মানুষের দৈহিক বৈশিষ্ট্য


মানুষের দেহগত আকারের ভিত্তি হলো এর কঙ্কাল। এই কঙ্কালের কাঠামোকে অবলম্বন করে মানুষের দেহের সকল অঙ্গ স্থাপিত। মানুষের উচ্চতার ভিত্তি প্রত্যক্ষভাবে কঙ্কালের উচ্চতার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু স্থূলতা নির্ভর করে মানুষের শরীরের মাংশপেশী ও মেদ। দৈহিক উচ্চতা ও স্থূলতা নিয়ে মানুষের একটি প্রাথমিক অবয়বের চিত্র পাওয়া যায়। জাতিগোষ্ঠীর বিচারে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মানুষের দৈহিক উচ্চতা নানা রকমের হয়। জাতিগোষ্ঠীভেদ উচ্চতা ১.৪ মিটার (৪ ফুট ৭ ইঞ্চি) থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতা ১.৯ মিটার (৬ ফুট ৩ ইঞ্চি) হয়ে থাকে।

 

আবার মানুষের কঙ্কাল, মাংশপেশী, মেদ, রক্ত ও অন্যান্য জৈবিক উপকরণ নিয়ে পরিমাপ করা হয় এর ওজন।  একই জাতির মানুষের ভিতরে ওজনের হেরফের হতে পারে। একই ভাবে ওজনের হেরফের লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ পূর্ণ বয়স্ক নারীর গড় ওজন ৫৪-৬৪ কেজি এবং পুরুষের গড় ওজন ৭৬-৮৩ কেজি।

 

দ্যা ভিঞ্চির ভিট্রুভিয়ান মানুষ  

এর বাইরে রয়েছে মানুষের কিছু সাধারণ বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। যেমন মাথায় চুল থাকে। প্রাইমেট বর্গের অন্যান্য প্রজাতিগুলোর তুলনায় মানুষের শরীরের লোমের পরিমাণ কম। পুরুষের তুলনায় নারী মাথার চল লম্বা ও ঘন হয়। এবং মাথার চুল পড়ে নেড়া হয়ে গেছে এমনটা বিরল। পুরুষের চুল নারীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃতভাবে ছোটো হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথার চুলের পরিমাণ কমে যায়। কারো কারো মাথা পুরোপুরিভাবে কেশশূন্য হয়ে যায়। তরুন-বা যুবা বয়সে জাতিগোষ্ঠীর বিচারে চুলের রঙ কালো, লালচে হয়। বৃদ্ধবয়সে চুলের রং সাদা হয়ে যায়। চুলের এই দশাকে পাকা চুল বলা হয়। চুলের গড়ন অনুসারে নানা রকমের হতে পারে। যেমন কোঁকড়ানো, ঢেউ খেলানো, সটান ইত্যাদি। শ্বেতাঙ্গদের দেহের রঙের সাথে মাথার চুলের রঙের সমন্বয় অনেক সময় হেরফের লক্ষ্য করা যায়। শ্বেতাঙ্গের অনেকের চুল লালচে হয়, আবার অনেকর চুল কালো হয়। কিন্তু কালো বর্ণের মানুষের চুলের রঙ সাধারণত কালোই হয়ে থাকে।

 

মাথার গড়ন গোলাকার বা লম্বাটে হয়। এই মাথার দুই পাশে থাকে শ্রবণেন্দ্রিয়ের বহিরাংশ কান। মাথার সম্মুখভাগের উপরে প্রশস্থ অংশটিকে বলা হয় কপাল। কপালের নিচে থাকে দুটি অনুভূমিক নির্দেশে চোখ। চোখের উপরিভাগে থাকে পাতলা লোমের আবরণ। একে বলা হয় ভ্রূ। উভয় চোখের মধ্যবর্তী অঞ্চল থেকে মুখগহ্বের উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং উন্নীত নাসিকা অংশ। নাসিকা ঘ্রাণেন্দ্রিয় এবং শ্বাসতন্ত্রের বহিরাংশ। নাকের নিচ থেকে মুখগহ্বরের অনুভূমিক প্রসারিত অংশকে ঔষ্ঠ। এই অংশ মুখগহবরের কপাটের মতো কাজ করে। মুখদ্বারের নিম্নাংশের নাম অধর। মানুষ চোয়াল সম্প্রসারণ এবং সংকোচনের দ্বারা অধর এবং ওষ্ঠ নাড়াতে পারে। এছাড়া দাঁতে দাঁত চেপেও অধর-ওষ্ঠকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই অধর-ওষ্ঠের নিচেই রয়েছে দাঁতের সারি।

 

মানবদেহের বাহ্যিক অংশের পরিচয়

মাথার নিচ থেকে কিছুটা বর্ধিত অংশ নিচের দেহকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। একে গলা বলা হয়। গলার পিছনের অংশকে বলা হয় ঘাড়। গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত অংশটিকে বলা হয় দেহকাণ্ড। নারীদেহের উদরের দুই পার্শ্ব পুরুষের তুলনায় চাপা। পুরুষের দেহকাণ্ড এই বিচারে বেশ সরল। স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে নারী পুরুষের বক্ষদেশে স্তনগ্রন্থি আছে। তবে নারীদেহের স্তনগ্রন্থি বেশ স্ফিত। এবং মানব শিশু মায়ের স্তনবৃন্ত চোষণ করে খাদ্যগ্রহণ শুরু করে।

 

দেহকাণ্ডের উপরের অংশের উভয় পার্শ্ব থেকে দুটি হাত থাকে। প্রতিটি হাতের অগ্রভাগের ছড়ানো অংশকে হাতের তালু বলা হয়। এই তালুর সাথে যুক্ত থাকে পাঁচটি আঙুল। এই আঙুলগুলোকে বলা হয় বৃদ্ধা, তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা এবং কনিষ্ঠা। মানুষ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলকে পেঁচিয়ে অন্য আঙ্গুলগুলোর সাহায্যে কোনো বস্তুকে দৃঢ়ভাবে ধরতে পারে। অন্যান্য প্রাইমেট-দের এই ক্ষমতা নেই।

 

দেহকাণ্ডের নিম্নাংশের সাথে যুক্ত থাকে দুটি পা। আর দেহকাণ্ডের সাথে পা যে স্থানে যুক্ত থাকে, তাকে বলে মাজা। মানুষ দুই পায়ের পাতার উপর ভর করে সটান ভূমির উপর দাঁড়াতে পারে। পায়ের পাতার অগ্রভাগে থাকে পাঁচটি আঙুল। 

 

মানুষের দুই পায়ের সংযোগস্থল বরাবর প্রজনন অঙ্গ অবস্থিত। নারী পুরুষভেদে অঙ্গের গঠন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

 

মানুষের গায়ের রঙ জাতিভেদে নানারকমের হয়। তবে মানুষের গায়ের রঙকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ তিনটি হলো সাদা, কালো এবং বাদমি। মূলত অন্যান্য সকল রঙ এই তিনটি রঙের হ্রাসবৃদ্ধিতে প্রকাশিত হয়।

 

মানুষের দেহাভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য

মানুষের সকল জৈবিক কার্যবলি সংঘটিত হয়, তার দেহের অভ্যন্তরে। দেহ ঢাকা থাকে পাতলা ত্বকে। মূলত ত্বকের নিচ থেকেই যাবতীয় জৈবিক কার্যবলি নানাভাবে সম্পন্ন হয়। মানবদেহের যাবতীয় জৈবিক কার্যকলাপের সাথে সম্পর্কিত দেহাংশগুলোকে অঙ্গতন্ত্র বলা হয়।

নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন করার জন্য কিছু অঙ্গ  একত্রে কাজ করে। এই কাজ সম্পাদনে অঙ্গসমূহ পরস্পরের সহযোগিতা করে থাকে। সমগ্র কর্মকাণ্ড সম্পাদনে এদের কর্ম বিভাজনও থাকে। কর্মবিষয়ভিত্তিক এই সকল অঙ্গকে একত্রে বলা হয় অঙ্গতন্ত্র (Organ System)। যেমন পৌষ্টিকতন্ত্র। এই তন্ত্রে পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, মলাশয় ইত্যাদি অঙ্গগুলো একত্রে কাজ করে। সেই কারণে এই অঙ্গগুলোকে অঙ্গতন্ত্রের সদস্য-অঙ্গ বলা হয়। মানবদেহ যে সকল অঙ্গতন্ত্র পাওয়া যায়, সেগুলো হলো

এছাড়া রয়েছে শরীরের যাবতীয় রয়েছে শরীরের নানা ধরনের প্রয়োজনে উৎসেচক নির্গমণকারী অন্তঃক্ষরা বা অন্তঃশ্রাবী গ্রন্থিসমূহ।