আবুল ফজল
১৫৫১- ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দ
সম্রাট আকবরের রাজদরবারের অন্যতম সভাসদ, যোদ্ধা, লেখক। পুরো
নাম- শেখ আবুল ফজল ইবন মুবারক। তিনি আবুল-ফজল, আবুল ফদল ও আবুল ফদল 'আল্লামি নামেও পরিচিত ছিলেন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি, আগ্রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তাঁর পিতা ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত শেখ মুবারক এবং মা ছিলেন পারশিক। শেখ মুবারক অত্যন্ত
জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে
সম্রাট আকবরের
রাজসভায় স্থান পেয়েছিলেন।
আবুল ফজল ছিলেন পিতা-মাতার দুই সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ। তাঁর অপর ভাইয়ের নাম ছিল শেখ
আবুল ফৈজ। ফৈজ অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে
সম্রাট আকবরের
রাজসভায় স্থান পেয়েছিলেন। পরে এঁরই প্রচেষ্টায় আবুল ফজল
১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে
সম্রাট আকবরের
সুনজরে আসেন। নিজ প্রতিভার গুণে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে
সম্রাট আকবরের
প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত তিনি পাঁচ হাজারি মনসবদারের
পদ লাভ করে, প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করেন।
আবুল ফজল যুবরাজ সেলিমের (সম্রাট জাহাঙ্গীর)-এর সিংহাসনে আরোহণের বিরোধিতা করেছিলেন। এই কারণে তিনি
সেলিমের শত্রুতে পরিণত হন। দাক্ষিণ্যাত্যের এক যুদ্ধে সম্রাট তাঁকে প্রেরণ করেছিলেন।
সেখান থেকে বিজয়ী হয়ে ফেরার পথে, সেলিমের যড়যন্ত্রে নারওয়ারের নিকট সরাই বীর ও অন্ত্রীর মধ্যবর্তী কোনো এক স্থানে বীর সিংহ বুন্দেলার হস্তে তিনি নিহত হন।
পরে তাঁর ছিন্ন মস্তক এলাহাবাদে সেলিমের নিকট পাঠানো হয়েছিল। আবুল ফজলকে অন্ত্রীতে সমাধিস্থ করা হয়।
তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল ১৫০২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগষ্ট।
আবুল ফজলের গ্রন্থাবলি
- আকবরনামা: তিনখণ্ডে রচিত এই গ্রন্থে রয়েছে- এই গ্রন্থে তৈমুর থেকে হুমায়ুন পর্যন্ত আকবরের পূর্বপুরুষদের জীবনকথা এবং আকবরের রাজত্বকালের ৪৬ বছরের (১৬০২ সাল পর্যন্ত) বিবরণ।
- আইন-ই-আকবর: আকবরের সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক প্রতিবেদন-সহ রয়েছে
রাজ্যের নানা বিষয়ের বিবরণ। সে সময়ের সুবা (প্রদেশ), মুদ্রা, সঙ্গীত, অব্দ,
দীন-ই-ইলাহী ইত্যাদি বিষয়ক বিবরণ।
- রাকাত: মুরাদ, দানিয়াল, আকবর, মারিয়াম মাকানি, সেলিম (জাহাঙ্গির), আকবরের রানি ও কন্যাগণ, তার পিতা, মাতা, ভ্রাতৃগণ, ও একাধিক সমসাময়িক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে লিখিত আবুল ফজলের পত্রাবলি।
- ইনশা-ই-আবুল ফজল: ইনশা-ই-আবুল ফজল বা মক্তবাৎ-ই-আল্লামি হল আবুল ফজল কর্তৃক লিখিত সরকারি প্রতিবেদনের সংগ্রহ। এই গ্রন্থ দুটি খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডে তুরানের আবদুল্লাহ্ খান উজবেগ, পারস্যের শাহ আব্বাস, খান্দেসের রাজা আলি খান, আহমদনগরের বুরহান-উল-মুলক, ও আবদুর রহিম খান খানান প্রমুখ নিজ অভিজাতবর্গকে লিখিত আকবরের পত্রাবলির সংকলন। দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে আকবর, দানিয়েল, মির্জা শাহ রুখ ও খান খানানকে লিখিত আবুল ফজলের পত্রাবলি
সূত্র:
- আইন-ই-আকবরী ও আকবরের জীবনী। ভাষান্তর: পাঁচকড়ি
বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশক সমীরণ চৌধুরী: ১লা আষাঢ় ১৪০১।
- ভারতের ইতিহাস। অতুলচন্দ্র রায়। সপ্তম সংস্করণ ১৯৯১।