স্নায়ুকোষ
বানান বিশ্লেষণ: স্+ন্+আ+য়্+উ+ক্+ও+ষ্+অ।
উচ্চারণ:
sna
.u.koʃ (স্নায়্ উ. কোশ্)

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত স্নায়ু কোষ>বাংলা স্নায়ুকোষ।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: স্নায়ুর (স্নায়ুতন্ত্র) কোষ/ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
পদ : বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা| সোমাটিক কোষ | জীবকোষ | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা | }
অর্থ:
জীবদেহের স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্গত একটি উপাদান। এর অপর নাম নিউরোন (neuron)।
সমার্থক শব্দাবলি: স্নায়ুকোষ, নিউরোন।

স্নায়ুতন্ত্রের ভিত্তি হলো এর স্নায়ুকোষ (Neurone)। এই স্নায়ুকোষসমূহ, রাসায়নিক উপাদানসমূহ এবং বৈদ্যুতিক স্পন্দনের উপর ভিত্তি করে তথ্যাদি ৩৩০ মাইল/ঘন্টা বেগে ছুটে চলে। এর ফলে শরীরের যে কোন প্রান্ত থেকে তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছাতে সময় নেয় কয়েক মিলিসেকেন্ড মাত্র। এই কোষ তড়িত-রাসায়নিক সঙ্কেতের মাধ্যমে তথ্যকে সঞ্চালিত করে এবং সঙ্কেত প্রক্রিয়াজাত করে। অংসখ্য নিউরোন পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এই কারণে স্নায়ুকোষকে বলা হয় স্নায়ুতন্ত্রের মূল উপকরণ।

স্নায়ুকোষের গাঠনিক দিক বিবেচনা করে ২টি ভাগ ভাগ করা হয়। এই ভাগ ৩টি হলো কোষদেহ ও প্রবর্ধক।

স্নায়ুকোষের কাজের প্রকৃতি অনুসারে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো সংজ্ঞাবহ স্নায়ুকোষ, আজ্ঞাবহ স্নায়ুকোষ ও সহযোগী স্নায়ুকোষ ।

কোষদেহ থেকে উৎপন্ন প্রবর্ধকের সংখ্যানুযায়ী স্নায়ুকোষকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো।

উল্লেখ্য  দুটি স্নায়ুকোষের ভিতরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স (synaps)। এই ফাঁকা জায়গায় থেকে কিছু রাসায়ানিক দ্রব্য। এই রাসায়নিক দ্রব্যাদির হ্রাস বৃদ্ধির কারণে মানুষের নানা ধরনের আকাঙ্ক্ষা, বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্যাদির ভিতরে রয়েছে সেরোটনিন, এনকেফালিন, গ্লুটামেট, গাবা ইত্যাদি।

স্নায়ুকোষের কর্ম পদ্ধতি
নিউরোনের এ্যাক্সোনের ভিতর দিয়ে তথ্য সঞ্চালিত হয় বৈদ্যুতিক স্পন্দনের দ্বারা। সাধারণত নিউরোন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় নিউরোনে প্রায় ৭০ মিলিভোল্ট ঋণাত্মক বিদ্যুৎ সঞ্চিত থাকে। বাইরের কোনো তথ্য ভিতরে প্রবেশ করে বৈদ্যুতিক ধনাত্মক আধান হিসেবে। নিউরোনে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০ কোটি ধনাত্মক আধান প্রবেশ করতে পারে। একটি নিউরোনে আগত ধনাত্মক আধনের পরিমাণ নিউরোনের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন অতিরিক্ত আধান পার্শ্ববর্তী নিউরোনে চলে যায়। এই প্রক্রিয়া নিউরোন থেকে নিউরোনে তথ্যসঙ্কেত সঞ্চালিত হয়। একবার কোনো তথ্য সঞ্চালনের কোনো ঘটনা ঘটে, তারপর কয়েক মিলি সেকেন্ড নিউরোন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এই সময় নিউরোন কোনো তথ্য গ্রহণ বা ত্যাগ করে না। ফলে নিউরোনের তথ্য সঞ্চালন ঘটে ছোটো ছোটো খণ্ডে। 

ুটি স্নায়ুকোষের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে দুটি স্নায়ুকোষের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে। এই ফাঁকা জায়গাকে বলা হয় সিন্যাপ্স। যদিও একে ফাঁকা জায়গা বলা হচ্ছে, কিন্তু এই জায়গাটা বস্তুশূন্য বা বায়ুশূন্য নয়। সিন্যাপ্সের ভিতরে থাকে তথ্য পরিবাহী কিছু রাসায়নিক তরল পদার্থ। একে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার (Neurotransmitter)। তথ্য সঞ্চালনে নিউরোট্রান্সমিটার-এর অন্তর্গত বিভিন্ন উপাদান স্নায়ুকোষের মধ্যে ফেরির কাজ করে। এ্যাক্সন এর কোনো একটি উপাদান থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং সে তথ্য বহন করে অন্য কোষের ডেন্ড্রাইড অংশে পৌঁছে দেয়।