পিটুইটারি গ্রন্থি
pituitary gland

মানবদেহের অন্যতম অনালি  অন্তঃশ্রাবী/অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। ওজন মাত্র ৫০০ এমজি। এই গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনগুলি, অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে একে মুখ্য গ্রন্থি বা প্রভু গ্রন্থি বলা হয়। পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের মূলদেশে স্ফেনয়েড অস্থির সেলা-টারসিকা প্রকোষ্ঠে অবস্থিত ।

এই গ্রন্থিকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। ভাগগুলো হলো-
১. সম্মুখ অংশ (Anterior Lobe): এই ভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস। নানাবিধ কারণে মানুষের দেহে যখন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরণের প্রয়োজন হয়, তখন হাইপোথ্যালামাস থেকে বিশেষ ধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়ে রক্তে মিশে যায়। এর প্রভাবে পিটুইটারি গ্রন্থি সুনিরদিষ্ট প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় হরমোনের সরবরারহ করে। যেমন- আকস্মিক বিপদে বা উত্তেজনায় হাইপোথ্যালামাস থেকে হরমোন ক্ষরিত হয়। এর প্রভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির সম্মুখভাগ থেকে অ্যড্রিন্যাল কর্টেক্স-উদ্দীপক হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়।

এই গ্রন্থের সম্মুখভাগ থেকে প্রধানত ৬ ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলো হলো-
১.১ শরীর বর্ধক হরমোন (STH/GH) : এই হরমোন মানুষের দেহের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অস্থি ও তরুণাস্থর দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া শর্করা, প্রোটিন ও স্নেহজাতীয় খাবারের বিপাকে সাহায্য করে। এই হরমোনের কম ক্ষরণে বামনত্ব বা ডোয়ারফিজম এবং অধিক ক্ষরণে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম বা অ্যাক্রোমেগালি রোগ হয়।
 
১.২. থাইরোট্রপিক স্টিমুলেটিং হরমোন(
(TSH) : এই হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা।  দেহের আয়োডিন বিপাক নিয়ন্ত্রণে এই হরমোন সাহায্য করে। এই হরমোনের কম ক্ষরণে থাইরয়েডের ক্ষরণ হ্রাস পায় এবং ক্ষরণ বেড়ে গেলে থাইরয়েড গ্রন্থির আকার বেড়ে যায় ।

১.৩. অ্যাড্রিনোকোর্টিকোর্ট্রপিক হরমোন
(ACTH) । এই হরমোন অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলকে উদ্দীপিত করে তার ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গেলে অ্যাডরিনাল কর্টেক্সের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে কুশিং বর্ণিত রোগ হয়।

১.৪. যৌনকার্যক্রম-নিয়ন্ত্রক হরমোন। নারী ও পুরুষ ভেদে এক্ষেত্রে দুই ধরনের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। যেমন
১.৪.১. ফলিকন উদ্দীপক(স্টিমুলেটিং) হরমোন (FSH): স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল বা ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে এবং তা থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরিত হতে সাহায্য করে।

১.৪.২ ইন্টারস্টিশিয়াল সেল স্টিমুলেটিং হরমোন
( ICSH) : এই হরমোন পুরুষ দেহে শুক্রাশয়ের ইন্টারস্টিশিয়াল কোষসমূহকে উদ্দীপিত করে এবং টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে
৫. লিউটিনাইজিং হরমোন (LH)): স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয়ের করপাস লিউটিয়াম বা পীত গ্রন্থি গঠনে এবং তা থেকে প্রজেস্টেরন হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে।

৬. প্রোল্যাকটিন বা ল্যাকটোজেনিক হরমোন
(LTH) : মাতৃদেহে স্তনদুগ্ধ ক্ষরণে সহায়তা করে ।
২. মধ্য অংশ (Intermediate lobe): এই অংশ হতে খুব বেশি হরমোন নিঃসৃত হয় না। এ অংশের নিঃসৃত একমাত্র হরমোনের নাম মেলানোসাইট উদ্দীপক হরমোন (MSH)

৩. পশ্চাৎ অংশ
(Posterior lobe)। নিউরোহাইপোফাইসিস: অংশ থেকে দুই ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। 
৩.১. অ্যান্টিডিউরেটিক হরমোন (ADH) । এর অপর নাম ভাসোপ্রেসিন। এটির প্রাথমিক কাজ রক্তচাপ, রক্তের পরিমাণ এবং কলার কোষগুলোর জলের স্তর বজায় রাখা। হরমোন কিডনির মাধ্যমে জলের অণুগুলির পুনঃসংশ্লিষ্ট এবং দেহে জমা হওয়া প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস সম্পর্কিত কার্য সম্পাদন করে। শরীরের জলশূন্যতা থেকে রক্ষা করে।
৩.২. অক্সিটোসিন হরমোন এটি একটি পলিপেপ্টাইড হরমোন বিশেষ। একে ভালোবাসা এবং যৌনাসক্তি বৃদ্ধির হরমোন হিসেবে অভিহিত করা হয়।