স্নায়ুতন্ত্র
(মানবদেহ)
Nervous System
দেহের স্নায়ুতন্ত্র হলো- তড়িৎ-রাসায়নিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই
ব্যবস্থায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে কোটি কোটি
স্নায়ুকোষ
(Nerve cell)
। জীববিজ্ঞানের ভাষায় এই কোষগুলোকে বলা হয় নিউরোন
(neuron)।
নিউরোন সমন্বিত যে তন্ত্রের সাহায্যে দেহ বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনায় সাড়া
দেয় এবং একই সাথে বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক কাজের সামঞ্জস্য রক্ষা করার মাধ্যমে
দেহকে পরিচালিত করে, তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলা হয়। দেহের এই কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য,
মস্তিষ্ক কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে কাজ করে। আর দেহের বিভিন্ন অংশের সাথে মস্তিষ্কের
যোগাযোগ রক্ষিত হয় নানা ধরনের তন্তু দ্বারা। নৃবিজ্ঞানীদের মতে- প্রায় ৬০ কোটি থেকে ৫৫
কোটি বৎসর আগে প্রাণীদেহে স্নায়ুতন্ত্রের উদ্ভব ঘটেছিল।
জীবজগতে সকল প্রাণীর ভিতরে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক জটিল। মানুষ শ্রেষ্ঠজীব
হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এই জটিলতর স্নায়ুতন্ত্রের জন্য। উল্লেখ্য, এই জটিল
স্নায়তন্ত্রের ভিতরে জটিলতর হলো- মস্তিষ্ক। মানুষের এই জটিলতর মস্তিষ্ক এক সাথে কত
যে কাজ করে, ভাবলে নিজের মস্তিষ্কই গরম ওঠে। আপনার কর্মময় জীবনের একটি ছোট অংশের
কথা ভাবুন। ধরা যাক আপনি শহরের কোনো ব্যস্ততম এলাকার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
আপনার দেহ দুটি পায়ের উপর রয়েছে উলম্ব অবস্থায় স্থির দশায়। দেহের এই ভারসাম্য
রক্ষার জন্য মস্তিষ্ক অবিরত কাজ করে চলেছে। আপনি শুধু দাঁড়িয়ে আছেন তাই নয়। ধরা যাক
আপনার কানে ঢুকানো হেডফোনে দিয়ে কোনো ডিভাইস থেকে গান শুনছেন। সেখানে গানের বাণী,
সুর, ছন্দ, অনুষঙ্গী যন্ত্র আপনার মনকে মোহিত করে রেখেছে। মস্তিষ্ক এই কাজটুকুও
করছে। এবার আপনি এই অবস্থায় হাঁটা শুরু করলেন। এর ফলে মস্তিষ্কের নতুন কাজ শুরু
হলো। মস্তিষ্ক আপনার শরীরের ভারসাম্যসহ,
প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়্যন্ত্রণ করা শুরু করেব। একই সাথে সে পথ
দেখার কাজ, লোকের ঠেলাঠেলি সমালানো, যানবাহনের ধাক্কা এড়ানো, অন্যকে ধাক্কা না
দেওয়া ইত্যাদি হাজার রকমের বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে থাকবে মস্তিষ্ক।
প্রাত্যহিক জীবনযাপনে মানুষ এই জাতীয় কাজে অনেকটা অভ্যস্থ হয়ে উঠে, তাই অনেক কাজই
মানুষ কঠিন মনে করে না। মানুষের হাটা, দৌড়ানো, কথা বলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে
মস্তিষ্ককে বিশেষ কোনো কাজ করতে হচ্ছে, এ নিয়ে যেন মাথারই মাথা ব্যথা নেই। এই
অভ্যস্থতার কারণে, মস্তিষ্ক যে কতটা অবিশ্বাস্য কাজ করে, আমাদের মনে কোনো বিস্ময়ই
জাগে না। ধরা যাক আপনি কোনো অচেনা শহরে একটি কোনো বাড়ি খুঁজছেন। এই জাতীয়
খোঁজাখুঁজিতে দেহ ও মনের উপর যে কি পরিমাণ ধকল যায়, সে বিষয়ে কমবেশি সবারই অভিজ্ঞতা
আছে। কিন্তু ভেবে দেখুন- গলি তস্য গলির ভিতরে আপনার বাড়ি। আপনি অফিস থেকে বাড়ি
ফিরছেন পায়ে হেঁটে। হয়তো সংসারের কথা ভাবছেন, কিম্বা অফিসের ঝামেলা আপনার মনকে
আচ্ছন্ন করে আছে। আপনার মাথায় পথ চিনে বাড়ি ফেরার কথাও নেই। কিন্তু আপনার মাথার
ঘিলুতে আছে। অফিস থেকে বেরিয়ে আপনি ঘিলুতে শুধু ইনপুট দিয়েছেন- 'বাড়ি যাব'। তারপর
অন্য ভাবনা ডুবে গিয়েছে। আপনি ঠিকই বাড়ির পথ ধরে হেঁটে চলেছেন। মাঝে মাঝে চোখ তুলে
দেখে নিচ্ছেন ঠিক পথে যাচ্ছি কিনা। ওই টুকই। একসময় দেখবেন চলতে চলতে আপনি ঠিক বাড়ির
দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এটা কি বিস্ময়কর নয়।
স্নায়ুতন্ত্রের বিস্ময়কর জগত শুধু চলমান জগৎসংসার নিয়ে ভাবে না। তার কাছে নতুনকে
জানার এবং তার সাথে পরিচিত হয়ে উঠার অসম্ভব ক্ষমতা। পৃথিবীর প্রাকৃতিক এবং
জীবনযাত্রার রূপ পাল্টাচ্ছে প্রতি নিয়ত। ঝড়ঝঞ্ছা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই,
প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে চলে ধীর গতিতে।
মানুষ নিজেকে পরিবর্তনশীল জগতের সাথে ধীরে ধীরে খাপ খাইয়ে নেয়। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট
পরির্তন ঘটে দ্রুত এবং মানুষ তার সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে থাকে। মানুষের এই খাপ
খাইয়ে নেওয়ার প্রবণতাকে বলা হয় আচরণের নমনীয়তা
(plasticity)।
ভেবে দেখুন, বর্তমান সময়ে হাতে হাতে ঘুরছে মুঠোফোন। প্রথম দিকে কথা বলার জন্য, এর
ব্যবহার ছিল। মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এক লাফে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল। একালের
মুঠোফোন বিশ্বকে হাতের মুঠোতে এনে দিয়েছে। আমাদের জীবনযাপনে মুঠোফোন এতটাই গভীরভাবে
প্রবেশ করেছে যে, আমাদের মুঠিতে মুঠোফোন নেই, আমরাই মুঠোফোনের মুঠিতে চলে গিয়েছি।
আমাদের মস্তিষ্ক কত নমনীয়ভাবে এই দশাকে মেনে নিয়েছে।
নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের অনেক বেশি। শুধু তাই বৈরী
পরিবেশকে কিভাবে অনুকুলে আনতে হয়, মস্তিষ্ক সেটা নিয়েও ভাবে। তাই মানুষ,
শীত-গ্রীষ্মে পোশাকের ধরন পাল্টায়, বন্যার পানি রোধে বাঁধ দেয়, পানীয় জলকে শোধন করে
এবং রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে, আগামী দিনের কথা ভেবে খাদ্য সঞ্চয় করে
ইত্যাদি কত কি।
মানুষের এত সব কর্মকাণ্ড ঘটে থাকে স্নায়ুতন্ত্রের মন্ত্রে। এই মন্ত্র লেখা হয় মস্তিষ্কে। এর কিছু মন্ত্র আছ জন্মসূত্রে পাওয়া, কিছু আছে অর্জনের কৃতিত্বে প্রতিষ্ঠিত। এর কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছে মস্তিষ্ক আর ইন্দ্রিয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী স্নায়ুতন্তু। জীববিজ্ঞানীরা কার্যকারণ বিবেচনা করে- স্নায়ুতন্ত্রকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগ দুটি হলো- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System) এবং প্রান্ত (Perpheral Nervous System)।
স্নায়ুতন্ত্রের উল্লেখিত বিভাজনটি হলো- বড় ধরনের সাংগঠনিক বিভাজন। এর যে কোনো ভাগের কোষীয় ভিত্তি হলো স্নায়ুকোষ (Neurone)। স্নায়ুকোষ, রাসায়নিক উপাদান এবং বৈদ্যুতিক স্পন্দনের উপর ভিত্তি করে তথ্যাদি ৩৩০ মাইল/ঘন্টা বেগে ছুটে চলে। এর ফলে শরীরের যে কোন প্রান্ত থেকে তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সময় নেয় কয়েক মিলিসেকেন্ড মাত্র। এই কোষগুলোর পুষ্টি প্রদানকারী, স্থিতি প্রদানকারী এবং স্নায়ুকোষের ভিতরে অন্তরক হিসেবে থাকে ধারককোষ (Neuroglia)। এই দুটি উপকরণ নিয়েএছাড়া রয়েছে স্নায়ুসন্ধি অংশ এবং স্নায়ুগ্রন্থিসমূহ। এই বিচারে স্নায়ুতন্ত্রকে চারটি
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গাঠনিক উপাদানের বিচারে স্নায়ুতন্ত্রকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ চারটি হলো−
মানুষ এবং অন্যান্য উচ্চশ্রেণির প্রাণীকুল কতিপয় বিশেষ অঙ্গের সাহায্যে তার চারপাশের জগৎ থেকে তথ্য গ্রহণ করে। প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য এই অঙ্গগুলো অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অঙ্গগুলোকে বলা হয় সংবেদী অঙ্গ (Sense Organ)। একে ইন্দ্রিয় নামে অভিহিত করা হয়। মানবদেহে এই জাতীয় ৫টি ইন্দ্রিয় রয়েছে। এদেরকে একত্রে পঞ্চেন্দ্রিয় বলা হয়। এগুলো হলো−
সূত্র :
ইন্টারনেট ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত গ্রন্থাসমূহ।