অগ্ন্যাশয় (মানবদেহ)
[অভিধান >
অগ্ন্যাশয়]
Pancreas
সাধারণ অর্থে অগ্ন্যাশয় হলো- মেরুদণ্ডী প্রাণীদের
পরিপাকতন্ত্রেপৌষ্টিক গ্রন্থ। একই সাথে একে অন্তঃশ্রাবী
গ্রন্থি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অন্যান্য প্রজাতির মতও মানবদেহে এই
গ্রন্থি পরিপাক ও অন্যান্য কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মানবদেহের অগ্ন্যাশয়ের
দৈর্ঘ্য ১৫-২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৬৫ থেকে ৭৫ গ্রাম।
অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডেনামের
অর্ধবৃত্তাকার কুন্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটা দেখতে অনেকটা
লাতিন
J
বর্ণের মতো দেখায়।
এর মাথা ডিওডেনামের (ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশ) কুণ্ডলির ফাঁকে থাকে। এবং প্রান্তীয়
লেজা অংশ সংকীর্ণ হয়ে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মাথা ও লেজের মাঝের অংশকে বলা
হয় অগ্ন্যাশয়ের দেহ বলে।
অগ্ন্যাশয়ের
গ্রন্থিগুলো থেকে ছোটো ছোট নালিকা বেরিয়ে একত্রিত হয় এবং উইর্সাং নালি
(duct of Wirsung) গঠন করে। এ নালি গ্রন্থির দৈর্ঘ্য বরাবর এসে ডিওডেনামের কাছে অভিন্ন পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে ভ্যাটার এর অ্যাম্পুলার মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিকোষগুলো
ছোট ছোট নালিকার প্রান্তে গুচ্ছাকারে সাজানো থাকে। এগুলোর বাইরে ক্ষুদ্র বহুভুজাকার কোষ একত্রিত হয়ে একেকটি আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যালস (islets of Langerhans) গঠন করে। এগুলো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে।
অগ্ন্যাশয়ে রয়েছে
অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা অংশ।
- বহিঃক্ষরা অংশ:
এটি পরিপাক তন্ত্রের একটি সহায়ক গ্রন্থি
হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে নির্গত হয় পাচক রস। এই পাচক রসের
প্রধান উপাদান হিসেবে থাকে ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন,
অ্যামাইলেজ ও লাইপেজ । এর
ভিতরে ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন ক্ষুদ্রান্তের
প্রোটিন জাতীয় খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। অ্যামাইলেজ
শর্করা জাতীয় খাদ্যকে ভেঙে ফেল। আর লাইপেজ
স্নেহজাতীয় খাদ্যকে ভেঙে ফেলে। একজন পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ মানুষের অগ্ন্যাশয় থেকে
২৪ ঘন্টায় প্রায় ৫০০-১২০০ মিলিলিটর পাচকরস নির্গত হয়। সাধারণত, খাদ্য গ্রহণের
সময় খাদ্যের গন্ধ, স্বাদ ইত্যাদির দ্বারা স্নায়ুতে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তার
প্রভাবে পাচক রসের ক্ষরণ হয়। এবং খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের উপর এর ক্ষরণে
হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। আবার খাদ্যদ্রব্য ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছালে, ক্ষুদ্রান্তের গাত্র
থেকে সিক্রিটিন এবং প্যানক্রিয়োজাইমিন হরমোনের প্রভাবে অগ্ন্যাশয় পাচকরস
নির্গমণের উদ্দীপনা পায়।
নির্গত অগ্ন্যাশয় নালী পিত্তনালীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের
ডিউডেনামের মধ্য অংশে উন্মুক্ত হয়। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎসেচক নিঃসৃত হয়। এসব এনজাইম শর্করা, আমিষ ও স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে।
অন্তঃক্ষরা অংশ:
এর নাম ল্যাঙ্গারহান্স কোষপুঞ্জ
(Islet of Langerhans)।
এগুলো প্যারেনকাইমাল কোষ দিয়ে গঠিত। এগুলো
হরমোন তৈরি করে। এই
অংশগুলির মধ্যে মধ্যে বিক্ষিপ্ত অন্তঃক্ষরা কোষগুচ্ছ থাকে। এরা বিটা কোষ ইনসুলিন, আলফা কোষ গ্লুকাগন, ডেল্টা কোষ
সোমাটোস্টাটিন হরমোন নিঃসরণ করে। ইন্সুলিন ও
গ্লুকাগন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোর পাশাপাশি অগ্ন্যাশয় দেহে অম্ল-ক্ষারের সমতা, পানির সমতা ও দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থগুলললোর মধ্যে ইনসুলিন
রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই অগ্ন্যাশয়ের কোন রোগে এই সব কোষ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়।
সূত্র :
- বিভিন্ন জীববিজ্ঞানের গ্রন্থাবলি থেকে সংগৃহীত তথ্যাদি অনুসরণে