সেলেনিয়াম
বানান বিশ্লেষণ: স্+এ+ল্+এ+ন্+ই+য়্+আ+ম্+অ।
উচ্চারণ:
se.le.ni.am (সে.লে.নি.আম্)
শব্দ-উৎস: গ্রিক σελήνη selēnē (চাঁদ)>ইংরেজি selenium>বাংলা সেলেনিয়াম
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা

অর্থ: এক প্রকার বিষাক্ত অধাতব স্থায়ী মৌলিক পদার্থ। প্রকৃতিতে বহুরূপী দশায় পাওয়া যায়। এরবর্ণ  ধূসর। একে বলা হয় ধাতু ও অধাতুর মধ্যবর্তী স্তরের পদার্থ। অধাতব পদার্থ হিসেবে এর সাথে গন্ধকের সাথে মিল পাওয়া যায়। আবার ধাতু হিসেবে এর সাথে টেলিয়ুরিয়ামের সাথে মিল রয়েছে। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে সুইডিশ রসায়নবিদ জনস জ্যাকব বের্জেলিয়াস (Jöns Jacob Berzelius) এই মৌলিক পদার্থটি আবিষ্কার করেন।

এর প্রতীক  Se, এর পারমাণবিক সংখ্যা ৩৪। পারমাণবিক ভর ৭৮.৯৭১৮।

প্রকৃতিতে এই পদার্থটি বিভিন্ন আকরিকে পাওয়া যায়। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য আকরিক হলো লেড সেলেনাইট (
PbSe)। উল্লেখ্য এই আকরিকটি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। অনেক সময় গন্ধকের সাথে মুক্ত অবস্থাতেও পাওয়া যায়। তবে গন্ধকঘটিত আকরিকের সাথে এই পদার্থটি বেশি পাওয়া যায়। সাধারণত গন্ধকসমৃদ্ধ আকরিককে বাতাসে পুড়ালে, উপজাত হিসেবে নির্মন চূর্ণে সেলেনিয়াম জমা হয়। পরে এই উপজাত থেকে সেলেনিয়াম পৃথক করা হয়।

সেলেনিয়ামের গন্ধকের মতো বহুরূপতার গুণ লক্ষ্য করা যায়। সেলেনিয়ামের তিনটি বহুরূপকতা রয়েছে। এর ভিতরে একটি অকেলাসিত, অপর দুটি কেলাসিত। অকেলাসিত সেলেনিয়াম গুঁড়ো দশায় লাল ইটের গুঁড়োর মতো দেখায়। কিন্তু একে জমাট করে কাঁচের মতো করলে কালচে বাদামী বর্ণ দেখায়। কেলাসিত রূপের একটির রঙ লাল। অপরটির রঙ ধূসর। মূলত ধূসর কেলাসিত সেলেনিয়াম স্থায়ী রূপে টিকে থাকে। এছাড়া অন্যান্য বর্ণের সেলেনিয়ামও ধীরে ধীরে ধূসর বর্ণে পরিণত হয়। এর ৭৪, ৭৬, ৭৭, ৭৮ ৮০ ও ৮২ আইসোটোপগুলো স্থায়ী।

ধূসর সেলেনিয়াম বিদ্যুৎপরিবাহী। এই কারণে একে সাধারণত ধাতব সেলেনিয়াম বলা হয়। এটি অন্ধকারের চেয়ে আলোতে অধিকতর ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসাবে কাজ করে। আলোকে বিদ্যুতে পরিণত করার ক্ষমতা থাকায়, ধূসর সেলেনিয়াম আলোক-বিদ্যুৎকোষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সালফিউরিক এ্যাসিড ও নাইট্রিক এসিড সেলেনিয়ামের সাথে বিক্রিয়া করে।এ ছাড়া সকল ক্ষারে সেলেনিয়াম দ্রবীভূত হয়। হাইড্রোজেনের সাথে সরাসরি বিক্রিয়া করে
H2Se উৎপন্ন করে। এই গ্যাসটির অধিক পরিমাণ জীবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। অধিকাংশ পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে সেলানাইড উৎপন্ন করে। অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সাদা কঠিন যৌগ SeO2 উৎপন্ন করে। আবার পানির সাথে SeO2 বিক্রিয়া করে সেলেনিয়াম এ্যাসিড (H2SeO3) ও H2SeO4 উৎপন্ন করে। তবে গুণাগুণের বিচারে এর H2SeO4-কে সালফিউরিক এ্যাসিডের সমতূল্য বিবেচনা করা হয়।

বর্তমানে কাঁচ, প্লাসি্টিকের রং নিয়ন্ত্রণে সেলেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। এনামেল, সিরামিক সামগ্রী, কালিতে এর ব্যবহার আছে। যন্ত্রপাতির কার্যক্রমে অধিকতর সক্ষমতা প্রদানে লোহার সাথে সেলেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রাবারের সাথে এর ব্যবহার করা হয়। সোডিয়াম সেলেনাইড কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া খুশ্‌কি, মেছতা, দাদ ও অন্যান্য চর্মরোগে সেলনিয়াম সমৃদ্ধ ঔষধ ব্যবহার করা হয়।