে এরা বাতাসে গন্ধক পরিত্যাগ
করতো। এই কারণে এদের শরীরের চিনি তৈরি হতো না।
৩৬০-৩৫০ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে প্রাক্-প্রাণকেন্দ্রিক কোষ-ভিত্তিক আদি জীবকণিকা থেকে উদ্ভব হয়েছিল আর্কিয়া জীবস্বক্ষেত্রের প্রজাতিসমূহ। এই বিভাজনের মধ্য দিয়ে দুটি আদি স্বক্ষেত্র পৃথক হয়ে গিয়েছিল। এই বিচারে জীবের শ্রেণিকরণের রূপটি দাঁড়ায়-
ব্যাক্টেরিয়া এবং আর্কিয়া। জীববিজ্ঞানের শ্রেণিকরণে এই দুই জাতীয় জীবকে জীব-স্বক্ষেত্র (Domain) বলা হয়।
বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে
ব্যাক্টেরিয়া
এবং
আর্কেব্যাক্টেরিয়া
মধ্যে কোনো পার্থক্য স্পষ্ট ছিল না। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে Carl Woese
এবং
George Fox
উভয় জীবকণিকার পার্থক্য নিরূপণ করে
আর্কেব্যাক্টেরিয়াকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে সমর্থ হন। উল্লেখ্য
আর্কেব্যাক্টেরিয়ার
প্রাচীনতম নমুনা পাওয়া
গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Yellowstone National Park.-এ।
এই বিজ্ঞানীদ্বয় কিছু জীবকণিকা প্রাপ্তির সূত্রে
আর্কিয়া এবং
ব্যাক্টেরিয়া ডোমেইন হিসেবে ভাগ
করেন।
আরকিয়ার প্রজাতিসমূহ নানা ধরনের পরিবেশে পাওয়া যায়। গভীর সমুদ্রের তলদেশে,
আগ্নেয়গিরির মুখে, ফুটন্ত ঝরণা, অতি অম্লীয় পরিবেশে এদের পাওয়া যায়। হোমো
গণের পরিপাকতন্ত্রে এমন কিছু আর্কিয়া আছে, যেগুলো মিথেন গ্যাস তৈরি করে। পরিবেশের
উপর ভিত্তিক করে আর্কিয়াগুলো চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো-
লবণাক্ত পরিবেশ (halophile): এরা লবণাক্ত পরিবেশে বাস করে। এদের পাওয়া যায় লবণাক্ত হ্রদে।
উচ্চতাপীয় পরিবেশ (thermophile): এর উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত স্থানে বাস করে। এরা ৪৫ °সে (১১৩ °ফা) এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে পারে। এদের কিছু প্রজাতি ৮০ °সে (১৭৬ °ফা) এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় বাস করে। এদের অবশ্য অতি-উচ্চতাপীয় (hyperthermophilic) শ্রেণিতে ফেলা হয়। এদের কিছু প্রজাতি ১২২ °সে (২৫২ °ফা) এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় বসবাস করতে পারে।
ক্ষারীয় পরিবেশ (alkaliphile): এরা ক্ষারীয় পরিবেশে বাস করে। সাধারণত যে কোনো ক্ষারীয় পরিবেশে এরা বাস করে।
অম্লীয় পরিবেশে (acidophile): এরা অম্লীয় পরিবেশে বাস করে। এরা উচ্চ অম্লীয় পরিবেশে থাকে। Picrophilus torridus প্রজাতিটি ১.২ মোলার সালফিউরিক এসিড এর সমতুল্য পরিবেশে বেশ স্বচ্ছন্দেই টিকে থাকে।