আব্দুল কুদ্দুস মাখন
(১৯৪৭-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিক।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মোহাম্মদ আবদুল আলী এবং মাতার নামক আলহাজ আমেনা খাতুন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মোহাম্মদ হাই স্কুল থেকে মানবিক শাখায় ১ম বিভাগ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ আইএ পাশ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ক্লাসে ভর্তি হন।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৬-৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৬৮-৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে এম এ পাস করে একই বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
১৯৭০ সালে তিনি সর্ব প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
 
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ থেকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ২ মার্চ সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় ডাকসু ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ছাত্র-জনতার এক বিশাল সমাবেশে। এই সমাবেশে শিল্পী শিবনারায়ণ দাশের পরিকল্পনা ও অঙ্কনে সবুজ পটভূমিকার ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে বাংলার সোনালি মানচিত্র-সংবলিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উত্তোলন করেন ডাকসুর তৎকালীন সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে-আলম-সিদ্দিকী, ছাত্রলীগ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও পূর্বতন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ প্রমুখ । 

৮ মার্চ (সোমবার, ২৩ ফাল্গুন ১৩৭৭ বঙ্গাব্দ) ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে-আলম-সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি আ. স. ম. আব্দুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বাংলার বর্তমান মুক্তি আন্দোলনকে ‘স্বাধীনতার আন্দোলন’ ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সনসভায় যে প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।'

২৩ মার্চ আউটার স্টেডিয়ামে জয়বাংলা স্বেচ্ছাসেবকদের প্যারেডে তিনিসহ অপর চারনেতা অভিবাদন গ্রহণ করেন। অপর তিন নেতা ছিলেন নূরে-আলম-সিদ্দিকী, শাহজান সিরাজ ও আসম আব্দুর রব। পরে তিনি ও অন্যান্য নেতাকর্মী জয়বাংলা স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে বঙ্গবন্ধু'র  বাড়িতে গিয়ে তাঁকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ডাকসু’র সহ-সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস মাখন-এর নেতৃত্বে ডাকসুর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়। এই বছরেই ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও যুবলীগ সমন্বয়ে গঠিত দলের সদস্য হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। এই বছরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বার্লিনে আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করার পর, ২৩ আগস্ট রাতে অন্যান্য জাতীয় নেতদের সঙ্গে আব্দুল কুদ্দুস মাখনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসাবে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হন।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ফ্লোরিডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তার মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জাতীয় ঈদগাহ্ ময়দানে বিশাল সমাবেশে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবার পর মিরপুর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা গোরস্তানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখনকে দাফন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারাও তার দাফনের তাঁকে বিশেষ মর্যাদায় সম্মান জানিয়ে সম্মিলিতভাবে স্যালুট প্রদান করে।